Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দুই শিবিরের স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে ভোট ময়দানে দুই নবীন নেতা

ওই আকাশের তারা দেখছেন? হাতটি উপরে তুলতেই চোখের কোণায় ঝিলিক দিয়ে উঠল এক ফোঁটা জল, “ওই ওখানেই বসে সব দেখছেন। লড়াই তো আমার নিয়তির সঙ্গে।” ঘড়ির কাঁটা ন’টা ছুঁই ছুঁই। আরও দু’টি সভা বাকি। পিছনে দুন্দুভি বেজেই চলেছে। শ’-দুশো লোক তখনও ঘিরে বলে চলেছেন, ‘পঙ্কজা তুম আগে বড়ো, হাম তুমহারে সাথ হ্যায়।’

পঙ্কজা মুন্ডে ও আদিত্য ঠাকরে

পঙ্কজা মুন্ডে ও আদিত্য ঠাকরে

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
বীড় শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

ওই আকাশের তারা দেখছেন?

হাতটি উপরে তুলতেই চোখের কোণায় ঝিলিক দিয়ে উঠল এক ফোঁটা জল, “ওই ওখানেই বসে সব দেখছেন। লড়াই তো আমার নিয়তির সঙ্গে।”

ঘড়ির কাঁটা ন’টা ছুঁই ছুঁই। আরও দু’টি সভা বাকি। পিছনে দুন্দুভি বেজেই চলেছে। শ’-দুশো লোক তখনও ঘিরে বলে চলেছেন, ‘পঙ্কজা তুম আগে বড়ো, হাম তুমহারে সাথ হ্যায়।’

“এই মাটির বাচ্চা-বাচ্চা এক এক জন গোপীনাথ মুন্ডে। এটি তাঁর আরাধ্যস্থল। আমি আর কাঁদব কি? এঁদের কান্না কি কিছু কম?” চরকির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন পঙ্কজা মুন্ডে। চার মাস আগে দিল্লিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন মহারাষ্ট্রের গেরুয়া শিবিরের মহাজোটের কারিগর। বেঁচে থাকলে আজ তিনিই মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার হতেন। এখন তাঁর উত্তরাধিকারী হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন মেয়ে পঙ্কজা। গোপীনাথের আর এক মেয়ে প্রীতম বাবার ছেড়ে যাওয়া লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে লড়ছেন। কিন্তু পঙ্কজা বেছে নিয়েছেন বিধানসভা আসনটি। লক্ষ্য শুধুই রাজ্য রাজনীতি। আর মুখ্যমন্ত্রীর গদি।

অমিত শাহ যে দিন বীড়ে এসে সভা করেন, সে দিনও জনতার মন বুঝতে অসুবিধা হয়নি বিজেপি সভাপতির। মুন্ডের অবর্তমানে পঙ্কজাকেই মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চায় গোপীনাথের ভক্তকুল। অমিত শাহকেও সে দিন বলতে হয়, “আমি কি আপনাদের মন বুঝি না? বিলক্ষণ বুঝি।” রাজ্য বিজেপির অনেক নেতাও কবুল করছেন, ৩৫ বছর বয়সের এই তরুণীকে রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যে দিন শিবসেনার সঙ্গে জোট ভাঙার ঘোষণা হল, সে দিনও মঞ্চে ছিলেন পঙ্কজা। বিজ্ঞাপনেও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর ছবি।

তা হলে কি বিজেপির সরকার হলে পঙ্কজাই মুখ? বিজেপির নেতারা বলছেন, কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা ঠিক করবেন নরেন্দ্র মোদী আর আরএসএসের নেতারা। নিতিন গডকড়ীর সায়ও দরকার। সে ক্ষেত্রে দলের রাজ্য সভাপতি দেবেন্দ্র ফড়নবিশের মতো আরও অভিজ্ঞ নেতারা এখনও এগিয়ে আছেন দৌড়ে। তা হলে অমিত শাহ থেকে শুরু করে দলের আরও কিছু নেতার দেওয়া আশ্বাসের কী হবে? গোপীনাথের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন তাঁরই আত্মীয় মানিক মুন্ডে। বললেন, “পঙ্কজাকে আদৌ মুখ্যমন্ত্রী করবে না বিজেপি। শুধুমাত্র ওঁকে দিয়ে ওবিসি তাস খেলছে দল। যাতে গোপীনাথের প্রয়াণের পর ওবিসি ভোট হাতছাড়া না হয়।” কিন্তু মনে মনে তো তৈরি গোপীনাথ কন্যা। পরের সভায় ছুটতে ছুটতে বললেন, “কে বলল, আমি মুখ নই? বাবার বিকল্প হওয়াই তো আমার লক্ষ্য।”

পঙ্কজার বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থী দেননি উদ্ধব ঠাকরে। বীড়ের আশপাশে প্রচারে গিয়ে তিনিও মুন্ডের স্বপ্ন পূরণের কথা বলছেন। মঞ্চের পিছনে মুন্ডের ছবি লাগিয়েই। অথচ আজ মুন্ডে নেই বলেই ভোটের আগে বিজেপির কোনও ঘোষিত মুখ নেই। তাই উদ্ধব নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরে বিজেপির সঙ্গে দর কষতে গিয়েছিলেন। সেনা শিবিরের সবাই জানেন, এ বারে জোট না ভাঙলে বিজেপি-শিবসেনারই সরকার হতো। আর উদ্ধবই হতেন মুখ্যমন্ত্রী। আর পাঁচ বছর পর তাঁর পুত্র আদিত্য ঠাকরে। তত দিনে প্রায় ত্রিশের কোঠা ছোঁবেন আদিত্য। এক বার নিজে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে পরের বার ছেলের জন্যই আসন সাজানোর ঘুঁটি তৈরি করছিলেন উদ্ধব।

কিন্তু সব হিসেবই এখন গুলিয়ে দিয়েছে বিজেপি। চার বছর আগে রাজ ঠাকরে যখন যুবকদের কাছে টেনে উদ্ধবকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন, তখনই তড়িঘড়ি আদিত্যকে আসরে নামান উদ্ধব। বালসাহেব তখন বেঁচে। তার পর থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে যুব সেনার দায়িত্বে রয়েছেন আদিত্য। কিন্তু দলের সব বড় বৈঠকেই হাজির থাকেন তিনি। বিজেপির সঙ্গে শেষ লগ্নের বৈঠকেও উদ্ধব পাঠিয়েছিলেন আদিত্যকে। বদলে জুটেছে কটাক্ষ। বিজেপি বলেছে, এক শিশুকে জোট-আলোচনায় পাঠিয়েছেন উদ্ধব। তার জবাব দিয়েছেন খোদ আদিত্য। বলেছেন, “যে নরেন্দ্র মোদী যুবক-যুবক করেন, তাঁর দলের মুখে এ কথা?” বিজেপি যখন জোট ভাঙার ঘোষণা করে, তখনও প্রথম প্রতিক্রিয়া এসেছে আদিত্যর কাছ থেকেই। আর জোট ভাঙার পরে উদ্ধব ও রাজ ঠাকরের ফোনে কথোপকথন নিয়ে সাফাইও দিয়েছেন আদিত্য।

১৯৯৬ সালে মাতোশ্রীতে বালসাহেবের কোলে বসে যখন মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছিলেন, তখন আদিত্যের বয়স মাত্র ছয়। আর আজ ২৪ বছর বয়সেও তাঁর মোবাইলের রিং-টোন মাইকেলেরই গান। খোদ উদ্ধবের নেতৃত্ব যখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে, সেই সময় আদিত্যই এক নতুন হাওয়া এনেছেন সেনা শিবিরে। পুরনো জড়তা ছেড়ে এক নতুন প্যাকেজে মুড়েছেন দলকে। তিলতিল করে উদ্ধবও তাঁকে তৈরি করছেন উত্তরাধিকারী হিসাবে। আদিত্যই সেনার তুরুপের তাস। ভবিষ্যতের কাণ্ডারী। কিন্তু হিসেব মিললে তো!

আপাতত মহারাষ্ট্রের ভোট-যুদ্ধে সুতোয় ঝুলছে দুই তরুণ মনের স্বপ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE