Advertisement
১৬ মে ২০২৪

জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্তে ন’টি দল

ইসলামি ধর্ম প্রচারক জাকির নাইকের টেলিভিশন চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করা তো বটেই, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার কথাও ভাবছে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, ইসলামি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মালিকানাধীন চ্যানেলটির সম্প্রচার সে দেশে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ শনিবার অস্বীকার করেছেন বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক।

জাকির নাইক

জাকির নাইক

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৮
Share: Save:

ইসলামি ধর্ম প্রচারক জাকির নাইকের টেলিভিশন চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করা তো বটেই, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার কথাও ভাবছে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, ইসলামি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মালিকানাধীন চ্যানেলটির সম্প্রচার সে দেশে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ শনিবার অস্বীকার করেছেন বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক।

দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র জানাচ্ছেন, জঙ্গিদের কাছে জাকির নাইকের টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতার ক্লিপিংস মিলেছে। অভিযোগ টেলিভিশন সম্প্রচারে সন্ত্রাসবাদীদের উৎসাহিত করছেন এই ধর্ম প্রচারক। তাই তাঁর চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ তো বটেই, জাকিরের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও ভাবা হচ্ছে। ওই সূত্রের কথায়, ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে তাঁকে গ্রেফতারের কথাও ভাবছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও শনিবার জানিয়েছেন, চ্যানেলটি বন্ধের ঘোষণা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ইদের ছুটির পরে রবিবার দফতর খুললেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বাংলাদেশের কেব‌্ল অপারেটরদের সংগঠন ‘কোয়াব’-এর সভাপতি মির হোসেন জানিয়েছেন, তাঁরাও টেলিভিশন চ্যানেলটি সম্প্রচার করতে চান না। গুলশনের রেস্তোরাঁয় হামলাকারী অন্তত দু’জনের অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, জাকির নাইকের বক্তৃতা শুনে তাদের ছেলেরা জঙ্গি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। ব্রিটেন, আমেরিকা তো বটেই, মালয়েশিয়ার মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশেও জাকিরের চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মির হোসেন জানান, মন্ত্রী তাঁদেরও জানিয়েছেন— দু-এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশ ঘোষণা করা হবে।

জাকির নাইক আপাতত সৌদি আরবে রয়েছেন। সূত্রের খবর, সেখান থেকে দেশে ফিরলেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন গোয়েন্দারা। মুম্বইয়ে তাঁর অফিসে ইতিমধ্যেই পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। শনিবার একটি ভিডিও প্রকাশ করে বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক অবশ্য দাবি করেছেন, বাংলাদেশ সরকারের কোনও মুখপাত্র তাঁর বিরুদ্ধে জঙ্গিদের উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগ করেননি। তিনি নিজে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। জাকির বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকদের অর্ধেকের বেশি নিয়মিত আমার চ্যানেল দেখেন। দুনিয়ায় কোটি কোটি মানুষ আমার ভক্ত। তাঁদের আমি সন্ত্রাসে উৎসাহিত করি— এমন অভিযোগ কেউ করেন না।’’ জাকিরের কথায়, দু’এক জন জঙ্গি তাঁর ভক্ত হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য তাঁকে দায়ী করাটা ‘শয়তানি’।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, জাকিরের বিপুল জনসমর্থনের বিষয়টি মাথায় রেখে আট ঘাট বেঁধে এগোনো হচ্ছে। আর তাই জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্তে ৯টি দল গঠন করছে মন্ত্রক। যাদের মধ্যে চারটি দল জাকিরের বক্তব্যের ভিডিও ও সিডি-র ফুটেজগুলি খতিয়ে দেখবে। তিনটি দল খতিয়ে দেখবে জাকিরের সোশ্যাল মিডিয়ার গতিবিধি। আর জাকিরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দু’টি দলের উপর। এই দলগুলিতে থাকছেন এনআইএ, ইনটেলিজেন্স ব্যুরো, র এবং রেভিনিউ ইনটেলিজেন্সের প্রতিনিধিরা। জাকিরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে পাঠানো অর্থ কোন খাতে খরচ করা হয়েছে বা বিদেশি অনুদান নেওয়ার ক্ষেত্রে আইন মানা হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত দশ বছরে জাকির কোন কোন দেশে গিয়েছেন, কাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং সেই সফরের জন্য কারা টাকা ঢেলেছে, সেটাও রয়েছে তদন্তের আওতায়।

জাকিরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কাজকর্মও যথেষ্ট সন্দেহজনক বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র জানাচ্ছে, সৌদি আরবের মতো মুসলিম দেশগুলি থেকে বিশেষ উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণে টাকা পাঠানো হচ্ছে জাকিরের সংস্থাকে। সমাজসেবার নামে যা ছড়িয়ে দেওয়া হয় গোটা দেশে।

এই তৎপরতার মধ্যেই আজ জাকিরের বিরদ্ধে বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছে বিহার পুলিশ। জাকিরের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ওঠা অভিযোগগুলি হল, ঢাকার গুলশনে হামলকারী দুই জঙ্গি ও হায়দরাবাদে ধৃত আইএস জঙ্গি এই ধর্ম প্রচারকের ভক্ত ছিল। আজ বিহার পুলিশ জানিয়েছে, পটনার গাঁধী ময়দান ও বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে ধৃত জঙ্গিদের কাছ থেকেও জাকিরের বক্তৃতার সিডি ও বই উদ্ধার করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ধৃতরা তদন্তে জানিয়েছিল, তারা নিয়ম করে জাকিরের বক্তৃতা শুনতো। সে সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে একটি রিপোর্টও জমা দিয়েছিল এনআইএ। এমনকী ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের দ্বারভাঙা মডিউলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বাঢ় সামেলা গ্রামের লাইব্রেরি থেকেও বিতর্কিত এই ধর্ম প্রচারকের বক্তৃতার বহু সিডি ও বই উদ্ধার করে এনআইএ। সিজার তালিকায় তার উল্লেখও করে এনআইএ।

কলকাতায় জাকিরের টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের দাবি জানিয়ে এ দিন লালবাজারে যান বিজেপির নেতা-নেত্রীরা। কমিশনার রাজীব কুমারকে লেখা দাবিপত্রে তাঁরা জানিয়েছেন, বেআইনি ও লাইসেন্সহীন এই চ্যানেলটি কলকাতা জুড়ে দেখানো হচ্ছে। এটা বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে। বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘অনেক কেব‌্ল অপারেটরকে জোর করে এই চ্যানেল সম্প্রচারে বাধ্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশে হামলার পরে এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Zakir Naik investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE