Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Rahul Gandhi

রাহুলের পাশে থেকেও ওয়েনাড়ে কি লড়াই, উভয় সঙ্কটে সিপিএম

মানহানির ফৌজদারি মামলায় গুজরাতের নিম্ন আদালত রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই লোকসভায় তাঁর সাংসদ-পদ খারিজ হয়ে গিয়েছে।

Picture of Rahul Gandhi.

রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫২
Share: Save:

রাহুল গান্ধীর জন্য পথে নেমে প্রতিবাদে আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁর লোকসভা আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া? এই প্রশ্নেই এখন উভয় সঙ্কটে পড়েছে সিপিএম!

মানহানির ফৌজদারি মামলায় গুজরাতের নিম্ন আদালত রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই লোকসভায় তাঁর সাংসদ-পদ খারিজ হয়ে গিয়েছে। প্রায় সব বিরোধী দলই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রের উপরে মারাত্মক আঘাত আখ্যা দিয়ে সরব হয়েছে। সেই তালিকায় আছে সিপিএমও। কিন্তু তাদের জন্য সমস্যা দেখা দিয়েছে এর পরবর্তী পদক্ষেপকে ঘিরে। রাহুল ছিলেন কেরলের ওয়েনাড়ের সাংসদ। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার সময়ে কেন তিনি কেরলের এমন একটি আসনে প্রার্থী হলেন, যেখানে কংগ্রেসের মূল লড়াই বামেদের সঙ্গে, সেই প্রশ্ন উঠেছিল চার বছর আগেই। এখন ওয়েনাড়ে উপনির্বাচন হলে বিজেপির ‘স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে’র বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বামেরা কি হাত মেলাবে? সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করেন, পরিস্থিতির তাগিদেই বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করতে সম্ভাব্য ‘বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ঐক্যে’র বার্তা দেওয়া উচিত। কিন্তু দলের কেরল রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, রাহুলকে নিয়ে অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু তার জন্য কেরলে কংগ্রেসকে জায়গা ছাড়া যাবে না। দলের দোটানা ও বিড়ম্বনা এখানেই!

লোকসভায় রাহুলের সাংসদ-পদ খারিজ হওয়ার পরেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন একই সঙ্গে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তার পরে দিল্লিতে সিপিএমের দু’দিনের পলিটব্যুরো বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। যে দ্রুততায় রাহুলের সাংসদ-পদ খারিজ হয়েছে, সেই নিরিখে দেখলে উপনির্বাচনও যে কোনও সময়ে ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। সূত্রের খবর, এই প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেরল রাজ্য নেতৃত্ব দলের অন্দরে সওয়াল করেছেন, আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে কেরলে অন্তত কংগ্রেস এবং বামেদের মধ্যেই মূল লড়াই হবে। এখন ওয়েনাড়ে ‘আপস’ করতে গেলে ভবিষ্যতের জন্য অন্য বার্তা যাবে এবং বিজেপিই তার ফায়দা নেবে। কেরলের নেতারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে এমনও বলেছেন যে, ওয়েনাড়ে এখন ভোট হলেও কংগ্রেস ও বামেদের বাইরে বিজেপির কোনও সুযোগ নেই। তাই এই নিয়ে আলাদা করে ভাবারও কারণও নেই।

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এবং দলের কেরল রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, ‘‘বিজেপি গোটা দেশকে স্বৈরতন্ত্রের শিকলে বাঁধতে চাইছে। নিম্ন আদালতের একটা রায়কে ব্যবহার করে রাহুল গান্ধীর সাংসদ-পদ খারিজ করা এই প্রবণতারই ভয়ঙ্কর উদাহরণ! এই মনোভাবের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিবাদ দরকার, আমরাও পথে নেমে প্রতিবাদ করতে তৈরি। কিন্তু এই প্রতিবাদকে কংগ্রেসের প্রতি কেরলে নির্বাচনী সমর্থন ভাবলে ভুল হবে!’’ ওয়েনাড়ে গত বার রাহুলের বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিল সিপিআইয়ের। তারাও সাংসদ-পদ খারিজ এবং আদানি-প্রশ্নে রাহুলের পাশেই দাঁড়িয়েছে। আবার সিপিএমের অন্য এক পলিটব্যুরো সদস্যের মতে, ‘‘লোকসভার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলাম, সব গণতান্ত্রিক শক্তির একসঙ্গে লড়াইয়ের কথা বললাম কিন্তু রাহুলের ছেড়ে যাওয়া কেন্দ্রে তাঁর দলের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই হল— এটা মোটেও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়!’’

সিপিএমের অস্বস্তি এবং বিড়ম্বনা কাটার একমাত্র পথ থাকছে এখন উপনির্বাচনই না হলে! দলেরই এক পলিটব্যুরো সদস্যের মন্তব্য, ‘‘তড়িঘড়ি পদ খারিজ হওয়ায় যে সমালোচনা হয়েছে, তার পরে উপনির্বাচন এখনই ঘোষণা না হতে পারে। তা হলে এখন এই নিয়ে ভাবতে হবে না!’’ দলীয় সূত্রে আরও খবর, অন্ধ্রপ্রদেশে সাংগঠনিক সমস্যা ও দলের মধ্যে বিবাদের কারণে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন বি ভি রাঘবুলু। তবে পলিটব্যুরো তাঁর পদত্যাগ স্বীকার করেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE