Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাড়ি বোঝাই বিস্ফোরক, মধ্যপ্রদেশে ছিন্নভিন্ন ৯০

আর পাঁচটা দিনের মতোই সকাল হচ্ছিল ছোট শহরটায়। হঠাৎ তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল বাজার এলাকা। আলোর ঝলকানিতে চমকাল সকালের আকাশ। নিমেষের মধ্যে ছিন্নভিন্ন দেহ ও দেহাংশ ছিটকে এল এ-দিক ও-দিক।

উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয়রা। শনিবার মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়ার পেতলাওয়াড়ে। ছবি: রয়টার্স।

উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয়রা। শনিবার মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়ার পেতলাওয়াড়ে। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
ভোপাল শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

আর পাঁচটা দিনের মতোই সকাল হচ্ছিল ছোট শহরটায়। হঠাৎ তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল বাজার এলাকা। আলোর ঝলকানিতে চমকাল সকালের আকাশ। নিমেষের মধ্যে ছিন্নভিন্ন দেহ ও দেহাংশ ছিটকে এল এ-দিক ও-দিক। জমজমাট বাস স্ট্যান্ডের কাছের রেস্তোরাঁটা ও আশপাশের কয়েকটা বাড়ি মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপ হয়ে গেল। মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া জেলার পেতলাওয়াড়ে এই বিস্ফোরণে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত অন্তত ৯০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত শতাধিক।

প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছিল, ওই ‘শেঠিয়া’ রেস্তোরাঁয় একাধিক এলপিজি সিলিন্ডার ফেটেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে নাশকতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছিলেন না কেউ কেউ। মু্ম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে বিস্ফোরণের ঘটনায় গত কালই ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। তাই প্রতিশোধ নিতে কোনও জঙ্গি সংগঠন আজ প্রত্যাঘাত করল কি না, সেই সন্দেহও দেখা দিয়েছিল। পরে পুলিশ অবশ্য জানায়, ওই বাড়িটিতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুত করা ছিল। বাড়ির মালিক রাজেন্দ্র কাসওয়ার নাকি বিস্ফোরক মজুত করার আইনি ছাড়পত্রও ছিল। সে ক্ষেত্রে ঠিক কার গাফিলতিতে এত বড় বিপর্যয় ঘটল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, খনি এলাকা-সহ বিভিন্ন খোঁড়াখুঁড়িতে বিস্ফোরক সরবরাহের ব্যবসা করতেন রাজেন্দ্র। ওই বাড়িটিতেই ছিল তাঁর বিস্ফোরকের গুদাম। সেখানে জিলেটিন স্টিক-সহ বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী বিস্ফোরক মজুত করা ছিল। রেস্তোরাঁটিও ছিল ওই একই বাড়িতে। আজ দুর্ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এমন ঘিঞ্জি এলাকায় বিস্ফোরকের গুদাম করার অনুমতি কোথা থেকে পেয়েছিলেন রাজেন্দ্র? আবার এ-ও প্রশ্ন উঠেছে, বিস্ফোরকের গুদাম যে বাড়িতে আছে, সেখানে রেস্তোরাঁ খোলার ছাড়পত্র দেওয়া হয় কী করে?

ব্যস্ত এলাকা হওয়ায় ওই রেস্তোরাঁয় রোজ সকাল থেকেই ভিড় লেগে থাকে। বাস স্ট্যান্ডে স্থানীয় মানুষ অপেক্ষা করেন কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য। পুলিশের আশঙ্কা, আজ বিস্ফোরণের সময়ে ওই রেস্তোরাঁ এবং বাস স্ট্যান্ডে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কেউই আর বেঁচে নেই। বছর চল্লিশের প্রত্যক্ষদর্শী নরসিংহের কথায়, ‘‘ভয়ঙ্কর শব্দে চারদিক কেঁপে উঠতেই দেখলাম রক্তাক্ত দেহগুলো প্রায় উড়ে আসছে ওই রেস্তোরাঁর ভিতর থেকে। আশপাশের গাড়ি, মোটর বাইকগুলোও এ-দিক ও-দিক ছিটকে গেল।’’ ঘটনায় আহত হয়েছেন নরসিংহ নিজেও। আর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলরাম জানিয়েছেন, প্রথমে ওই গুদামের ভিতর থেকে ছোট ছোট পটকা ফাটার মতো শব্দ হচ্ছিল। তখন কেউ এক জন শাটার খুলে দেখতে যান। শাটার তোলা মাত্রই বিস্ফোরণ ঘটে।

ভোপাল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে পেতলাওয়াড়। বিস্ফোরণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করে তারা। একের পর এক মৃতদেহ উদ্ধার হতে থাকে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ পুরোপুরি সরানো না গেলে মৃতের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব নয়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ।

মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ শিংহ চৌহান ঘোষণা করেছেন, মৃতদের পরিবার-পিছু দু’লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর নির্দেশ দিয়েছি। আহতদের চিকিৎসায় যাতে ত্রুটি না থাকে, সে দিকে নজর রাখছি। নিশ্চিত করছি, বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে কোনও গাফিলতি থাকবে না।’’ ঘটনায় টুইট করে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE