Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক সপ্তাহেই ফর্সা, বিজ্ঞাপনে ধোঁকা দিলে কিন্তু সমূহ বিপদ

ফর্সা, সুদর্শন, নেশাহীন, সরকারি চাকুরের জন্য সুদর্শনা, ফর্সা সুপাত্রী চাই। ‘ম্যাট্রিমনি’ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট তো বটেই, সংবাদপত্রের শ্রেণিবদ্ধ বিভাগেও এমন বিজ্ঞাপন হামেশা চোখে পড়ে। উল্টোটাও আছে— পাত্রী পক্ষ কখনও কখনও ফর্সা পাত্রেরও খোঁজ করে থাকেন। এবং সেটাও ওই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:৫৭
Share: Save:

ফর্সা, সুদর্শন, নেশাহীন, সরকারি চাকুরের জন্য সুদর্শনা, ফর্সা সুপাত্রী চাই।

‘ম্যাট্রিমনি’ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট তো বটেই, সংবাদপত্রের শ্রেণিবদ্ধ বিভাগেও এমন বিজ্ঞাপন হামেশা চোখে পড়ে। উল্টোটাও আছে— পাত্রী পক্ষ কখনও কখনও ফর্সা পাত্রেরও খোঁজ করে থাকেন। এবং সেটাও ওই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই।

আর এই ‘ফর্সা’ ভাবনাকেই লক্ষ্য করে বাজারে নেমে পড়েছে অনেকে। আক্ষরিক অর্থেই বাজার। সেই বাজারে সাবান আছে। ক্রিম আছে। তেল আছে। সানস্ক্রিন লোশন আছে। সানগ্লাস আছে। অনেক দিন ধরেই সেই বাজারে আছে আরও অনেক কিছু। আর আছে বিজ্ঞাপন। অর্থনীতির নিয়ম মেনে, বাজার থাকলেই থাকবেন ক্রেতা। সেই ক্রেতার সঙ্গে বাজারের, নির্দিষ্ট ভাবে বললে, বাজারজাত পণ্যের সম্পর্ক খুবই মধুর। আসলে ফর্সা হওয়ার তাড়নায় প্রতিটি পণ্যই ভীষণ বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে তাঁদের কাছে। ফল কি মেলে? ব্যবহারকারীদের জবাব স্পষ্ট ভাবে শোনা যেত না। কিন্তু, ইদানীং যেন হাওয়া বদলেছে। তাই জোরালো জবাব মিলছে। এমনকী, সেই জবাব নিয়ে আদালতেও যাচ্ছেন কেউ কেউ।

কী রকম?

একটি বহুজাতিক সংস্থার সাবান মাখলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফল মেলে! এমন ভাবেই বিজ্ঞাপন করা হত। আর সেই বিজ্ঞাপন দিতেন দক্ষিণের বিখ্যাত তারকা মাম্মুটি। এ বার তাঁকে তো বটেই, ওই সাবান প্রস্তুতকারী সংস্থাকেও আদালতে টেনে নিয়ে গেলেন কে চাটু নামে এক ব্যক্তি। পেশায় তিনি ভাস্কর। তাঁর অভিযোগ, গত এক বছর ধরে তিনি ওই কোম্পানির সাবান মেখেছেন। অথচ, তাঁর গায়ের রঙে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি। এই অভিযোগ আদালতে জানাতেই, ওই সংস্থা এবং মাম্মুটিকে ডেকে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

তিন বার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা মাম্মুটি বিজ্ঞাপনে ‘ফর্সা এবং উজ্জ্বল’ ত্বকের জন্য ওই সাবান মাখার পরামর্শ দিতেন ক্রেতাদের। চাটু জানিয়েছেন, দক্ষিণিদের জীবনে চিত্রতারকাদের প্রভাব আছে। তাঁদেরকে সাধারণ মানুষ অনেক গুরুত্ব দেন। সে কারণেই তিনি বিজ্ঞাপনে মাম্মুটির বলা কথায় বিশ্বাস রেখে ওই সাবান এক বছর ধরে মেখেছেন। আর তাতে ফল না মেলায় তাঁর নামে আদালতে নালিশ ঠুকেছেন। কিন্তু, চাটির এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির অনেকেই। শাহাদ মার্রাকর নামে এক পরিচালক বলেন, ‘‘প্রত্যেক অভিনেতা এবং শিল্পীর বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আর মাম্মুটির এটার পেশা। সুতরাং তিনি অর্থের বিনিময়ে এই কাজ করেছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলা ঠিক নয়।’’ একই কথা বলেছেন মাম্মুটির আইনজীবীও। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মক্কেলের এটা পেশা। স্ক্রিপ্ট রাইটার লিখেছেন। পরিচালক নির্দেশ দিয়েছেন। আর আমার মক্কেল শুধু সেটায় অভিনয় করে সংলাপ বলেছেন। এতে দোষের কী আছে বুঝতে পারছি না।’’

মাম্মুটি দোষ করেছেন কি করেননি, সেটা আদালতের বিচার্য বিষয়। কিন্তু এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বিজ্ঞাপনী চটকে ক্রেতাকে বিভ্রান্ত বা ঠকালে ঘটনা কিন্তু আদালত অবধি গড়াতে পারে। পাঁচ মাসে টাকে চুল গজানো হোক বা এক সপ্তাহে ফর্সা, ছয় মাসে দু’ইঞ্চি লম্বা হওয়া হোক বা চার সপ্তাহে রোগা— আদালতে হাত কিন্তু লম্বা হতেই পারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE