Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সাংসদ ঋতব্রতের ব্যাঙ্ক-তথ্য নিয়ে ফ্যাসাদে সিপিএম

অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট নিয়ে তাঁর ওই ক্ষোভের কথা দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ঋতব্রত। চিঠির প্রতিলিপি গিয়েছে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কাছেও। দলের শীর্ষ মহলে ওই চিঠির বিষয়বস্তু আলোচিতও হয়েছে।

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৩
Share: Save:

দূরত্ব কমার কোনও লক্ষণ নেই। বরং, সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বিড়ম্বনা বাড়ছে সিপিএমের!

আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যয়, সংবাদমাধ্যমে খবর ফাঁস এবং ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা সংক্রান্ত অভিযোগে ঋতব্রতের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন গড়েছিল দল। কমিশন কাজ শুরুর আগেই তাঁকে অবশ্য তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল। কমিশন শেষ পর্যন্ত ঋতব্রতকে দোষীই সাব্যস্ত করেছে। কিন্তু কমিশনের হাতে তাঁর তিন বছর তিন মাসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট কী ভাবে চলে এল, তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকে চিঠি পাঠিয়েছেন সাংসদ। অর্থ মন্ত্রকও তদন্তের আদেশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কাছে বিষয়টি নিয়ে জবাবদিহি চেয়েছে। ঋতব্রতের ভবিষ্যৎ যদি সিপিএমে শেষও হয়ে যায়, এই ব্যাঙ্ক-কাণ্ড নিয়ে দলকে বড়সড় বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে বলেই ইঙ্গিত মিলছে নানা সূত্রে।

কমিশনের শুনানি চলাকালীন ওই ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট থেকে তথ্য তুলে প্রশ্ন করা হয়েছিল অভিযুক্ত সাংসদকে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, কারও সম্মতি বা ‘অথরাইজেশন’ ছাড়া কোনও নাগরিকের স্টেটমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে আদায় করা কি বৈধ? অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, কোনও ব্যাঙ্কই তার কোনও গ্রাহকের তথ্য তাঁর সম্মতি ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে ঋতব্রত এখনও প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে সাম্প্রতিক কালে টুইট করে তিনি মন্তব্য করেছেন, ব্যক্তিপরিসরের অধিকার নিয়ে এত হইচই হচ্ছে। কারও ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট তাঁর সম্মতি ছাড়া বার করে নেওয়া কি সেই ব্যক্তি পরিসরে আঘাত নয়?

আরও পড়ুন: সর্বসমক্ষে আইনি কাগজে সই করে স্বামীকে ডিভোর্স

অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট নিয়ে তাঁর ওই ক্ষোভের কথা দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ঋতব্রত। চিঠির প্রতিলিপি গিয়েছে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কাছেও। দলের শীর্ষ মহলে ওই চিঠির বিষয়বস্তু আলোচিতও হয়েছে। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, ‘‘ঋতব্রত জানিয়েছে, দল তাঁর কাছে চাইলে তিনি নিজেই ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট জমা দিতেন। গত বছরের শেষেই তিনি এক বার রাজ্য দলের কাছে আয় ও সম্পত্তির হিসাব দিয়েছিলেন। তাঁকে অন্ধকারে রেখে এই কাজ কেন করা হল, প্রশ্ন তুলেছেন সাংসদ।’’

রাজ্য কমিটি থেকে ঋতব্রতের বাদ পড়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠকেই ওই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়বে। রাজ্য কমিটি থেকে তিনি এক বার বাদ পড়লে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটিও যে কয়েক মাস পরের সম্মেলনে তাঁকে আর জায়গা দেবে না, তা-ও এক রকম নিশ্চিত। এমতাবস্থায় ঋতব্রত যাতে দল ছেড়ে না দেন, তার জন্য তাঁকে ডেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁর তোলা অভিযোগের বিচার না পেলে মুখ বুজে থাকতে চান না তরুণ সাংসদ। সে ক্ষেত্রে দলের বাইরে ‘স্বাধীন বাম’ হিসাবে আরও তিন বছর সাংসদ থেকে যাবেন তিনি। কিন্তু প্রকাশ্যে তিনি অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললে যে প্যান্ডোরার বাক্স খুলবে, বুঝতে পারছেন ইয়েচুরিরা। আর ঋতব্রতও সুযোগ বুঝে টুইট করছেন, ‘কাচের ঘরে বাস করেন যাঁরা, তাঁদের ঢিল ছোড়া উচিত নয়’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ritabrata Banerjee cpm Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE