Advertisement
E-Paper

স্বচ্ছ স্কুলের স্বপ্নে অফিসার বাছতে দিল্লি উজাড়

দেশে ৬৪০টি জেলা। দরকার ৬৪০ জন অফিসার। কাজ হল, দিল্লি থেকে প্রতিটি জেলার সব ক’টি স্কুলে গিয়ে সেখানে শৌচালয় রয়েছে কি না, সরেজমিনে যাচাই করতে হবে। তার পর ফিরে এসে রিপোর্ট দিতে হবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:০৭

দেশে ৬৪০টি জেলা। দরকার ৬৪০ জন অফিসার। কাজ হল, দিল্লি থেকে প্রতিটি জেলার সব ক’টি স্কুলে গিয়ে সেখানে শৌচালয় রয়েছে কি না, সরেজমিনে যাচাই করতে হবে। তার পর ফিরে এসে রিপোর্ট দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশ বলে কথা! তাই প্রতিটি মন্ত্রকে লোক জোগাড়ের কাজ শুরু হয়েছে। কোনও মন্ত্রক থেকে ৩০ জন, কোথাও থেকে আবার ৫০ জনকে পাঠানো হবে বলে ঠিক হয়েছে। কিন্তু কাকে ছেড়ে কাকে পাঠানো হবে, তা নিয়ে ঘোর গোলযোগ। সচিবরা বুঝতে পারছেন না, মন্ত্রকের কাজ ফেলে রেখে এত জনকে এক সঙ্গে কী ভাবে ছেড়ে দেবেন। বিভিন্ন রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকাতেও অনেক জেলা রয়েছে। ওই সব জেলার সব স্কুলে পৌঁছতে হবে। তা সে পাহাড়েই হোক বা মরুভূমিতে। এ দিকে ফিরে এসে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। এত কম সময়ে দুর্গম জেলাগুলির সমস্ত স্কুলে পৌঁছনো সম্ভব হবে কি না, সেটাও প্রশ্ন। কর্মীদের তালিকাও তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত তাড়াহুড়োর মধ্যে। তার ফলও দেখা যাচ্ছে হাতেনাতে। কেউ হয়তো ছুটিতে। এ দিকে জুলাই মাসের শুরুতে ওই নির্দেশের পর তাঁর নাম ঢুকে পড়েছে জেলা-সফরের তালিকায়। ওই অফিসারের ছুটি কাটানো মাথায় উঠেছে।

এর মধ্যেই অবশ্য নিচুতলার অনেক সরকারি কর্মীর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে! সাধারণ নিয়মে সরকারি কাজে পাঠানো হলেও তাঁদের বিমানে চড়ার সুবিধে নেই। ট্রেনেই চাপতে হয়। কিন্তু তাড়াতাড়ি গিয়ে ফিরে এসে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে বলে তাঁদের বিমানের টিকিট কেটে দেওয়া হয়েছে। আকাশপথে শৌচালয় দেখতে যেতে বেশ মজাই পেয়েছেন তাঁরা।

কিন্তু হঠাৎ শৌচালয় দেখতে দিল্লি থেকে লোক পাঠানোর দরকার পড়ল কেন?

কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি। গত বছর গদিতে বসার পরে লাল কেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের প্রথম বক্তৃতায় মোদী ঘোষণা করেছিলেন, এক বছরের মধ্যে সব স্কুলে শৌচালয় তৈরি হবে। কো-এড স্কুলে ছাত্র ও ছাত্রীদের পৃথক শৌচালয় থাকবে। সাংসদদের তিনি অনুরোধ করেছিলেন, এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় স্কুলে শৌচালয় তৈরি করে দিতে। কর্পোরেট সংস্থাগুলিকেও এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন মোদী। বলেছিলেন, ‘‘আগামী বছর যখন আমরা লাল কেল্লায় এসে দাঁড়াব, তখন যেন সব স্কুলে শৌচালয় থাকে।’’ মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর অঙ্গ হিসেবেই এই ‘স্বচ্ছ বিদ্যালয়’ অভিযান শুরু হয়। প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ৪ লক্ষ ১৯ হাজার স্কুলে শৌচালয় তৈরি করতে হবে।

এ বছরের স্বাধীনতা দিবসের আর মাসখানেক বাকি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর চাইছে, তার আগেই যেন সব স্কুলে শৌচালয় তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু কতখানি কাজ এগিয়েছে? অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছিলেন, জুন মাসের মধ্যেই শতকরা একশো ভাগ স্কুলে শৌচালয় তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু জুন মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী নিজেই পর্যালোচনায় বসে দেখেন, কাজ এখনও অনেক বাকি। কর্পোরেট সংস্থাগুলি যে সব স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছিল, সেগুলির সিংহভাগেই কাজ শেষ হয়নি। তখনই নির্দেশ দেওয়া হয়, দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে।

নির্দেশ মেনে কাজ হয়েছে কি না, সেটাই সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য এ বার দিল্লি থেকে সরকারি কর্মীদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে রাজ্যগুলির শিক্ষা দফতরের উপরেও ভরসা করছে না কেন্দ্র। সরকারি এক সূত্রের বক্তব্য, ‘‘১৫ অগস্ট লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলে দেবেন সব স্কুলে শৌচালয় তৈরি হয়ে গিয়েছে, তারপর কোনও সংবাদমাধ্যম বা বিরোধী দলের নেতা একটি স্কুল দেখিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, ‘এখানে শৌচালয় কোথায়’— এমনটা প্রধানমন্ত্রী চাইছেন না।’’

premangshu choudhuri central secretariate districtwise officer school toilets swachh school district schools
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy