আমি পরশু দিল্লি এসেছি। পরিবারের সবাই বারণ করছিল। আমার পরিবার এখন কেমন রয়েছে জানি না। জানতাম, এমনই ঘটবে। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, কাশ্মীর থেকে বাইরে আসা জরুরি। যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন একটা শহরে বসে থাকলে ওখানকার কথা কেউ জানতে পারবেন না। তাই ইদে বাড়িও যাব না। ইদ পালনও করব না।
আমার বাড়িটা বিমানবন্দরের কাছেই। সেটুকু দূরত্ব পেরোতেই নাজেহাল হতে হয়েছে। বারবার চেক পোস্টে গাড়ি দাঁড় করানো হচ্ছিল। বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখলাম, যাঁরা দেশের অন্য প্রান্ত থেকে কাশ্মীরের বাড়িতে ফিরছেন, তাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন। কী ভাবে ঘরে পৌঁছবেন, জানা নেই। কোনও গাড়িই চলছিল না। বাড়িতে জানিয়ে যে আগাম গাড়ি আনিয়ে রাখবেন, তার তো উপায় নেই। ফোনই বন্ধ। আজ শুনলাম, ট্যাক্সি চলছে।
আরও পড়ুন: জম্মুতে উঠল ১৪৪ ধারা, স্কুল খুলল সাম্বা-কাঠুয়ায়, বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ ‘শান্তির’ কাশ্মীরে
দেখে এসেছি, বাড়িতে রেশন ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। এখন ওরা কী খাচ্ছে, জানি না। যাঁদের বাড়িতে কেউ অসুস্থ, তাঁদের হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়ার উপায় নেই। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের নিয়ে ভয়ে ভয়ে রয়েছেন তাঁদের পরিবার। অনেকে ‘ডেলিভারি ডেট’-এর অনেক আগেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কারণ, প্রসববেদনা যখন উঠবে, তখন হাসপাতালে ঠিকঠাক পৌঁছনো যাবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।
বিমানবন্দরে কয়েক জন তরুণের সঙ্গে কথা হল আমার। তাঁরা অত্যন্ত যন্ত্রণার সঙ্গে আমার কাছে জানতে চাইলেন— এ বার আমরা কী করব। তাঁদের বলেছি, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যাব। তবে কাশ্মীরিদের কাছে আমার অনুরোধ, আগে প্রাণ বাঁচান। তার পরে না-হয় একজোট হয়ে প্রতিবাদ করব।
(অনুলিখন: চৈতালি বিশ্বাস)