হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত রোগীদের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অনেককেই। কিন্তু খোদ মেডিক্যাল কলেজের হৃদরোগ বিভাগই নানা সমস্যায় আক্রান্ত!
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সেখানে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২ জন। তাঁদেরই ৩০ শয্যার বিভাগ সামলাতে হয়। তার মধ্যে ৬ রোগী আইসিইউ-ও। প্রতি দিন নিয়মিত তাঁদের হাসপাতালের বহির্বিভাগে বসতে হয়। এক জন আবার কলেজে ক্লাসও নেন। ফলে অধিকাংশ সময় ডাক্তারশূন্যই থাকেন মেডিক্যালের হৃদরোগীরা। বিনা মাসুলের পেসমেকার বসাতে গত মাসে একজনও শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাননি। ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পি সি শর্মার কাছ থেকে এই রিপোর্ট পেয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সেই থেকেই বিষয়টি চর্চার কেন্দ্রে চলে আসে।
চিকিৎসক শর্মা জানান, ওই বিভাগে টেকনিসিয়ান মাত্র ১ জন, নার্সও ১ জন। অপারেশন থিয়েটারের জন্য কোনও টেকনিসিয়ান নেই। জরুরি প্রয়োজনে এই বিভাগ-ওই বিভাগ থেকে টেকনিসিয়ান চেয়ে আনতে হয়। রোগীদের কাছে এ সব গোপন নয়।
তাই বলে শিলচরের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে সবাই পেসমেকার বসাতে ছুটছেন, তাও নয়। তিনি জানান, সম্প্রতি এখানকার রোগীদের আগ্রহ বেড়েছে শিলঙের নেইগ্রিমসে গিয়ে চিকিৎসা করানোর। কেন্দ্রীয় সরকারের হাসপাতালটিতে প্রায় সব কিছুই বিনা মাসুলে মেলে। তাঁর কথায়, ‘‘শিলচরে একটি বেসরকারি হাসপাতালেই পেসমেকার বসানো হয়। গত মাসে সেখানেও কেউ যাননি।’’ তিনি জানান, আগে মাসে ৫-৭ জন মেডিক্যালে যেতেন বিনা খরচে পেসমেকার বসানোর জন্য। কোনও কোনও মাসে ১০ জনও রোগী হয়েছে। বর্তমানে এই পরিস্থিতি যে রোগীদের আস্থার অভাব প্রমাণ করচে, ওই চিকিৎসক তা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘‘এই বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদ রয়েছে একটি করে। তিনটি পদের দায়িত্ব সামলাই আমিই।’’ তাঁর বক্তব্য, পি জে ভট্টাচার্য নামে আরেকজন ৬ বছর ধরে কাগজে-কলমে এখানে চাকরি করলেও তাঁকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে ‘অ্যাটাচ’ করে রাখা হয়েছে। এখানকার শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি ঘটলেও ছাত্ররা এখনও পর্যন্ত তাঁর চেহারা দেখেননি। এ ছাড়া, রেজিস্ট্রারের পদ দু’টি। সেখানে শুধু আহমদ হোসেন চৌধুরী রয়েছেন। হৃদরোগের স্নাতকোত্তর কোর্স এখানে নেই বলে অন্য বিভাগের মতো ইন্টার্নদের সাহায্য পাওয়া যায় না। নন-পিজি রেসিডেন্ট-এর ৪টি পদ রয়েছে। সব ফাঁকা। মেডিসিনের একজনকে কিছু দিন আগে চেয়ে এনেছেন। ইসিজি করানোর জন্য ৪ জনের সংস্থান রয়েছে। সেখানেও কাজ করছেন মাত্র ১ জন। বাকি তিন জন পরিচালন সমিতি নিযুক্ত অস্থায়ী কর্মী। এটি একটি পূর্ণমাত্রার বিভাগ হলেও নেই কোনও টাইপিস্ট, এমনকী মিলছে না পিয়নও।
সে ব্যাপারে বার বার লিখেও যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না, ক্ষোভের সঙ্গে সে কথা জানান বিভাগীয় প্রধান। তিনি জানান, অধ্যক্ষের মাধ্যমে যেমন চিঠি পাঠানো হয়েছে, তেমন তিনি সরাসরি রাজ্য সরকারের বিভাগীয় কর্তাদের সে সব জানিয়েছেন।
১৯ সেপ্টেম্বর পেসমেকার তথ্যের সঙ্গে এই সব সমস্যার কথা মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকেও তিনি জানিয়েছেন। মন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী মাসে তিনি আবার শিলচর আসছেন। এক দিন আসবেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সে দিন সমস্ত সমস্যা খতিয়ে দেখবেন তিনি। সঙ্গে বের করবেন সমাধানের উপায়ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy