Advertisement
E-Paper

উলার লেকে মোতায়েন ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’, ঘুম উড়েছে জঙ্গিদের

মহাসমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ানো যোদ্ধারা মোতায়েন দুর্গম পাহাড়ে। লক্ষ্য জঙ্গিদের যাতায়াতের শর্ট কাট পথ বন্ধ করে দেওয়া। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এই কৌশলে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের গতিবিধি বাধা তো পেয়েছেই। ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’-এর আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১৫:০২

মহাসমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ানো যোদ্ধারা মোতায়েন দুর্গম পাহাড়ে। লক্ষ্য জঙ্গিদের যাতায়াতের শর্ট কাট পথ বন্ধ করে দেওয়া। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এই কৌশলে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের গতিবিধি বাধা তো পেয়েছেই। ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’-এর আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের।

পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে ঢোকার পর জঙ্গিরা শ্রীনগরে পৌঁছত উলার লেক হয়ে। নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সড়ক পথে শ্রীনগর যেতে হলে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে হয়। একে দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা। তার উপরে আবার কিছু দূর অন্তর ভারতীয় সেনার কড়া নজরদারি। নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সড়ক পথে শ্রীনগর পৌঁছনো খুব কঠিন হচ্ছিল জঙ্গিদের পক্ষে। তাই তারা শর্ট কাট বেছে নেয়। ২৫০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত বিশাল উলার লেক হয়ে উঠেছিল জঙ্গিদের এই শর্ট কাট। চারিদিকে দুর্গম পাহাড়ে ঘেরা উলার। এক বার পাহাড় ডিঙিয়ে লেকের ধারে পৌঁছে যেতে পারলেই আর চিন্তা নেই। নৌকা বেয়ে নিশ্চিন্তে পৌঁছে যাওয়া যায় শ্রীনগরের উপকণ্ঠে। পুলিশের পাহারা নেই, সেনার নজরদারি নেই, দীর্ঘ পাহাড়ি রাস্তা উজিয়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর ঝক্কি নেই।

গোয়ন্দা সূত্রে সেনাবাহিনীর কাছে খবর পৌঁছতে সময় লাগেনি খুব একটা। কিন্তু উলার লেকে জঙ্গিদের সঙ্গে খুব একটা এঁটে উঠতে পারছিল না সেনা। জলভাগে যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ সেনাবাহিনীর সেভাবে নেই। এর জন্য দরকার নৌসেনাকে। কিন্তু নৌসেনা উলারের জলে জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে পারলেও দুর্গম পাহাড়ে তাদের সমস্যা হবেই। তাই উলারের জঙ্গি করিডর ধ্বংস করার জন্য এমন কোনও বাহিনীর দরকার ছিল যারা ‘অ্যাম্ফিবিয়াস ওয়ারফেয়ার’-এ পারদর্শী। স্থলে ও জলে— দুই জায়গাতেই যুদ্ধ করাকে অ্যাম্ফিবিয়াস ওয়ারফেয়ার বলা হয়। ভারতীয় নৌসেনার এলিট ফোর্স ‘মার্কোস’ সেই কাজে দুর্ধর্ষ। ১৯৮৭ সালে নৌসেনা এই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী তৈরি করে। পুরো নাম মেরিন কম্যান্ডোস। সংক্ষেপে মার্কোস। দীর্ঘ দিন ধরে দেশে-বিদেশে নানা রকমের নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে সফল অভিযান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে এই মার্কোসের ভাঁড়ারে। তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জামও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। তাই মার্কোস কম্যান্ডোদেরই মোতায়েন করা হয় দুর্গম পাহাড়ে ঘেরা উলার লেকে।

জঙ্গিরা উলার লেকে ভারতীয় সেনাকে নাস্তানাবুদ করছিল বার বার। মার্কোস বাহিনীকেও সেভাবেই কাবু করে ফেলা যাবে বলে জঙ্গিরা মনে করেছিল। ভারতীয় নৌসেনা উঁচু পাহাড়ি এলাকায় খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না বলেই মনে করেছিল পাকিস্তান থেকে আসা প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা। কিন্তু, মার্কোস-এর ক্ষিপ্রতা এবং সম্পূর্ণ অচেনা যুদ্ধ কৌশল শুধু জঙ্গিদের নয়, অনেক উন্নত দেশের সশস্ত্র বাহিনীকেও গোল খাইয়ে দিতে পারে। ফলে উলার লেকে মার্কোস মোতায়েন হওয়ার পর থেকেই শর্ট কাটে জঙ্গিদের শ্রীনগর যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উলার লেক বিশাল বিস্তার সত্ত্বেও কোনও এলাকা মার্কোসের তীক্ষ্ণ নজরের বাইরে নেই। জলভাগে মুখোমুখি সংঘর্ষে কিছুতেই মেরিন কম্যান্ডোদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেনি জঙ্গি বাহিনী।

আরও পড়ুন:

নিউক্লিয়ার সাবমেরিনে ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে চিন!

শর্ট কাট পথ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা অবশ্য কম করেনি জঙ্গিরা। উলারের চার পাশের এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে জবরদস্ত প্রত্যাঘাতের ছক কষেছিল। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত যুদ্ধের প্রশিক্ষণই দেওয়া হয় মার্কোসকে। চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অচেনা কৌশল প্রয়োগ করে কী করে প্রতিপক্ষকে শেষ করতে হয়, তা মার্কোস ভালই জানে। এ বিষয়ে আমেরিকা, রাশিয়া এবং ইজরায়েলের স্পেশ্যাল কম্যান্ডোদের সঙ্গে তুলনা হয় মার্কোসের। উলারের আশপাশের এলাকায় মার্কোস কম্যান্ডোরা ভিড়ে মিশে গিয়ে অভিয়ান চালাতে শুরু করেন। লম্বা দাড়ি-গোঁফ রেখে, কাশ্মীরের স্থানীয় পোশাক ফিরান পরে, স্থানীয় আদব-কায়দা রপ্ত করে এলাকাবাসীর ছদ্মবেশ নিয়ে নেন মার্কোস কম্যান্ডোরা। ফলে উলারের আশপাশের এলাকায় জঙ্গিদের গতিবিধি নজরে রাখতে সুবিধা হয় বাহিনীর। কাশ্মীরের ওই সব এলাকায় প্রকাশ্যেই কার্যকলাপ চালায় জঙ্গিরা। মার্কোস কম্যান্ডোরা আশপাশেই ছড়িয়ে থেকে সব নজরে রাখছে, তা বুঝতে পারেনি জঙ্গিরা। ফলে মাঝেমধ্যেই অতর্কিত হামলার শিকার হতে হয়েছে। মার্কোসেই এই ছদ্মবেশী গেরিলা যুদ্ধের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে উলারের আশপাশের এলাকা থেকে অচিরেই পালাতে বাধ্য হয়েছে লস্কর এবং জইশের প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা। গোঁফ-দাড়ির ছদ্মবেশে থাকায় জঙ্গিরা মার্কোস-এর নাম দিয়েছে ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’। এই দাড়িওয়ালা ফৌজ উপত্যকার বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন জঙ্গিদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে অচেনা কৌশল নিয়ে হানা দেওয়া দাড়িওয়ালা ফৌজের মোকাবিলার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না জঙ্গিরা।

National MARCoS Dadiwala Fauj Wuller Lake Jammu and kashmir Deployment Counter Terrorism MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy