জগন্নাথ মন্দিরের ধ্বজা উড়ে যাওয়ার পরে নতুন করে লাগানো হয়েছে তা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
ধ্বজা উড়ে গিয়েছে। আর তাতেই ‘ফাঁড়া’ কেটে গিয়েছে বলে দাবি পুরীর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের।
মন্দির সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে মন্দিরের মাথায় লাগানো নতুন ধ্বজাটি হাওয়ায় উড়ে যায়। তা নিয়েই তুমুল চর্চা শুরু হয় মন্দিরের সেবক থেকে ভক্তদের মধ্যে। যদিও মন্দির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ধ্বজা উড়ে যাওয়ার মধ্যে অন্য অর্থ না খোঁজাই ভাল। মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দয়িতাপতি রামচন্দ্র দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘মন্দিরের ধ্বজা উড়ে গিয়েছে। এতে বিপদের কিছু নেই। বরং ফাঁড়া কেটে গিয়েছে। অতীতেও আমরা দেখেছি যে, বিপর্যয় এসেছে। কিন্তু পুরীর পাঁচ-সাত কিলোমিটারের মধ্যে কিছু হয়নি। জগন্নাথদেব রক্ষা করেছেন, এবারও করবেন! এটাই পরম্পরা। ওই সব অশুভ-তত্ত্ব যাঁরা প্রচার করছেন, তাঁরা পুরীর পরম্পরা জানেন না!’’ এমনিতে প্রতিদিনই পুরী-মন্দিরে নতুন ধ্বজা বাঁধা হয়। এদিন সকালে ওই ধ্বজা উড়ে যাওয়ার পরে নতুন ধ্বজা লাগানো হয়েছে। ফলে পুরো বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ মন্দির কর্তৃপক্ষ।
আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওড়িশা উপকূল-সহ পূর্ব ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে বছরের এই সময়, অর্থাৎ প্রাক-বর্ষার সময়ে গড়ে তিন-চারটে ঘূর্ণিঝড় হয়ই। কিন্তু এবারের ঘূর্ণিঝড় ফণী কিছুটা ব্যতিক্রম। উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক আশিসচন্দ্র পথী বলেন, ‘‘ওড়িশা উপকূল এরকম ঘূর্ণিঝড় দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু যা এবার চিন্তায় রাখছে, তা হল ফণীর গতি! প্রায় ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি বেগে সেটির পুরীতে আছড়ে পড়ার কথা।’’ মৌসম ভবনের এক কর্তার কথায়, ‘‘কতটা শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ছে ফণী, তার উপরেই সমস্ত কিছু নির্ভর করছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ঝড়ের দু’কথা
অতীত
• দেশের পূর্ব উপকূলে সাইক্লোন অচেনা কিছু নয়। বছরে ৫ থেকে ৬টি বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। ১৮৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে ১৪টি ‘সিভিয়ার সাইক্লোন’ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভারতে আছড়ে পড়েছে। বাকিগুলি দিক বদলে বাংলাদেশ, মায়ানমার কিংবা অন্য দেশে গিয়েছে।
আয়লার সঙ্গে পার্থক্য
• ২০০৯ সালে ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়েছিল আয়লা। সে ছিল সিভিয়ার সাইক্লোন। তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। ফণী শুধু ‘সিভিয়ার’ নয়, ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’। গতিবেগ অনুযায়ী ঝড়ের ভাগ এ রকম: লোয়ার (ঘণ্টায় ৩০-৬০ কিলোমিটার), সাইক্লোনিক (ঘণ্টায় ৬১-৮৮ কিলোমিটার), সিভিয়ার সাইক্লোনিক (ঘণ্টায় ৮৯-১১৭ কিলোমিটার), ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম (ঘণ্টায় ১১৮-১৬৬ কিলোমিটার), এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম (১৬৭ থেকে ২২১ কিলোমিটার), সুপার সাইক্লোন (২২২ কিলোমিটারেরও বেশি)। ১৯৯৯ সালে ওড়িশার কেন্দ্রাপড়ায় সুপার সাইক্লোন আছড়ে পড়ে। অন্তত ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ফণী কোথায় আলাদা
• শনিবার তামিলনাড়ু উপকূলের একেবারে কাছে চলে এসেছিল ফণী। তখন সিভিয়ার সাইক্লোন ছিল। তার পরে দিক বদলে ফের সমুদ্রে। এত বেশি দিন সমুদ্রে থাকায় প্রবল শক্তি বাড়িয়ে এখন সে ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’। উপকূলের কাছে এসে ফের সমুদ্রে গিয়ে আবার জমিতে আছড়ে পড়ার নজির কম।
তথ্যসূত্র: কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)
তাই পর্যটক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে কী ভাবে দ্রুত নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে এ দিন বৈঠকও করা হয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে। দফায়-দফায় প্রশাসনের কাছে পরিস্থিতি নিয়ে মন্দিরের তরফে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। দয়িতাপতি রামচন্দ্র বলছেন, ‘‘এখন একটাই লক্ষ্য, সকলকে নিরাপদ স্থানে দ্রুত স্থানান্তরিত করা। আর একটা কথা জানবেন, যাই হোক না কেন, পুরীর মন্দিরে ধ্বজা উড়বেই! ওই যে বললাম পরম্পরা! সেটাই হবে, দেখবেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy