Advertisement
E-Paper

মোদীর হামলায় বেসামাল দিল্লির দালালরাজ

নর্থ ব্লক। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দফতর। ব্রিটিশ রাজ নির্মিত অট্টালিকার সামনে সাদা সাফারি-সাদা জুতো পরা সত্তর দশকের বলিউডি ভিলেন অজিত কিংবা প্রেম চোপড়ার মতো বহু চরিত্র দুপুর থেকে জটলা করে।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২০

নর্থ ব্লক। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দফতর। ব্রিটিশ রাজ নির্মিত অট্টালিকার সামনে সাদা সাফারি-সাদা জুতো পরা সত্তর দশকের বলিউডি ভিলেন অজিত কিংবা প্রেম চোপড়ার মতো বহু চরিত্র দুপুর থেকে জটলা করে। বহু বছর ধরে। প্রণব মুখোপাধ্যায়, চিদম্বরমদের যুগেও এদের দেখা যেত। আবার দু’তলায় অর্থমন্ত্রীর ঘরের পাশে অতিথি কক্ষে যাতে এরা বসতে না পারে, অরুণ জেটলি সে ব্যাপারে কড়া ফরমান জারি করেছেন। তবু একতলার প্রবেশপথের সামনে যাঁদের জটলা বন্ধ করা ছিল শিবেরও অসাধ্য, সেই চরিত্রগুলি গত দু’দিন ধরে ‘সোনার কেল্লা’-র ডক্টর হাজরার মতোই ‘ভ্যানিশ’!

রাজধানীর মসনদে এই কুশীলবদের বলা হয় ‘দিল্লি কা দালাল’। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ৬০ হাজার কোটি টাকার রাফাল যুদ্ধবিমান হোক কিংবা রেল মন্ত্রকের পণ্য করিডরের ৮০ হাজার কোটি টাকার ডিল— সর্বত্রই এরা মধ্যস্থতাকারী দূত হতে চায়। অনেক সময়েই এরা একেবারে অবধ্য। আইএএস, আইপিএসদের পোস্টিং ট্রান্সফার থেকে ব্যাঙ্কের ঋণ পাইয়ে দেওয়া— এরা সর্বত্র বিরাজমান।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিল অভিযানে হাহাকার নেমে এসেছে এই দালালদের জীবনে। সংসদ ভবনের কাছেই পাঁচতারা হোটেলের কফিশপে আজ এ হেন এক দালাল-সম্রাটের মন্তব্য, ‘‘৬০ বছরের জীবনে এমন বিপদ কখনও আসেনি। বহু টাকা রিয়েল এস্টেট-এ ঢেলেছি। কিছু বিদেশেও গিয়েছে। ছত্তরপুরের খামারবাড়িতে এখনও রাখা আছে কয়েকশো কোটি টাকা। এ সব টাকা ব্যাঙ্কে দেব কী করে?’’

এই হোটেলটির কফিশপে আজ রথীমহারথীদের ভিড়। প্রতিদিন এখানে আসেন ভারতের স্বনামধন্য কর্পোরেট গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, সুপ্রিম কোর্টের বেশ কিছু আইনজীবী, জনসংযোগ সংস্থার প্রতিনিধিরা। মাঝে মাঝেই হাজির হন হরিয়ানার বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ। সেই ভিড়ে খামার বাড়ির মালিকটি কিংবা কিছু কেষ্টবিষ্টু সম্পাদক, সাংবাদিকও থাকেন।

আজ এখানে বহু ব্যবসায়ীর কান্নার রোল। কেউ এসেছে মুম্বই থেকে, রাজস্থান থেকে পৌঁছেছে কেউ। শুধু তো সঞ্চিত অর্থ শেষ হয়ে যাওয়া নয়, আগামিদিনে কাটমানি সংগ্রহেও বিপদ অনেক— এমনটাই আশঙ্কা করছে দালালরা। নতুন ২০০০ টাকা শুধু নয়, ৫০০ ও ১০০০ সবই আসবে। কিন্তু দালালি ব্যবস্থা নতুন ভাবে শুরু করতে ঝামেলা অনেক।

দিল্লির চাঁদনিচকের চাওরি বাজার কিংবা জামা মসজিদ, লালকেল্লার অনতিদূরে প্রতিদিন নিদেনপক্ষে হাজার কোটি টাকার নগদ লেনদেন হয়। সেখানে কি না পাওয়া যায়। চোরাই গাড়ির পার্টস থেকে শুরু করে বেআইনি ড্রাগস। এই বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও দিল্লির দালাল চক্রের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। অনেকে এখানে হুন্ডি হাওলায় টাকা খাটাতো। ভুয়ো পাসপোর্ট বানানো হতো। তবে শুধু বড় ব্যবসায়ীরা নয়। ছোট ছোট দালালও রয়েছে। সেই মাঝারি দালালেরা বলছে, বহুক্ষেত্রেই ‘পার্টি’ টাকাটা নগদে দিতে পছন্দ করে। দিল্লির প্রথা হল, একটা কাজ করে দিলে শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ টাকা সেই দালাল নেবে। অনেক সময় এই চরিত্রগুলি রীতিমতো কার্ড ছাপিয়ে লিয়াজোঁ আধিকারিকের পরিচয় দিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রেরও দালালির কাজ করে থাকে। এমনই এক দালাল তার দুধ সাদা বিএমডব্লিউতে বসার আগে বলল, ‘‘কী করব জানি না। রাতে আজ প্রচুর মদ খাব। তার পর প্রাণ যা চায় তাই করব। আগামিকাল অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠে তার পর ভাবব, কী করা যায়।’’

ইন্দিরা যুগে লাইসেন্স পারমিট রাজ ছিল। দালালরা ছিল তখনও। টি এন শেষন এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘‘শুনেছি আমার সঙ্গে দেখা করানোর জন্য আমার দারোয়ান লোকেদের কাছ থেকে টাকা নেয়। বেশি টাকা পেলে দরজায় জোরে টাকা মারে!’’ তখনও মন্ত্রীদের

দফতরে ভিজিটর্স রুমে স্যুট পরা দালাল ১ হাজার টাকা দিত আর্দালিদের। তারা বুটের শব্দ করে ততোধিক জোরে স্যালুট দিত। ভিজিটর্স রুমে কাজুবাদাম আর কফি আসত। দালালদের ‘ক্লায়েন্ট’ যাদের এখানে ‘মুর্গা’ বলা হয়, তারা তখন পাঁচতারা হোটেলের কফিশপে অপেক্ষা করত।

সেই দালালতন্ত্র এখন কাঁদছে। আর আর্দালিও ১০০০ টাকার নোট বকশিস নিতে চাইছে না!

Demonetisation Middleman in trouble bkack money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy