Advertisement
০৪ মে ২০২৪

রেশন দুর্নীতি, যে তিমিরে সেই তিমিরেই

কংগ্রেস আমলে লক্ষ্মীপুর মহকুমায় গণবণ্টন ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পরও এর বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। বিশেষ করে, বাগান-শ্রমিকদের নানা ভাবে ঠকানো হচ্ছে। এই অভিযোগ করে উপযুক্ত তদন্তের দাবিতে সরব হল স্থানীয় জনতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

কংগ্রেস আমলে লক্ষ্মীপুর মহকুমায় গণবণ্টন ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পরও এর বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। বিশেষ করে, বাগান-শ্রমিকদের নানা ভাবে ঠকানো হচ্ছে। এই অভিযোগ করে উপযুক্ত তদন্তের দাবিতে সরব হল স্থানীয় জনতা।

গত রবিবার গ্রাহক সুরক্ষা সমিতির আহ্বানে লক্ষ্মীপুরে এক সভা হয়। নিজেদের মত প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকেই বলেন, খাদ্য সুরক্ষার কার্ড বণ্টন নিয়ে এক দিকে নোংরা রাজনীতি হয়েছে। অন্য দিকে, এখনও সঠিক মূল্যে যেমন সামগ্রী দেওয়া হয় না, তেমনই মেলে না নির্ধারিত পরিমাণে রেশন সামগ্রীও।

সমিতির বিন্নাকান্দিঘাট পঞ্চায়েত কমিটির আহ্বায়ক নীতেশ রায় বলেন, তাঁদের পঞ্চায়েতে চাল মাফিয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না। ২০ বছর ধরে একই চক্র গণবণ্টন ব্যবস্থাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে লুঠেপুটে খাচ্ছে। সরকার বদলের পর গ্রাহকরা ভেবেছিলেন, এ বার অবস্থার পরিবর্তন হবে। অন্তত মাফিয়া চক্রের ক্ষমতা কমবে। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত লোকগুলি একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে। একই অভিযোগ সমিতির বিন্নাকান্দি বাগান কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীনবন্ধু চক্রবর্তীর। তিনি বিস্মিত, কংগ্রেস আমলের দুর্নীতির তদন্ত এখনও হচ্ছে না।

গ্রাহক সুরক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লবকুমার গোস্বামী বলেন, ‘‘শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে রাজনীতিবিদদের কারও মাথাব্যথা নেই। এরই সুযোগ নেয় দালালচক্র।’’ এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তোলার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, গ্রাহকদের শিক্ষাই ব্যাপক দুর্নীতিকে আটকাতে পারে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে তিনি সবাইকে আহ্বান জানান। তাঁর অনুমান, ‘‘সঠিক তদন্ত হলে চাল কেলেঙ্কারি ও খাদ্য সুরক্ষার কার্ড কেলেঙ্কারিতে ছোট-বড় অনেকে জড়িয়ে পড়বেন।’’

বিপ্লববাবু পরে বলেন, শুধু লক্ষ্মীপুরে দুর্নীতি চলছে বা শুধুই চাল কেলেঙ্কারি হচ্ছে, এমন নয়। জেলা জুড়ে কেরোসিনের বড়সড় দুর্নীতি চলছে। নইলে খোলাবাজারে কেরোসিন কী করে মেলে? তাঁর অভিযোগ, সরকার নিয়ন্ত্রিত কেরোসিন খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। পরে ওই তেল বাজার থেকে ৪৫-৫০ টাকা লিটার দরে কিনতে হচ্ছে। কোনও জায়গায় ব্যাপক দুর্নীতির জাল বিছানো না থাকলে এ ভাবে কেরোসিন তেলের কালোবাজারি হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর কথায়, লোকদেখানো অভিযান না করে কী করে হাজার হাজার লিটার কেরোসিন খোলাবাজারে চলে যাচ্ছে, এর তদন্ত হওয়া জরুরি। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এজেন্সিগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি করেন তিনি।

রেশন দোকানের পাশাপাশি বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অত্যধিক রাখা হয় বলেও গ্রাহক সুরক্ষা সমিতি অভিযোগ করেছে। তাদের বক্তব্য, একদল অসাধু ব্যবসায়ী এখানকার সাধারণ মানুষের রক্ত একেবারে চুষে খাচ্ছে। সরকারের নির্দেশে ক’দিন আগে জেলাশাসকরা বাজারে-বাজারে ঘুরেছেন। তা চালিয়ে যাওয়ার আর্জি জানান তাঁরা। বিপ্লববাবু গ্রাম-গঞ্জের হাট এবং শহরের মাছ বাজারগুলিতে তদারকির আর্জি জানান। তাঁর আশা, আকস্মিক অভিযান চালালে ব্যবসায়ীরা সতর্ক থাকবেন। মানুষ কিছুটা রেহাই পাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

corruption ration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE