Advertisement
E-Paper

সীমান্ত জুড়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোক ভারত: ফের হুমকি চিনা মুখপত্রে

ডোকলাম চিনের এলাকা নয় বলে ভুটানের দাবি। থিম্পু আগেই জানিয়েছে যে ভুটানি এলাকায় ঢুকে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল চিন। ভারতও এ বিষয়ে ভুটানের সঙ্গেই সহমত। ডোকলামে সেনা পাঠিয়ে চিনের সেই পরিকল্পনা ভারত আটকেও দিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ১৯:২০
ডোকলাম নিয়ে টানাপড়েন শুরুর পর থেকে সামরিক আস্ফালন ক্রমশ বাড়াতে শুরু করেছে চিন। —প্রতীকী ছবি।

ডোকলাম নিয়ে টানাপড়েন শুরুর পর থেকে সামরিক আস্ফালন ক্রমশ বাড়াতে শুরু করেছে চিন। —প্রতীকী ছবি।

যুদ্ধের জন্য প্ররোচনার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিল চিন। ডোকলামে ভারত এবং চিনের সেনাবাহিনী দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও, ভারত এক বারও আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ করার কথা বলেনি। চিন প্রায় রোজ যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। মঙ্গলবার সেই সুর আরও চড়িয়ে চিনের শাসক দল তথা সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর মাধ্যমে চিনের হুমকি— যুদ্ধ যদি শুরু হয়, তা হলে শুধু ডোকলামে নয়, সব সীমান্তেই চিনের মোকাবিলা করতে হবে ভারতকে। অবিলম্বে চিন যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করুক— চিনা সরকারকে এমন পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর প্রতিবেদনটিতে।

১৯৬২ সাল থেকে ভারত বার বার চিনকে প্ররোচনা দিয়ে আসছে— লেখা হয়েছে গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে। ‘‘যদি ভারত একাধিক এলাকায় সঙ্ঘাত শুরু করে, তা হলে গোটা সীমান্ত (এলএসি) জুড়ে চিনের বিরুদ্ধে তাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ করতে হবে।’’ চিন বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে, ডোকলামকে কেন্দ্র করে যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তা হলে চিন শুধু ওই এলাকায় যুদ্ধ সীমাবদ্ধ রাখবে না। একাধিক রণাঙ্গনে তারা নিজেদের শক্তি জাহির করার চেষ্টা করবে।

ডোকলাম চিনের এলাকা নয় বলে ভুটানের দাবি। থিম্পু আগেই জানিয়েছে যে ভুটানি এলাকায় ঢুকে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল চিন। ভারতও এ বিষয়ে ভুটানের সঙ্গেই সহমত। ডোকলামে সেনা পাঠিয়ে চিনের সেই পরিকল্পনা ভারত আটকেও দিয়েছে। তাতেই শুরু হয়েছে ভারত-চিন টানাপড়েন। জুন মাসের গোড়া থেকে শুরু হওয়া সেই টানাপড়েন জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে পৌঁছেও একটুও কমেনি। বরং রোজ উত্তাপ একটু একটু করে বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ে ভারত এবং চিনের চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন ভুটান। দু’পক্ষকেই তারা সেনা সরিয়ে নিতে বলেছে। কিন্তু ভারত একতরফা সেনা প্রত্যাহারে নারাজ। নয়াদিল্লি বলছে, ডোকলামে চিনা আগ্রাসন শুধু ভুটানের জন্য নয়, ভারতের জন্যও সমান উদ্বেগের। কারণ চিন যে এলাকা দিয়ে রাস্তা তৈরি করছে, সেই এলাকা থেকে ‘শিলিগুড়ি করিডর’ বা ‘চিকেনস নেক’-এর দূরত্ব খুবই কম। তাই চিনকে ডোকলামে রাস্তা তৈরি করতে দিলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগসূত্র রক্ষাকারী চিকেনস নেক অরক্ষিত হয়ে পড়তে পারে বলে নয়াদিল্লি মনে করছে। সুতরাং, চিন সেনা না সরানো পর্যন্ত ভারতও ওই এলাকা ছেড়ে পিছিয়ে আসবে না, সাফ জানানো হয়েছে সাউথ ব্লকের তরফে। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে রফাসূত্রে পৌঁছনোর প্রস্তাব নয়াদিল্লি বার বারই দিচ্ছে। কিন্তু চিন বলছে, ভারত আগে সেনা সরাক। না হলে কোনও আলোচনা হবে না।

চিন বার বারই বলছে, তারা যুদ্ধ চায় না। কিন্তু যুদ্ধের হুঁশিয়ারিটা বার বার বেজিং থেকেই শোনা যাচ্ছে। —প্রতীকী ছবি।

চিনা সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসে এ দিন লেখা হয়েছে, চিন যুদ্ধ করতে চায় না, ভারত যুদ্ধে প্ররোচনা দিচ্ছে। কিন্তু চিনা সংবাদপত্র যা-ই দাবি করুক, ভারত যে এক বারও আগ বাড়িয়ে যুদ্ধের কথা বলেনি, তা আন্তর্জাতিক মহলের সামনে স্পষ্ট। চিনই ভারতকে ১৯৬২-র পরাজয়ের কথা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছে। ভারত পাল্টা জানিয়েছে, ১৯৬২-র ভারতের সঙ্গে আজকের ভারতকে গুলিয়ে ফেললে চিন ভুল করবে।

আরও পড়ুন: তিব্বতে মহড়া চিনা সেনার

বাগ্‌যুদ্ধ ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে চিন। গ্লোবাল টাইমসে প্রায় রোজই ভারতের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ভাষা প্রয়োগ করা হচ্ছে। মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘‘ভারত এ বার যে পদক্ষেপ করেছে, তা চিনের সার্বভৌমত্বকে সাংঘাতিক ভাবে ক্ষুণ্ণ করছে।’’ চিনা সংবাদপত্রের হুঁশিয়ারি— চিন যুদ্ধে যেতে ভয় পায় না। প্রতিবেদক ডুও মু চিনা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘‘সঙ্ঘাত যে হেতু দীর্ঘায়িত হচ্ছে, সে হেতু দীর্ঘমেয়াদি পরিস্থিতির মোকাবিলায় চিনকে এ বার প্রস্তুত হতে হবে।’’ ডোকলামে রাস্তা তৈরির কাজও যেন চিনা বাহিনী বন্ধ না করে, চিনা সরকারকে এমন পরামর্শও দিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র। চিনের সার্বভৌমত্বের স্বার্থেই ডোকলামে বাহিনী এবং প্রস্তুতি বাড়িয়ে রাস্তা তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার— এমনই লেখা হয়েছে গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে।

শুধু গ্লোবাল টাইমস নয়, চিনা বিদেশ মন্ত্রকও বলছে, ডোকলামে ভারত ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ করেছে। চিনের এলাকায় ভারতের এই ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ দেখে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরাও নাকি হতবাক হয়ে গিয়েছেন। বেজিং-এর দাবি সে রকমই।

India china standoff Chinese media Doklam standoff China
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy