মহাসমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ানো যোদ্ধারা মোতায়েন দুর্গম পাহাড়ে। লক্ষ্য জঙ্গিদের যাতায়াতের শর্ট কাট পথ বন্ধ করে দেওয়া। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এই কৌশলে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের গতিবিধি বাধা তো পেয়েছেই। ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’-এর আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে ঢোকার পর জঙ্গিরা শ্রীনগরে পৌঁছত উলার লেক হয়ে। নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সড়ক পথে শ্রীনগর যেতে হলে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে হয়। একে দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা। তার উপরে আবার কিছু দূর অন্তর ভারতীয় সেনার কড়া নজরদারি। নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সড়ক পথে শ্রীনগর পৌঁছনো খুব কঠিন হচ্ছিল জঙ্গিদের পক্ষে। তাই তারা শর্ট কাট বেছে নেয়। ২৫০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত বিশাল উলার লেক হয়ে উঠেছিল জঙ্গিদের এই শর্ট কাট। চারিদিকে দুর্গম পাহাড়ে ঘেরা উলার। এক বার পাহাড় ডিঙিয়ে লেকের ধারে পৌঁছে যেতে পারলেই আর চিন্তা নেই। নৌকা বেয়ে নিশ্চিন্তে পৌঁছে যাওয়া যায় শ্রীনগরের উপকণ্ঠে। পুলিশের পাহারা নেই, সেনার নজরদারি নেই, দীর্ঘ পাহাড়ি রাস্তা উজিয়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর ঝক্কি নেই।
গোয়ন্দা সূত্রে সেনাবাহিনীর কাছে খবর পৌঁছতে সময় লাগেনি খুব একটা। কিন্তু উলার লেকে জঙ্গিদের সঙ্গে খুব একটা এঁটে উঠতে পারছিল না সেনা। জলভাগে যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ সেনাবাহিনীর সেভাবে নেই। এর জন্য দরকার নৌসেনাকে। কিন্তু নৌসেনা উলারের জলে জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে পারলেও দুর্গম পাহাড়ে তাদের সমস্যা হবেই। তাই উলারের জঙ্গি করিডর ধ্বংস করার জন্য এমন কোনও বাহিনীর দরকার ছিল যারা ‘অ্যাম্ফিবিয়াস ওয়ারফেয়ার’-এ পারদর্শী। স্থলে ও জলে— দুই জায়গাতেই যুদ্ধ করাকে অ্যাম্ফিবিয়াস ওয়ারফেয়ার বলা হয়। ভারতীয় নৌসেনার এলিট ফোর্স ‘মার্কোস’ সেই কাজে দুর্ধর্ষ। ১৯৮৭ সালে নৌসেনা এই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী তৈরি করে। পুরো নাম মেরিন কম্যান্ডোস। সংক্ষেপে মার্কোস। দীর্ঘ দিন ধরে দেশে-বিদেশে নানা রকমের নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে সফল অভিযান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে এই মার্কোসের ভাঁড়ারে। তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জামও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। তাই মার্কোস কম্যান্ডোদেরই মোতায়েন করা হয় দুর্গম পাহাড়ে ঘেরা উলার লেকে।