Advertisement
০১ জুন ২০২৪
CPM

একা লড়াই নিষ্ফল, ধারালো আন্দোলন করতে চাইছে বাম

চার রাজ্যের মধ্যে বামেদের ঝুলিতে এ বার এসেছে একটিই মাত্র আসন। এবং সেই জয় এসেছে আসন সমঝোতার পথেই। দক্ষিণের তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে একটিই আসনে লড়েছিল সিপিআই।

cpm.

—প্রতীকী ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২০
Share: Save:

কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় চার রাজ্যে একাই লড়েছিল সিপিএম। কিন্তু তাদের ফিরতে হল শূন্য হাতেই। চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল সামনে আসার পরে সিপিএম মনে করছে, মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে আন্দোলনের ধার বাড়াতে হবে। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মোকাবিলায় ‘নরম হিন্দুত্বে’র কৌশল চলবে না। তেমনই বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের মনোভাব সংশোধন করতে হবে, অন্যদের জায়গা দিতে হবে।

চার রাজ্যের মধ্যে বামেদের ঝুলিতে এ বার এসেছে একটিই মাত্র আসন। এবং সেই জয় এসেছে আসন সমঝোতার পথেই। দক্ষিণের তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে একটিই আসনে লড়েছিল সিপিআই। সেই কোঠাগুডেম আসনে সিপিআইয়ের তেলঙ্গনা রাজ্য সম্পাদক কুনামনেনি সম্ভাশিব রাও জয়ী হয়েছেন ২৬ হাজার ৫৪৭ ভোটে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সিপিআইয়ের রাও হারিয়েছেন আর এক বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী জলাগম বেঙ্কট রাওকে! তৃতীয় স্থানে বিআরএস।

রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় আলাদাই লড়েছে সিপিএম। রাজস্থানে ভাদরা ও দুঙ্গরগড় আসন ছিল তাদের দখলে, দুই কেন্দ্রেই এ বার সিপিএম প্রার্থী পরাজিত। ভাদরা কেন্দ্রে সিপিএমের গত বারের বিধায়ক বলবন পুনিয়া বিজেপির কাছে হেরেছেন ১১৩২ ভোটে। দেখা যাচ্ছে, ওই কেন্দ্রে আম আদমি পার্টির (আপ) প্রার্থী ২২৫২ ভোট পেয়েছেন। এক লক্ষের বেশি ভোট পেয়েও পুনিয়ার জিততে না পারার পিছনে আপের ‘ভূমিকা’ দেখতে পাচ্ছে সিপিএমের একাংশ। দাঁতা রামগড় এবং ধোদ আসন দু’টি নিয়েও আশাবাদী ছিল সিপিএম। ওই দুই কেন্দ্রের প্রার্থী, দলের রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম এবং ধোদের প্রাক্তন বিধায়ক পেমা রামও জিততে পারেননি। তবে ওই চার কেন্দ্রেই কংগ্রেস এবং সিপিএমের সম্মিলিত প্রাপ্ত ভোট বিজেপির চেয়ে বেশি। অর্থাৎ কংগ্রেস ও বামের ভোট ভাগাভাগির ফায়দা পেয়েছে বিজেপি।

দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘মানুষের জীবন-জীবিকা এবং ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির প্রয়াস আরও চার গুণ বাড়াতে হবে। এই নির্বাচনের ফল থেকে সেই প্রয়োজনীয়তার কথাই স্পষ্ট ভাবে উঠে আসছে।’’ এই রাজ্যগুলির ভোটের আগে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষের কথা উঠে এসেছিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও। দলের এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের কথায়, ‘‘বিভিন্ন রাজ্য থেকে যে কথাগুলো আলোচনায় এসেছিল, তার অনেকটাই ঠিক প্রমাণিত হচ্ছে। একে তো কংগ্রেস বিজেপি-বিরোধী অন্য দলকে জায়গা দেওয়ার মনোভাব দেখায়নি। আর নরম হিন্দুত্বের কৌশলে গিয়ে তারা বিজেপির ফাঁদে পা দিয়ে তাদেরই সুবিধা করে দিচ্ছে।’’

এর পরে বাংলায় বাম-কংগ্রেস সমঝোতা কোন পথে এগোবে, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে একজোট করার লক্ষ্যেই তাঁরা এগোবেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আসনের নিরিখে বিজেপি জিতেছে নিশ্চয়ই কিন্তু ওই তিন রাজ্যেও বিজেপি-বিরোধী ভোটের শতাংশ উল্লেখযোগ্য। তাই সবই বিজেপি হয়ে গেল, এই রকম মনে করে নেওয়া ঠিক নয়। এই রাজ্যে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থকে মাথায় রেখেই বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE