Advertisement
০২ মে ২০২৪

সন্দেহভাজনের বয়ানে অসঙ্গতি, অন্তরা-হত্যা নিয়ে ধন্দ বাড়ছে

অন্তরা দাস খুনের ঘটনায় তাঁর পূর্বপরিচিত যুবকের উপরেই সন্দেহ বাড়ছে পুলিশের। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার সন্তোষ কুমার নামে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর কথায় কিছু অসঙ্গতি মিলেছে। তবে তিনিই যে খুন করেছেন, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ২২:০২
Share: Save:

অন্তরা দাস খুনের ঘটনায় তাঁর পূর্বপরিচিত যুবকের উপরেই সন্দেহ বাড়ছে পুলিশের। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার সন্তোষ কুমার নামে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর কথায় কিছু অসঙ্গতি মিলেছে। তবে তিনিই যে খুন করেছেন, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। রাতেও সন্তোষকে ফের এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন পুণে গ্রামীণ পুলিশের পদস্থকর্তারা।

পুলিশ সূত্রের খবর, অন্তরার সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা স্বীকার করেছেন সন্তোষ। তাঁর সঙ্গে যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল, তা-ও মেনে নিয়েছেন। অন্তরা তাঁকে এড়িয়ে যেতেন। তিনি এ-ও দাবি করেছেন, অন্তরার পুরনো এক পুরুষবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। বিয়েও ঠিক হয়েছিল।

অন্তরার জেঠু পঞ্চানন দাস অবশ্য সন্তোষের এ সব দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, অন্তরার থ্যালাসেমিয়া ছিল। তাঁর কোনও বিয়ে ঠিক হয়নি। এখানেই ধন্দ বেড়েছে পুলিশের। তারা বলছে, অন্তরা এড়িয়ে যেতেন, আবার তাঁর বিয়ের কথা, পুরুষবন্ধুর কথাও সন্তোষকে জানিয়েছিলেন— দু’টো একসঙ্গে হওয়া অসম্ভব। সন্তোষের কললিস্ট খতিয়ে দেখে পুলিশ জেনেছে, শুক্রবার সকাল থেকে অন্তরার রুমমেট পূজাকে (তিনিও সন্তোষকে চিনতেন) ফোন করেছিলেন। পূজা পুলিশকে জানিয়েছেন, সন্তোষ অন্তরার গতিবিধি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। সে দিন সন্তোষ আরও কয়েক জন বন্ধুকে ফোন করেছিলেন বলেও তদন্তকারীরা জেনেছেন।

বেহালার সরশুনার বাসিন্দা অন্তরা দাস (২৩) পৈলানের একটি সংস্থা থেকে পাশ করে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেন। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ শেষে পুণেতে একটি বহুজাতিক সংস্থায় যোগ দেন। শুক্রবার রাতে পুণের তালবাড়ের অফিস থেকে বেরিয়ে কেএনবি চকের কাছে এক আততায়ী তাঁর গলায় ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ দেয়। সত্যেন্দ্র সিংহ নামে এক মোটরবাইকআরোহী রক্তাক্ত অবস্থায় অন্তরাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার অন্তরার বাবা দেবানন্দ দাস, মা এবং বোন সঞ্চারী পুণে যান। সেখানে ডেহু রোড থানায় খুনের অভিযোগ দায়েরের সময় সন্দেহভাজন হিসেবে সন্তোষের নাম উল্লেখ করেন অন্তরার বাবা। পুলিশকে জানান, বেঙ্গালুরুতে থাকার সময় অন্তরার সঙ্গে সন্তোষের পরিচয় হয়। পরবর্তী কালে সন্তোষ নিয়মিত অন্তরাকে ফোনে উত্যক্ত করতেন।

আরও পড়ুন...
আটক সেই সন্তোষ, তবে সন্দেহ অন্যত্রও

পুলিশ সূত্রের দাবি, অন্তরা ও পূজা বেঙ্গালুরু থেকে পুণে আসার সময় সন্তোষ সঙ্গে এসেছিলেন। ঘটনার পর অন্তরার কললিস্ট খতিয়ে দেখে, তাঁর বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্তোষের উপরে সন্দেহ জোরালো হয়। সত্যেন্দ্রর বয়ান অনুযায়ী আততায়ীর যে স্কেচ আঁকানো হয়েছে তার চেহারার সঙ্গে অবিকল না হলেও আকার-আকৃতির সঙ্গে সন্তোষের অনেকটা মিল রয়েছে। ফলে বেঙ্গালুরু গিয়ে পুলিশের একটি দল সন্তোষকে পুণে নিয়ে আসে। তদন্তকারীদের কাছে সন্তোষের দাবি, শুক্রবার তিনি বেঙ্গালুরুতেই ছিলেন। তাঁর মোবাইল ফোনের টাওয়ারের অবস্থান সে দিন কোথায় ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত কিছু মেলেনি। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘পরিচয় লুকিয়ে বিমানে আসা মুস্কিল। তাই রেলপথে বা বাসে সন্তোষ এসেছিল কি না, সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তালবাড়ের আশপাশের সব এলাকার সিসিটিভির ফুটেজও খতিয়ে দেখছি আমরা।’’ ইতিমধ্যেই অন্তরার বন্ধু ও অফিসে গিয়ে কথা বলেছে তদন্তকারীদের একটি দল।

তদন্তের স্বার্থে অন্তরার পরিবার এখনও পুণেতেই রয়েছে। এ দিন বেহালা (পশ্চিম)-র বিধায়ক ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অন্তরার বাবাকে ফোন করে কথা বলেন। সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দেন। নিজের মোবাইল ফোনের নম্বরও দেবানন্দবাবুকে দিয়েছেন তিনি। পরে পার্থবাবু বলেন, ‘‘কোনও সমস্যা হলেই জানাতে বলেছি। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনা করে পুণে পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE