Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভয় কাটানোর ভোটে বিজেপির চিন্তা শহর

কোডারমার জসিমউদ্দিন আনসারির কথা মনে ছিল সঞ্জয়ের। মাওবাদীদের কথা না শুনে ভোট দেওয়ার অপরাধে তাঁর হাত কব্জি থেকে কেটে নেওয়া হয়েছিল।

রিভলভার হাতে কংগ্রেস প্রার্থী কৃষ্ণানন্দ ত্রিপাঠী। ভাইরাল হয়েছে এই ভিডিয়োই।

রিভলভার হাতে কংগ্রেস প্রার্থী কৃষ্ণানন্দ ত্রিপাঠী। ভাইরাল হয়েছে এই ভিডিয়োই।

সুব্রত বসু
পলামু শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

সেই রাতের কথা মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দেয় বছর সত্তরের সঞ্জয় গিরির।

সে বারও মাওবাদীদের ভোট বয়কটের ফতোয়া ছিল লেসলিগঞ্জের হরতুয়াটোলায়। রাতের অন্ধকারে টোলা জুড়ে লাগানো হয়েছিল লাল কালিতে লেখা পোস্টার। বয়কট নিয়ে টোলার সমাবেশে প্রশ্ন তুলেছিলেন সঞ্জয়। এর পরেই তাঁকে তুলে নিয়ে যায় জনা পঞ্চাশের একটি দল।

কোডারমার জসিমউদ্দিন আনসারির কথা মনে ছিল সঞ্জয়ের। মাওবাদীদের কথা না শুনে ভোট দেওয়ার অপরাধে তাঁর হাত কব্জি থেকে কেটে নেওয়া হয়েছিল। সঞ্জয় বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম আমার হাতও কেটে নেওয়া হবে। কিন্তু তা না করে, লাঠি দিয়ে মেরে আমার হাতের হাড় টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয়। তার পর ফেলে যাওয়া হল টোলার বাইরে। প্রায় ছ’মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। টোলার কারও আর হিম্মত হয়নি ভোট দেওয়ার। দশ বছর আগের ঘটনা।’’

আরও পড়ুন: পড়েই রয়েছে কিষানের টাকা

সেই টোলাতেই এখন লাইন দিয়ে ভোট দিচ্ছেন রূপধারী রাম, হোসেন শেখরা। সঞ্জয় বলেন, ‘‘সিআরপিএফ আসার পরে পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। গত কয়েকটি ভোটে এই এলাকায় গড়ে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। মাওবাদীরা হয়তো আছেন। কিন্তু আগের মতো আতঙ্ক নেই।’’

শুধু লেসলিগঞ্জই নয়, শনিবার ঝাড়খণ্ডের প্রথম দফার নির্বাচনে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় ঘুরে এই কথা শুনতে হয়েছে বার বার। ভোট বয়কটের ফতোয়া পড়েনি কোথাও। গুমলা এলাকায় মাওবাদীরা সেতু উড়িয়ে দেয় এ দিন সকালে। কিন্তু ভোটে তার প্রভাব পড়েনি। গুমলার গ্রামীণ এলাকায় ভোট পড়েছে ৭০ শতাংশেরও বেশি। প্রশাসনেরও বক্তব্য, ছোটখাটো দু’একটা ঘটনা ছাড়া প্রথম দফার ১৩টি কেন্দ্রের কোথাও বড় গোলমাল নেই। মোট ভোট পড়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ।

তবে ছোটখাটো গোলমালের তালিকায় এক নম্বর হয়ে নজর কেড়েছেন ডালটনগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী ও রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী কৃষ্ণানন্দ ত্রিপাঠী। কংগ্রেসের অভিযোগ, ‘বুথ-লুঠ’ হচ্ছে খবর পেয়ে চৈনপুরে গিয়ে বিজেপি সমর্থকদের হাতে ঘেরাও হয়ে পড়েন তিনি। গাড়ি ভাঙচুর করে তাঁর উপরে হামলা চালানো হয়। তবে ত্রিপাঠীজি বাংলার বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার নন! কেউ ‘হাত-পা’ চালানোর আগেই তিনি পকেট থেকে বের করে ফেলেন রিভলভার। তাঁর সেই ভিডিয়ো এ দিন ভাইরাল হয়ে ঘুরছে ঝাড়খণ্ডে। প্রার্থী কী করে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ঘোরেন—তার তদন্ত দাবি করেছে বিজেপি। এই ঘটনা অস্বস্তিতে ফেলেছে কংগ্রেসকে।

বিজেপি-র অস্বস্তি অন্য জায়গায়। আদিবাসী ও গ্রামীণ এলাকায় যথেষ্ট ভোট পড়লেও পলামুর শহরাঞ্চলে ভোট পড়ছে অনেক কম। প্রাথমিক ভাবে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, কোথাও কোথাও ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশের নীচে। ঝাড়খণ্ডের এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘আদিবাসী ও গ্রামীণ এলাকায় নয়, শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্তরাই এই রাজ্যে আমাদের প্রধান ভোটব্যাঙ্ক। সেখানে কেন কম ভোট পড়ল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ বিজেপি-র একাংশের প্রাথমিক ধারণা, দেশের আর্থিক পরিস্থিতি, পেঁয়াজ-সহ সব জিনিসের দামবৃদ্ধিতে বিরক্ত দলের সমর্থকদের একাংশও। এ ছাড়া প্রথম দফার ১৩টি আসনের মধ্যে ৯টিতেই দলের প্রার্থী করা হয়েছে এলাকার বাইরের নেতাদের। এরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে দলের সমর্থকদের একাংশের মধ্যে। তাই তাঁরা আর ভোটকেন্দ্রের ছায়া মাড়াননি।

নেতাদের হিসেব-নিকেশ যাই হোক না কেন, ৩৫ হাজার আধাসেনা নামিয়ে মাওবাদী এলাকায় শান্তিতে ভোট করতে পেরে আপাতত স্বস্তিতে প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Jharkhand Jharkhand Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE