Advertisement
২৫ মার্চ ২০২৩

সুপ্রিম কোর্টে রাজীবের বিরুদ্ধে ‘প্রমাণ’ দিল সিবিআই

রাজীব কুমার শিলংয়ে সিবিআইয়ের জেরার মুখে বলেছিলেন, তিনি নিয়মিত সিটের তদন্তকারী অফিসারদের নির্দেশ দিতেন না।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৯ ০১:৫৮
Share: Save:

রাজীব কুমারই চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) অফিসারদের নিয়মিত নির্দেশ দিতেন, অতএব তাঁর নির্দেশেই তথ্যপ্রমাণ নষ্ট বা লোপাট করা হয়েছে— এটা প্রমাণ করতে সিটের তদন্তকারী অফিসারদের বয়ান সুপ্রিম কোর্টে জমা দিল সিবিআই।

Advertisement

রাজীব কুমার শিলংয়ে সিবিআইয়ের জেরার মুখে বলেছিলেন, তিনি নিয়মিত সিটের তদন্তকারী অফিসারদের নির্দেশ দিতেন না। কিন্তু সিবিআইয়ের পেশ করা নথি দেখে আজ প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মন্তব্য করেছেন, ‘‘তদন্তকারী অফিসারের বয়ান সে কথা বলছে না।’’

সিবিআই অভিযোগ তুলেছিল, সুদীপ্ত সেন-দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পর আটক হওয়া দেবযানীর মোবাইল ও ল্যাপটপ ফের তাঁকে ফিরিয়ে দেয় রাজ্য পুলিশের সিট। আদালতে সিট তাতে আপত্তি তোলেনি। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ যুক্তি দিয়েছেন, আদালতের নির্দেশে দেবযানীর মোবাইল-ল্যাপটপ ফিরিয়ে দেওয়ার আগে সিটের পাশাপাশি ইডি, সেবি-র নিযুক্ত অডিটর সংস্থা তা পরীক্ষা করেছিল। এখনও চাইলে যে কোনও তদন্ত সংস্থা তা পরীক্ষা করতে পারে। সুদীপ্ত সেনের মোবাইলও ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। তা পুলিশের মালখানায় রয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement

মনু সিঙ্ঘভির দাবি, রাজীবের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের পদক্ষেপের পুরোটাই রাজনৈতিক বিতর্ক জিইয়ে রাখার চেষ্টা। ব্যক্তিকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা। মনু সিঙ্ঘভি কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘রাজীব কুমার বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানির মামলা করেছিলেন। কৈলাস রাজীবের বিরুদ্ধে সারদা তদন্তের নথি পুড়িয়ে দেওয়া, সিবিআই তদন্তের দাবি তোলার পরেই তিনি ওই মামলা দায়ের করেন। সেটাই বোধহয় তাঁর সব থেকে বড় অপরাধ হয়েছিল।’’ এর পরে কৈলাস ও মুকুল রায়ের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ তুলে ধরে মনু সিঙ্ঘভি যুক্তি দেন, এখানেও বিজেপি নেতা মুকুল আইপিএস অফিসারদের শায়েস্তা করার কথা বলছেন। নোট বাতিলের পর কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ তুলে সিবিআই কর্তা এম নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রী-কন্যার সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কলকাতা পুলিশ। তার পাল্টা হিসেবেও রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সিবিআই সক্রিয় হয়েছে বলে দাবি সিঙ্ঘভির। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সিবিআই গত পাঁচ বছরে কত জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে? সবাইকে বাদ দিয়ে এখন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকে ধাওয়া করেছে। রাজীবের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ নষ্টের অভিযোগে কোনও এফআইআর করেনি সিবিআই। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ, কল ডিটেল রেকর্ডস সিবিআইকে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’

সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তের সমস্ত তথ্য রাজীব কুমার দেননি এবং তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছেন বলে সিবিআই অভিযোগ তোলার পরে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, রাজীব কুমারই যে তদন্তকারী অফিসারদের এ বিষয়ে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা প্রমাণ করতে হবে। সিবিআই আজ সিটের তদন্তকারী অফিসারদের বয়ান-সহ ছ’টি নথি পেশ করেছে। তার মধ্যে তিনটি নথি তদন্তের অংশ বলে মুখবন্ধ খামে জমা করেছে।

পাল্টা চালে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, সিটের অন্যতম তদন্তকারী অফিসার দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছেন— সিবিআই তাঁর বিবৃতি বিকৃত করে আদালতে পেশ করতে পারে। তবে দেবব্রতর বয়ানই সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে পেশ করেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। সিবিআইয়ের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার দাবি, তাঁরা যে তদন্তকারী অফিসারের বয়ান পেশ করেছেন, তাতে কোনও মিথ্যে নেই। তা নিয়ে প্রশ্নও তোলা যায় না।

সিবিআই আজ সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ তুলেছে, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ শুধুমাত্র তথ্যপ্রমাণ তুলে দিতে গাফিলতি নয়। সিবিআইয়ের মূল সন্দেহ হল, তিনি তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছেন। উচ্চপদস্থ, ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। প্রধান অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। তিনি সিটের তদন্তকারী অফিসার-সহ মামলার সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তাই সিবিআইকে আইন মেনে এগোতে দেওয়া হোক। সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তা দেখিয়ে রাজ্য পুলিশের অন্য অফিসাররা সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে যাচ্ছেন।’’

রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে আজ সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তের মূল কেস ডায়েরি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ল সিবিআই। আইন মাফিক কেস ডায়েরি বাঁধানো নেই। একের পর এক খোলা পৃষ্ঠা দড়ি দিয়ে বাঁধা। যেখানে যখন খুশি কোনও পৃষ্ঠা ঢুকিয়ে দেওয়া যেতে পারে বা বের করে নেওয়া যেতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের প্রশ্ন, ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে নতুন সংশোধনী অনুযায়ী কেস ডায়েরি বাঁধানো হতে হবে। প্রতিটি পৃষ্ঠার ক্রমাঙ্ক নম্বর থাকতে হবে। যাতে ইচ্ছে মতো কেস ডায়েরির মাঝখানে পৃষ্ঠা ঢুকিয়ে দেওয়া বা বার করা সম্ভব না হয়। বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার মন্তব্য, ‘‘দেশের প্রধান তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে সিবিআইয়ের উচিত আইন মেনে কেস ডায়েরি তৈরি করা।’’

বিচারপতি সঞ্জীব খন্না অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, এক সরকারি অফিসার বা পুলিশ কর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জেরার অনুমতি দিলে তাঁকে নিয়ম অনুযায়ী সাসপেন্ড করা হয়। সেই কারণে বিভিন্ন দেশে হেফাজতে নিয়ে জেরা তুলে দেওয়া হয়েছে। মেহতা যুক্তি দেন, এ দেশে ভারতের আইন অনুযায়ীই চলতে হবে। এই মামলায় বৃহস্পতিবার রাজীব কুমারের হয়ে ইন্দিরা জয়সিংহ সওয়াল করবেন। তার পর সিবিআইয়ের হয়ে তুষার মেহতা জবাব দেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.