Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বিচারপতি নিয়োগ বিল ঠেকাতেও সক্রিয় কংগ্রেস

সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরুর সময়েও এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিল না কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্যসভায় বিমা বিল রুখে দিয়ে তারা এতটাই রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে যে, সরকারের প্রতি পদে বাধা তৈরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দল। গত কালই কংগ্রেস নেতৃত্ব ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে কারখানা আইন সংশোধন বিলটি নিয়েও তাঁরা সরকারকে সমস্যায় ফেলবেন। এ বার বিচারপতি নিয়োগ বিলের গতি রোধ করতেও তৎপর হল রাজ্যসভার প্রধান বিরোধী দল।

শঙ্খদীপ দাস
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরুর সময়েও এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিল না কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্যসভায় বিমা বিল রুখে দিয়ে তারা এতটাই রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে যে, সরকারের প্রতি পদে বাধা তৈরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দল। গত কালই কংগ্রেস নেতৃত্ব ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে কারখানা আইন সংশোধন বিলটি নিয়েও তাঁরা সরকারকে সমস্যায় ফেলবেন। এ বার বিচারপতি নিয়োগ বিলের গতি রোধ করতেও তৎপর হল রাজ্যসভার প্রধান বিরোধী দল।

বিচারপতি নিয়োগ বিলটির ব্যাপারে দলের মনোভাব স্পষ্ট করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ বলেন, “প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। কেন না বিচারকদের নিয়োগের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর ব্যাপার। প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার মধ্যে যাতে কোনও সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

খুরশিদ জানান, বিষয়টি নিয়ে সতীর্থ কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের সঙ্গে আজ তাঁর কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত অবস্থান স্থির করার আগে অশ্বিনী কুমার ও বীরাপ্পা মইলির সঙ্গেও কথা বলবে কংগ্রেস। প্রসঙ্গত, ইউপিএ জমানায় এই চার জনই বিভিন্ন সময়ে আইন মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন।

বিচারপতি নিয়োগ বিলটি মনমোহন জমানাতেই রাজ্যসভায় পাশ হয়েছিল। কিন্তু তা লোকসভায় পাশ হয়নি। কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুরনো বিলে কিছু সংশোধন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সেটিকে ইতিমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে। বিলটি-র মূল উদ্দেশ্য হল, বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত কলেজিয়াম ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একটি জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন গঠন করা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৬ জন সদস্যের ওই কমিশনে আরও দু’জন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সদস্য হিসেবে থাকবেন। এ ছাড়া থাকবেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী এবং দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। ওই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মনোননয়ন করবে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত একটি কমিটি। তা ছাড়া, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতামত নেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রস্তাবিত বিলে। এই বিলটি যে হেতু সংবিধান সংশোধন বিল, তাই এটি পাশ করাতে সংসদের উভয় কক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। আর সরকারকে বিপাকে ফেলতে সেই জায়গাতেই চেপে ধরতে চাইছে কংগ্রেস।

কিন্তু প্রশ্ন হল, ইউপিএ জমানায় কংগ্রেস নিজেই বিলটি এনেছিল। এ ব্যাপারে তখনই বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তা হলে কংগ্রেস এখন কেন ফের আলোচনা চাইছে?

ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা আজ বলেন, আগের থেকে পরিস্থিতি বদলেছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢা আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের নাম বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সরকার তাতে আপত্তি করে। তা নিয়ে আইন মন্ত্রকের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির মনকষাকষির বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসে পড়ে। তাই বিলটি পাশের আগে আরও সতর্কতা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যাতে বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা বজায় থাকে এবং প্রশাসনের সঙ্গে বিচার ব্যবস্থার সংঘাত তৈরি না হয়।

এই ব্যাখ্যার পরে বিজেপি-সহ সরকার পক্ষের অনেকেই মনে করছেন, আসলে ইচ্ছা করে এই সব যুক্তি তুলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। যদিও কংগ্রেসের অনেকেই এই অভিযোগ মানতে নারাজ।

তাঁদের যুক্তি, ভালমানুষি করলে রাজনীতি হবে না। ইউপিএ জমানায় সরকারের সব’কটি সংস্কারের বিল এবং লোকপাল বিলের বিষয়ে নানা ছুতোনাতায় বাধা দিয়েছে বিজেপি। এ বার তাদের সেই রাজনীতিটাই ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।

সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, বিচারপতিদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিলটি আগামী সপ্তাহে সংসদে পেশ হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে দু’দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। কিন্তু তার পরেও সরকারের মধ্যে একটা সংশয় রয়ে গিয়েছে।

তা হল, বিলটি সংসদে পাশ হলেও তার সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কেউ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলে বিলটি খারিজ হয়ে যেতে পারে। আইনজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ভারত সরকার বনাম কেশবানন্দ ভারতী মামলায় বিচারব্যবস্থার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা সুনির্দিষ্ট করা রয়েছে। বিলটি পাশ হলে সেই ক্ষমতা ও স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই। যদিও বিলটি সংসদে পেশ করা থেকে পিছিয়ে আসার কোনও সিদ্ধান্ত এখনও কেন্দ্র নেয়নি। কিন্তু সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলির বহু নেতাই মনে করছেন, সংসদের চলতি অধিবেশনে বিলটি পাশ করানো সরকারের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE