Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রায় বেরোতে ৪০ বছর, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী খুনে দোষী সাব্যস্ত চার

সময়টা জরুরি অবস্থার কিছু আগে, ১৯৭৫-এর ২ জানুয়ারি। বিহারের সমস্তিপুর স্টেশনে বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন ইন্দিরা গাঁধী মন্ত্রিসভার রেলমন্ত্রী ললিতনারায়ণ মিশ্র। পরের দিন হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। আজ, চল্লিশ বছর পেরিয়ে এসে সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হল চার জন। যদিও সাজা ঘোষণা হতে দেরি এখনও এক সপ্তাহ। বছর চব্বিশের তরুণ আইনজীবী রঞ্জন দ্বিবেদী এখন ষাটোর্ধ্ব। আজ দিল্লির জেলা আদালতের বিচারক বিনোদ গয়াল যে চার জনকে অপরাধী সাব্যস্ত করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ওই আইনজ্ঞ।

ললিতনারায়ণ মিশ্র

ললিতনারায়ণ মিশ্র

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫১
Share: Save:

সময়টা জরুরি অবস্থার কিছু আগে, ১৯৭৫-এর ২ জানুয়ারি। বিহারের সমস্তিপুর স্টেশনে বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন ইন্দিরা গাঁধী মন্ত্রিসভার রেলমন্ত্রী ললিতনারায়ণ মিশ্র। পরের দিন হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। আজ, চল্লিশ বছর পেরিয়ে এসে সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হল চার জন। যদিও সাজা ঘোষণা হতে দেরি এখনও এক সপ্তাহ।

বছর চব্বিশের তরুণ আইনজীবী রঞ্জন দ্বিবেদী এখন ষাটোর্ধ্ব। আজ দিল্লির জেলা আদালতের বিচারক বিনোদ গয়াল যে চার জনকে অপরাধী সাব্যস্ত করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ওই আইনজ্ঞ। বাকিরা হল সন্তোষানন্দ অবধূত, সুদেবানন্দ অবধূত এবং গোপালজি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২(খুন), ১২০-বি(ষড়যন্ত্র), ৩২৬(ভয়ঙ্কর অস্ত্র দিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করা) ও ৩২৪(ইচ্ছাকৃত আঘাত) ধারায় এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। পরের শুনানি ১৫ ডিসেম্বর। চার অপরাধীর বিরুদ্ধে যে যে ধারা আনা হয়েছে তাতে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ফাঁসির সাজা হতে পারে।

১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি সমস্তিপুর স্টেশনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী এল এন মিশ্র। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রের দাদা, ললিতনারায়ণ পরের দিনই মারা যান হাসপাতালে। রেলমন্ত্রী ছাড়াও ওই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল আরও দু’জনের। চল্লিশ বছর আগের সেই ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে সাত জন।

এর দু’বছর পর রেলমন্ত্রী খুনের মামলা দায়ের হয় পটনার সিবিআই আদালতে। তথ্যপ্রমাণ লোপাট হতে পারে, এই আশঙ্কায় ’৭৯-এর ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই মামলা স্থানান্তরিত হয় রাজধানীতে। প্রায় তিন যুগ ধরে চলার পর, শেষমেশ মামলা খারিজের দাবি জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় অভিযুক্তেরা। কিন্তু ২০১২-এর ১৭ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দেয়, কেবল দেরি হচ্ছে এই যুক্তিতে মামলা তুলে নেওয়া যায় না। তার পরের মাসে দিল্লির আদালতে শুরু হয় শেষ পর্যায়ের শুনানি।

দীর্ঘদিন ধরে চলা এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ২০০ জনেরও বেশি। প্রাথমিক ভাবে ললিতনারায়ণ মিশ্রকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত ছিল মোট পাঁচ জন। মামলা চলাকালীনই মারা যায় তাদের এক জন। রঞ্জন দ্বিবেদী ছাড়া বাকিরা আনন্দমার্গী সংগঠনের সদস্য।

১৯৭৫ সালেরই ২০ মার্চ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ এন রায়কে খুনেরও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। রেলমন্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত রঞ্জন, সন্তোষানন্দ ও সুদেবানন্দের নাম জড়ায় সেই মামলাতেও। দায়রা আদালত তিন জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে। সন্তোষানন্দ ও সুদেবানন্দের শাস্তি হয়েছিল দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। চার বছরের জেল হয় রঞ্জন দ্বিদেবীর। কিন্তু সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে যান অভিযুক্তরা। চলতি বছর অগস্টেই সেই মামলায় সন্তোষানন্দ ও সুদেবানন্দের শাস্তি বজায় রাখেন বিচারপতি। তবে খুনের চেষ্টার অভিযোগ থেকে বেকসুর মুক্তি পেয়ে যায় দ্বিবেদী।

ললিতনারায়ণ মিশ্র হত্যা মামলাতেও জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন অভিযুক্তদের কৌঁসুলিরা। রঞ্জন দ্বিবেদী, সন্তোষানন্দ অবধূত, সুদেবানন্দ অবধূত এবং গোপালজি এরা সকলেই এত দিন জামিনে মুক্ত ছিল। আজ অপরাধীদের হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক গয়াল।

নিম্ন আদালতের রায় তো বেরোল। তবে অপরাধীরা শেষ পর্যন্ত শাস্তি পাবে কিনা, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। আইনি প্রক্রিয়ায় এত গুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ায় রীতিমতো হতাশ মিশ্র পরিবার। ললিতনারায়ণের ভাই জগন্নাথ মিশ্র এ দিন বলেন, “এর পর হাইকোর্ট আছে, তার পর সুপ্রিম কোর্ট। তা হলে আইন-আদালতের পাট চুকে অপরাধীরা আর শাস্তি ভোগ করবে কবে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE