বিচারপতি নিয়োগে প্রতিহিংসার রাজনীতি করার অভিযোগে এ বার কাঠগড়ায় নরেন্দ্র মোদী সরকার।
উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেস সরকারকে গদিচ্যুত করতে মোদী সরকার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিল। দু’বছর আগে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কে এম জোসেফ সেই রাষ্ট্রপতি শাসন নাকচ করে দেন। সেই বিচারপতি জোসেফকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে আপত্তি তুলেছেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। একেই প্রতিহিংসা তকমা দিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ, তাঁবেদারদের দিয়ে আদালত ভরাতে চায় সরকার। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রও মন্ত্রীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন।
গত ১০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম বিচারপতি জোসেফ ও প্রবীণ আইনজীবী ইন্দু মলহোত্রকে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে। আইন মন্ত্রক ইন্দুর নামে সিলমোহর বসিয়েছে। প্রথম মহিলা আইনজীবী থেকে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি হিসেবে শুক্রবারই তিনি শপথ নেবেন। কিন্তু বিচারপতি জোসেফের নাম নিয়ে আপত্তি তুলেছে আইন মন্ত্রক।
কলেজিয়ামের মত ছিল, বিচারপতি জোসেফ অন্য সব হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও প্রবীণ বিচারপতিদের মধ্যে সব থেকে যোগ্য। কিন্তু আইনমন্ত্রী কলেজিয়ামকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, বিচারপতি জোসেফের থেকেও প্রবীণ, গোটা দেশে এমন ৪১ জন রয়েছেন। তাঁর তুলনায় প্রবীণ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সংখ্যা এখন ১১ জন।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিরোধী শিবির এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও কলেজিয়ামের মাথা প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এর মধ্যে আপত্তিকর কিছু দেখছেন না। আজ ১০০ জনের বেশি আইনজীবীর সই করা প্রতিবাদপত্র নিয়ে প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ প্রধান বিচারপতির এজলাসে হাজির হন। দাবি তোলেন, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার জন্যই বিচারপতি জোসেফের নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়েছে। কলেজিয়ামের সুপারিশ থেকে দু’জনের মধ্যে এক জনকে আলাদা করে বাছাই করছে সরকার। তাই বিচারপতি হিসেবে ইন্দু মলহোত্রর শপথ আপাতত স্থগিত রাখা হোক।
এই দাবি খারিজ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকার নিজের অধিকারের মধ্যেই বিচারপতি জোসেফের নাম ফেরত পাঠিয়েছে। সংবিধান মেনে কলেজিয়ামও পদক্ষেপ করবে। আইন অনুযায়ী, কলেজিয়াম ফের বিচারপতি জোসেফের নাম পাঠালে সরকার তা মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও আইন মন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে বিচারপতিদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের মত, প্রধান বিচারপতির এ বার কঠোর হওয়া উচিত।
একটি সূত্রের দাবি, আইন মন্ত্রক নাম ফেরানোর আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করেনি। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্টে যখন সাতটি বিচারপতির পদ শূন্য, তখন মোদী সরকার বিচারপতি জোসেফের নাম নিয়ে আপত্তি তুলতে ৯৭ দিন সময় নিল কেন? একই প্রশ্ন তুলে বিচারপতি জে চেলামেশ্বর, বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ আগেই প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন।
আইনমন্ত্রী কলেজিয়ামকে লেখা চিঠিতে আরও যুক্তি দিয়েছেন, বিচারপতি জোসেফ আদতে কেরল হাইকোর্টের। তাঁকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ করা হলে কেরলের দু’জন প্রতিনিধি হবেন। কিন্তু কলকাতা, গুজরাতের মতো অন্তত ১০টি হাইকোর্টের সুপ্রিম কোর্টে প্রতিনিধিত্ব নেই। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘বিচারপতি জোসেফের নিয়োগে বাধা আসলে কোথায়? তাঁর রাজ্য, ধর্ম না কি উত্তরাখণ্ডের রায়?’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, এ বারই প্রথম নয়। ক্ষমতায় এসেই মোদী সরকার আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের বিচারপতি হওয়া আটকে দেয়। কারণ তিনি অমিত শাহর বিরুদ্ধে আইনজীবী ছিলেন। রবিশঙ্করের পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেসের এ সব নিয়ে মুখ খোলার নৈতিক অধিকার নেই। জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করার কারণে কংগ্রেস সরকার মাত্র দু’মাসের জন্য হলেও বিচারপতি এইচ আর খন্নাকে প্রধান বিচারপতি হতে দেয়নি।
বিচারক লোয়া-র মৃত্যুরহস্যে তদন্তের আর্জি খারিজ করে দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন আইনজীবী প্রধান বিচারপতিকে নিশানা করেছেন। কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের প্রধান দিব্যা স্পন্দনাও প্রধান বিচারপতির নিরপেক্ষতা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তোলেন। বিজেপি নেতা আইনজীবী গৌরব ভাটিয়া তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন। আগামী সপ্তাহে শুনানির দিন দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy