Advertisement
০৩ মে ২০২৪

খরায় শুকিয়েছে চা বাগান

মাসখানেক আগের কথা। বন্যার জলে ডুবে হাহাকার চলছে যোরহাট, গোহপুর, ডিব্রুগড়, শিবসাগরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১৪
Share: Save:

মাসখানেক আগের কথা। বন্যার জলে ডুবে হাহাকার চলছে যোরহাট, গোহপুর, ডিব্রুগড়, শিবসাগরে।

এখন সেখানেই একেবারে বিপরীত ছবি।

এক পশলা বৃষ্টির আশায় ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছে গোহপুর! খরাসদৃশ পরিস্থিতি উজানি অসমে। কয়েক দিন আগেও বৃষ্টি থামানোর আশায় রাতদিন প্রার্থনা চলেছিল উজানির জেলাগুলিতে। জলে ডুবেছিল বাড়িঘর, কৃষিজমি— সব কিছুই। প্রকৃতির খামখেয়ালিতে সেই একই এলাকায় এখন বৃষ্টির আশায় আকাশে চোখ রেখেছেন সাধারণ মানুষ। প্রার্থনা করছেন ভগবানের! আকাশের কোণে এক টুকরো কালো মেঘের অপেক্ষায় হা-পিত্যেশ করে বসে রয়েছেন সকলে। প্রকৃতির ভোলবদলে শোচনীয় অবস্থা চা বাগানগুলিরও। কয়েক দিন আগে অতিবৃষ্টি ও বন্যার জলে নষ্ট হয়েছে বছরের প্রথম পাতা তোলার সময়। নষ্ট হয়েছে গাছ। বিভিন্ন বাগানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখন খরার কোপে উৎপাদন কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

চা বিজ্ঞানীদের মতে, গাছের গোড়ায় জল জমে থাকা যেমন চা চাষের জন্য বিপজ্জনক, তেমনই অতিরিক্ত রোদেও চা গাছের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেটাই এখন হচ্ছে রাজ্যের চা বাগানে। ভাদ্রের গরম গুয়াহাটিতে ৩৯ ডিগ্রি, ডিব্রুগড়ে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছেছে। যা অস্বাভাবিক। কিছু কিছু এলাকায় খাপছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেও গরমে রাশ টানা যায়নি। চড়া রোদে ঝলসে যাচ্ছে চা গাছের পাতা।

টোকলাই চা গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানান, চা পাতার পক্ষে আদর্শ তাপমাত্রা হল ২৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু অগস্ট মাসে যোরহাট, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, লখিমপুর, শোণিতপুরে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠে যাওয়ায় চা পাতার সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ধাক্কা খেয়েছে। যার জেরে কমেছে চা উৎপাদন। এই একই ছবি উজানির প্রায় সব বাগানে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, এই মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কখনওই ৩৭ ডিগ্রির নীচে নামেনি।

অসম টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন রাজ বরুয়া জানান, কড়া গরমে গড়ে চা বাগানগুলিতে ২৫ শতাংশ উৎপাদন কম হয়েছে। বাগান মালিকদের মতে, কয়েক দশকের মধ্যে এমন উষ্ণ অগস্ট দেখা যায়নি। বিশেষ করে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি চলার মধ্যেই আচমকা প্রকৃতির চেহারায় এমন বদল অভাবনীয়। এমনকী নিম্নচাপের বৃষ্টিও অনুপস্থিত।

অবশ্য আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে আশায় বুক বেঁধেছেন চা উৎপাদকরা। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। চা বিজ্ঞানী ও চা উৎপাদকদের মতে, সেপ্টেম্বরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে ও রোদ স্বাভাবিক থাকলে অগস্টের ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া যাবে। চা সংস্থাগুলি জানায়, সেপ্টেম্বরেই রাজ্যে সব চেয়ে ভাল মানের সবুজ চা পাতা তৈরি হয়। তাই সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক আবহাওয়ার জন্য সব বাগানে চলছে প্রার্থনা। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে অসম ৬১০ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা উৎপাদন করেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drought Assam's tea estates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE