E-Paper

বিকল্প রুজির প্রশ্নেই পাড়ি অন্য রাজ্যে

করোনা কালে বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। তবে সেই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

সুস্মিত হালদার, সন্দীপ পাল

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ০৯:০৬
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। সেই প্রথম দেশের মানুষ অনুভব করেন, কী বিশাল সংখ্যক মানুষ জীবিকার টানে অন্য রাজ্যে পাড়ি দেন। লকডাউনে দুরবস্থা দেখে অনেক পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঘরের ছেলেকে আর বাইরে কাজে পাঠাবে না। কোনও মতে বাড়ি ফিরে পরিযায়ী শ্রমিকেরাও জানিয়েছিলেন, তাঁরা অন্যত্র কাজে যাবেন না। তবে বাস্তব সঙ্গ দেয়নি। লকডাউন চলাকালীনই সংসার চালাতে ফুরিয়ে যায় সঞ্চয়ের টাকা। পেটের টান পড়তে ফের পাড়ি দিতে হয় ভিন্‌ রাজ্যে। কাজে আসেনি কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের চালু করা কোনও প্রকল্পই।

করোনা কালে বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। তবে সেই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কাজকর্ম এক প্রকার বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে হাত দিতে হয়েছিল জমানো টাকায়। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিও সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে পেট চালাতে পরিযায়ী শ্রমিকেরা এক এক করে পুরনো কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে শুরু করেন। কেউ নতুন কাজের সন্ধানে পাড়ি জমালেন। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, করোনা কালের পরে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। কালীগঞ্জের জুরানপুরের বাসিন্দা শুকুর আলি শেখ হায়দরাবাদে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তাঁর কথায়, “হায়দরাবাদে আমরা দৈনিক সাড়ে আটশো টাকা মজুরি পাই। তাঁত চালিয়ে বা মুরগি চাষ করে কি সেই টাকা আয় করা সম্ভব?”

একই প্রশ্ন তুলছেন কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজে কর্মরত আশিবুল শেখ। তিনি বলেন, “বাড়িতে থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করলে চারশো থেকে সাড়ে চারশো টাকা পাওয়া যায়। তাও মাসে ১৫ থেকে ১৮ দিনের বেশি কাজ পাওয়া যায় না। কেরলে সারামাস কাজ মেলে। মজুরও বেশি।”

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একাধিক প্রকল্প এনেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাইরে কাজে না-গিয়ে সরকারি সহযোগিতায় নিজের এলাকায় ছোটখাটো ব্যবসা করতে। পাশাপাশি তাঁত শিল্প ও মুরগি ব্যবসার সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের যুক্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও কিছুই পরিযায়ী শ্রমিকদের আটকাতে পারেনি। পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, নানা সহযোগিতার কথা ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে তাঁরা তেমন কোনও সহযোগিতাই পাননি। বাধ্য হয়ে তাঁরা ফিরে গিয়েছেন পুরনো কর্মস্থলে। তবে কেউ কেউ ফিরে যাননি। নিজেদের মতো করে বিকল্প জীবিকার চেষ্টা করেছেন। পলাশির বাসিন্দা প্রকাশ দাস বলেন, ‘‘আমি আর কাজে যাইনি। ফিরতে খুব কষ্ট হয়েছিল। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে একটা টোটো কিনে চালাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন প্রশাসন বলছে জাতীয় সড়কে টোটো চালানো যাবে না। এমন হলে হয়তো আবার পুরনো কাজের জায়গায় ফিরে যেতে হতে পারে।’’ এমনই এক চরম অনিশ্চিয়তায় দিন কাটছে অনেকের।

শ্রম দফতরের হিসাব অনুযায়ী, নদিয়া জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার। বাস্তবে সংখ্যাটা প্রায় আড়াই লক্ষ বলে বিরোধীদের দাবি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার পিছু গড়ে পাঁচটি ভোট আছে। তাই বিপুল সংখ্যক ভোট নিজেদের দিকে টানতে কসুর করছে না কোনও দলই। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হয়েছে। কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মারা গেলে পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা, স্বাভাবিক মৃত্যু হলে ৫০ হাজার টাকা, মৃতদেহ নিয়ে আসার জন্য ২৫ হাজার টাকা ও মৃতদেহ সৎকারের জন্য ৩ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশের প্রশ্ন, কর্মক্ষেত্রে মারা গেলে না-হয় এই সুবিধা পাওয়া যাবে কিন্তু বেঁচে থাকাকালীন তাঁরা কী পাবেন? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরাও।

(চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 migrant labour

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy