Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বিচ্ছিন্ন ওড়িশা, প্লাবিত বহু নিচু এলাকা, ঝড়ে মৃত ১২

ওড়িশায় আঘাত শেষে পশ্চিমবঙ্গে খড়্গপুর, আরামবাগ, বর্ধমান, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ হয়ে শনিবার বিকেলে ফণী বাংলাদেশে চলে যাবে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন হাওয়া দফতর। সেই বাংলাদেশ, যারা ‘ফণী’ নামকরণ করেছে এই সমুদ্র-ঝড়ের। 

বিধ্বংসী: ফণীর তাণ্ডবে ভেঙে পড়েছে ঘরবাড়ি। টোটোয় আশ্রয় নিয়েছেন এক মহিলা। শুক্রবার পুরীতে। এএফপি

বিধ্বংসী: ফণীর তাণ্ডবে ভেঙে পড়েছে ঘরবাড়ি। টোটোয় আশ্রয় নিয়েছেন এক মহিলা। শুক্রবার পুরীতে। এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০৩:৫৮
Share: Save:

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল দফায় দফায় বৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল প্রশাসন। ওড়িশা রাত কাটিয়েছে অন্ধকার ও আশঙ্কাকে সঙ্গী করে। সকাল আটটা বাজতেই ঝঞ্ঝার বেশে স্থলভূমিতে পা রাখল ‘ফণী’, পুরীর অদূরে গোপালপুরের সৈকতে। ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগে মুহূর্তে যেন লন্ডভন্ড বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতির অভাব ছিল না। তার পরেও ১২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। প্লাবিত বহু নিচু এলাকা। কাঁচা ঘরের খোলার চাল আর পাকা বাড়ির কাচের জানলায় বাছবিচার করেনি ঝড়ের মার। প্রশাসনের হিসেবে ভুবনেশ্বর, কটক, জাজপুর, ভদ্রকে কয়েক হাজার গাছ পড়ে আটকে গিয়েছে সড়ক। মোবাইল টাওয়ার উপড়ে ওড়িশার বিস্তীর্ণ এলাকার সঙ্গে বাকি বিশ্বের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ওড়িশায় আঘাত শেষে পশ্চিমবঙ্গে খড়্গপুর, আরামবাগ, বর্ধমান, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ হয়ে শনিবার বিকেলে ফণী বাংলাদেশে চলে যাবে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন হাওয়া দফতর। সেই বাংলাদেশ, যারা ‘ফণী’ নামকরণ করেছে এই সমুদ্র-ঝড়ের।

ফণীর ছোবল সামাল দিতে ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই উঠেপড়ে লেগেছিল প্রশাসন। গত কাল উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সম্ভাব্য পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার জানিয়েছেন, দুর্যোগের পরে ত্রাণ ও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে ইতিমধ্যেই আগাম ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলের নেতাকর্মীদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন খড়্গপুরে। বিপর্যয় মোকাবিলায় কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের সব জেলাকে প্রস্তত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজও অনেকটাই সম্পূর্ণ বলে মমতা জানান। তিনি প্রতি মুহূর্তে রাজ্যে ফণী-পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে তাঁর অনুরোধ, ‘‘ভয় না পেয়ে নিজেকে যতদূর সম্ভব সাবধানে রাখতে হবে। খুব প্রয়োজন না থাকলে বাইরে বেরোবেন না। এই দু’টো দিন ঝুঁকি কম নিন।’’

এনডিআরএফ-এর ডিআইজি রণদীপ রানা জানিয়েছেন, পর পর সামুদ্রিক ঝড় মোকাবিলায় ওড়িশা প্রশাসন এখন খুবই দক্ষ ও তৎপর। তার ফলেই প্রাণহানি এত কম। ঝড়ে ফুঁসে ওটা সাগর ভাসাতে পারে এমন হাজার দশেক গ্রামের প্রায় ১১ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ৮৮০টি সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুল-কলেজের হাজার তিনেক পাকা বাড়িতে এঁদের এনে রাখা হয়। মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক জানিয়েছেন, ঝড়ে সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর। দ্রুত মেরামতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে দিন-রাত কাজ করছেন কর্মী ও ইঞ্জিনিয়ারেরা।

ওড়িশার স্পেশাল রিলিফ কমিশনার বি পি শেট্টি জানিয়েছেন— পুরী, কেন্দ্রাপাড়া ও নয়াগড় জেলা থেকে ৩ মহিলার মৃত্যুর ঘটনার খবর এসেছে। উড়ে আসা টিনের ঘায়ে মারা গিয়েছে পুরীর এক কিশোর। প্রশাসনের এক কর্তার আশঙ্কা, প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পরে আরও কিছু ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির খবর আসতে পারে।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে— ফণীর কেন্দ্রস্থল, যাকে ‘চোখ’ বলা হয়, তার পরিধি ছিল প্রায় ২৮ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গড় গতিতে সেটি এগোচ্ছে। স্থলভূমিতে ওঠার সময়ে ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ১৭৫-২০০ কিলোমিটার থাকলেও পরে তা কমে যায়। ভুবনেশ্বরে ঝড় বয় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে। পরে কটক ও জাজপুরের কাছে সেই গতি কমে ১০০-র কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। অন্ধ্র, তেলঙ্গানা তো বটেই, ফণীর প্রভাব পড়েছে উত্তরাখণ্ড পেরিয়ে ৯০০ কিলোমিটার দূরের নেপালেও। এভারেস্টের ২ নম্বর ক্যাম্পে ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে গোটা ২০ তাঁবু। পর্যটক, ট্রেকার ও অভিযাত্রীদের বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেছে নেপাল সরকার। কপ্টারের উড়ানও বন্ধ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ পেরিয়ে ঝড় অসমে পৌঁছে যাতে ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে না পারে, সেখানকার প্রশাসনও সতর্ক।

আবহাওয়া দফতরের হিসেবে ১৯৯৯-এর সুপার সাইক্লোনের পরে এত ভয়ঙ্কর মাত্রার ঘূর্ণিঝড় গত ২০ বছরে এই এলাকায় হয়নি। আপাতত ওড়িশায় ধ্বংসলীলা শেষ করে পশ্চিমবঙ্গের পথে ফণী। তবে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঝড়ের গতিবেগ কমায় মাত্রাও কমেছে এই সাইক্লোনের। ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ থেকে ‘হেভি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ হয়ে এখন ফণীর তকমা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Fani ফণী Odisha Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE