সিঁদুরখেলা: দিল্লিতে আরামবাগ পুজোসমিতির মণ্ডপে। —নিজস্ব চিত্র।
অষ্টমীর দুপুরে মন্দির মার্গের কালীবাড়ির পুজোমণ্ডপে মায়ের কাছে জোর ধমক খেল বছর পনেরোর অঙ্কিতা। দোষের মধ্যে সে বলে ফেলেছে, ‘‘ভোগ খিলাবে কখন, পুছে আসছি।’’ বছরের বাকি ক’দিন কন্যার মুখে এই ভাষা শুনতে অভ্যস্ত হলেও পুজোর দিনে তা মোটেই ভালো লাগেনি মায়ের।
নবমীর সন্ধ্যায় নয়ডা কালীবাড়ির দুর্গাপুজোর মাঠে মুখোমুখি কেএফসি এবং কলকাতা বিরিয়ানি হাউসের স্টল। কেএফসি-র সামনে থেকে বান্ধবীকে হাত ধরে টেনে বিরিয়ানি খাওয়াতে নিয়ে গেল পাঞ্জাবি পরিহিত তরুণ।
পুজোর চারদিন এই ভাবেই বাঙালিয়ানা ধরে রাখার লড়াই চলল রাজধানী শহরে।
কোথাও জিত। কোথাও হার। ময়ূর বিহার ফেজ থ্রি-র বঙ্গীয় ঐক্য সম্মিলনীর মাঠে যেমন। টিভিতে সপ্তকের বাংলা গান শুনে তাঁকে পুজোয় গাইতে নিয়ে এসেছিলেন কর্মকর্তারা। কিন্তু ‘পাবলিক’-এর চাপে সপ্তক তিন-চারটের বেশি বাংলা গান গাইতেই পারলেন না। মিন্টো রোডের কালীবাড়িতে আবার অন্য ছবি। প্রতি বছরই কলকাতার শিল্পীদের অনুষ্ঠান। কিন্তু প্রতি বছরের মতো এবারও সেখানে আসল আকর্ষণ সন্ধ্যার আরতি ও ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ।
আরামবাগ পুজোসমিতির মাঠে এ দুয়ের মেলবন্ধনের চেষ্টা করছিলেন মুসলম চিত্রকর। পূর্ব মেদিনীপুরের হাবিবচকের শিল্পী টি-শার্টের বুকেই পটচিত্র এঁকে বিক্রি করে বাঙালি-অবাঙালির নজর টানলেন।
দিল্লির বুকে বাঙালিয়ানা ধরে রাখার এই লড়াইটাই লড়ছে কাশ্মীরি গেটের দুর্গাপুজোও। এ বার ১০৮ বছরে পড়ল রাজধানীর প্রাচীনতম এই পুজো। বারবার ঠাঁই বদল হয়েছে। কিন্তু এখনও প্রতিমা বিসর্জন হয় গরুর গাড়িতেই। রেলের ডাক্তার হেমচন্দ্র সেন ১৯১০-এ রোশনপুরা কালীবাড়িতে এই পুজো শুরু করেছিলেন। তার পর ফতেপুরি মসজিদের কাছে লালা গিরিধারী লালের ধর্মশালা ঘুরে এখন পুজোর ঠিকানা আলিপুর রোডের বেঙ্গলি স্কুলে। ব্রিটিশ জমানায় বাঙালিরা সরকারি চাকরি করতে দিল্লিতে এসে উঠতেন। এখন কর্পোরেট জগতে কাজ করতে আসা বাঙালিরাও ব্যতিক্রম নন। তাঁদের হাত ধরে নয়ডার ১০০ নম্বর সেক্টরে লোটাস ব্যুলেভার্ড সাংস্কৃতিক সমিতি এ বছরই নতুন দুর্গাপুজো শুরু করল।
পেট পুজোর লড়াইটাও কম নয়। নবরাত্রিতে উত্তর ভারতীয়রা উপবাস বা ব্রত করেন। অনেক রেস্তোরাঁতেই আমিষ মেলে না। রসনা তৃপ্তিতে তাই চারদিন দুপুরে খিচুড়ি বা পোলাওতে পুজোর ভোগ আর সন্ধ্যায় অস্থায়ী ফুড-স্টলেই ভিড় জমে বেশি। আরামবাগের পুজোয় তাই নামী বাঙালি রেস্তোরাঁর আদলে নামকরণ করে এগরোল-বিরিয়ানির স্টল ‘আহ, কলকাতা!’-য় দেদার ভিড়। আবার চিত্তরঞ্জন পার্কে বাসস্টপ দখল করে ছাউনির তলাতেই কষা মাংস-পরোটার আয়োজন।
খালি পেটে যে লড়াই হয় না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy