Advertisement
১২ ডিসেম্বর ২০২৪
National News

ত্রিপুরায় বিজেপি-র এই উত্থান কী ভাবে?

বিজেপি নেতৃত্বের শরীরী ভাষায় যে আত্মবিশ্বাস চোখে পড়ছে তা-ও উড়িয়ে দেওয়ার নয়। এই আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে ইন্ডিজেনাস পিপল’স ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি)-র সঙ্গে জোট গড়ার পরে।

ত্রিপুরায় বিজেপি-র সরব উপস্থিতি। ছবি: এএফপি।

ত্রিপুরায় বিজেপি-র সরব উপস্থিতি। ছবি: এএফপি।

তাপস সিংহ
আগরতলা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১০:২৮
Share: Save:

হাসছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সে হাসিতে আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ছে। কিছু ক্ষণ আগেই হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট হল ছেড়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেছেন বিজেপি-র ‘ভিশন ডকুমেন্ট’। বা বলা যেতে পারে নির্বাচনী ইস্তাহার। হিমন্ত বলে চলেছেন, ‘‘দেখে নেবেন, আমরা ৩৮ থেকে ৪২টা আসন পাব। এর মধ্যে উপজাতি এলাকায় ১৬-১৭টা আসন পাচ্ছি।’’

উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে সামগ্রিক বোঝাপড়া ও কেন্দ্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের লক্ষ্যে বিজেপি তৈরি করেছে নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনইডিএ)। এই মঞ্চ এই রাজ্যগুলির সর্বাত্মক উন্নয়নের দিকে নজর রাখবে। হিমন্ত হলেন এই এনইডিএ-র আহ্বায়ক। হিমন্ত আদপে অসমের ভূমিপুত্র। ছিলেন কংগ্রেসে। জালুকবাড়ির বিধায়ক ছিলেন ২০০১ থেকে। ২০১৬-এ যোগ দেন বিজেপিতে। তার পর থেকে দলে তাঁর প্রভাব ও উত্থান কার্যত রকেট গতিতে। বছর দু’য়েক ধরে ত্রিপুরায় ঘাঁটি গেড়ে বসে আছেন। এর মধ্যে গত ছ’মাস তো লাগাতার। সঙ্গে আছেন রাজনৈতিক ভাবে রীতিমতো প্রশিক্ষিত বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের বেশির ভাগই ত্রিপুরার বিভিন্ন কেন্দ্রে ছড়িয়ে আছেন।

কেন এ ভাবে ঘাঁটি গেড়ে পড়ে থাকা? হিমন্তের কথায়: ‘‘এই কাজটা খুব সিরিয়াস। একেবারে তৃণমূল স্তরে মানুষের কাছে পৌঁছতে গেলে এ ভাবেই থাকতে হবে।’’

আরও পড়ুন
প্রচারে গেরুয়া ঝড়, প্রদীপ আগলাতে মরিয়া মানিক

তাঁর ও বিজেপি-র অন্য নেতাদের এ কথার তাৎপর্য অবশ্য বুঝতে পারছি আগরতলায় পা দেওয়ার পর থেকেই। যাকে বলে সরব উপস্থিতি। চতুর্দিকে বিজেপি-র পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে দলীয় সভাপতি অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ থেকে শুরু করে যোগী আদিত্যনাথ, নিতিন গড়করী, অরুণ জেটলি, শাহনওয়াজ হুসেন— কে নেই! আক্ষরিক অর্থেই হেভিওয়েট প্রচার। দফায় দফায় তাবড় নেতার জনসভা আর রোড শো আর সাংবাদিক সম্মেলন। ‘মিডিয়া প্রভারী’দের দাপাদাপি। চাইলেই যে কোনও তথ্য হাতের কাছে জুগিয়ে দেওয়া।

ভোটের প্রচারে যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: পিটিআই।

কিন্তু এ সবও কিছুই নয়। বহিরঙ্গের আড়ালে লুকিয়ে আছে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়ে থেকে মাটিটাকে বোঝা। বিজেপি নেতারা ভালই জানেন, সিপিএমের মতো ক্যাডার-নির্ভর দলের সঙ্গে টক্কর দিতে গেলে তাঁদেরকেও ক্যাডার বাহিনী তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বুথ ধরে ধরে ভোটারদের সঙ্গে রোজকার সংযোগ বাড়াতে হবে। আর ঠিক সেই কাজটাই নিঃশব্দে করে চলেছেন বিজেপি-র ‘ব্যাকরুম বয়’রা।

বিজেপি-র বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা যাচ্ছে তাতে পরিকল্পনাটা অনেকটা এই রকম: বিজেপি প্রথমেই প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রথমে মোর্চা তৈরি করেছে। যেমন, মহিলা মোর্চা, যুব মোর্চা, তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি), সংখ্যালঘু— প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্যই তৈরি হয়েছে মোর্চা। তারা সরাসরি ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনে প্রতিকারের চেষ্টা করছে। বছরখানেক আগে থেকে এই কাজ শুরু করে তার সুফল পাচ্ছেন বলে দাবি দলীয় নেতাদের। তাঁরা বলছেন, এই যে একের পর এক হেভিওয়েট নেতার জনসভায় ভিড় হচ্ছে, তা কিন্তু এই ক্যাডারদের লাগাতার প্রয়াসের ফল। মহিলারাও দলে দলে ভিড় করছেন দলীয় সভায়।

আরও পড়ুন
‘নীতি থাকলে কি এমন জোট করত বিজেপি?’

বিজেপি-র হয়ে প্রচারে রাজনাথ সিংহ। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

এ ছাড়াও রয়েছে দলের সোশ্যাল মিডিয়া সেল। সেই সেলে গ্রাফিক ডিজাইনার, ভিডিও এডিটর থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কর্মীই আছেন। তাঁদের কেউ কেউ নানা আইআইটি থেকে আসা, অনেকেই ভিন রাজ্যের। তাঁদেরও কেউ কেউ জানাচ্ছিলেন, গোটা কাজটাই হচ্ছে পেশাদারি দক্ষতায়।

এই প্রয়াস আদপে কতটা ফল দেবে তা অবশ্যই বলবে ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন)। কিন্তু তার আগে বিজেপি নেতৃত্বের শরীরী ভাষায় যে আত্মবিশ্বাস চোখে পড়ছে তা-ও উড়িয়ে দেওয়ার নয়। এই আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে ইন্ডিজেনাস পিপল’স ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি)-র সঙ্গে জোট গড়ার পরে। উপজাতীয় এলাকায় প্রভাব বাড়াতে গেলে এ ছাড়া বিজেপি-র কাছে দ্বিতীয় কোনও পথ খোলা ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দলীয় প্রচারে ত্রিপুরায় আসা বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের কথায়: ‘‘লোহা দিয়েই লোহা কাটতে হয়। এর আগেও তো এ রাজ্যে কংগ্রেস-টিইউজেএস জোট ছিল।’’

আরও পড়ুন
ত্রিপুরাকে হিরের টুকরো গড়বেন জেটলি-শাহেরা

বিজেপি-র জনসভায় ভিড়ের পিছনে রয়েছে ক্যাডারদের লাগাতার প্রয়াস। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

অবশ্যই লোহা দিয়ে লোহা কাটছে বিজেপি! কংগ্রেস থেকে, তৃণমূল থেকে নেতা-কর্মীদের দলে নেওয়াটাও এই পরিকল্পনারই ফসল। হিমন্ত বিশ্ব শর্মাই তো তার বড় উদাহরণ। এই কারণেই অরুণ জেটলি বলছিলেন, ‘‘ত্রিপুরায় গত বিধানসভা ভোটে আমরা ছোট রাজনৈতিক দল ছিলাম। কিন্তু এখন আর তা নই। উন্নয়নের প্রশ্নে রাজ্যের মানুষের আশা পরিণত হয়েছে নিরাশায়।’’

সিপিএম নেতৃত্বের কপালের ভাঁজ বাড়ছে এই নানা কারণেই। ক্যাডার-ভিত্তিক দলের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে আর এক ক্যাডার-ভিত্তিক দল। কংগ্রেস এবং তৃণমূলকে কার্যত চিলেকোঠায় তুলে রেখে এসে মাঠে নেমেছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের দল। সিকি শতক একটানা ক্ষমতায় থাকার পরে বিজেপি-র এই মরিয়া তাল ঠোকাকে ভোটের বাক্সে প্রতিহত করবেন কী ভাবে? নিশ্চিত রূপেই তা ভেবে রেখেছেন মানিক সরকার ও তাঁর দলীয় নেতৃত্ব।

কিন্তু, মাঠে নামার আগে পিচটা যে খুব ভাল ভাবে যাচাই করে দেখেছে বিজেপি, তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট!

অন্য বিষয়গুলি:

Tripura Tripura Election Tripura Assembly Election বিজেপি Himanta Biswa Sarma হিমন্ত বিশ্বশর্মা সিপিএম CPM CPIM Left Front Tripura Assembly Election 2018
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy