রাজ্যের সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি ছিলই। এ বার বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বিক্রির প্রতিযোগিতায় নামল ডিভিসি-ও। চলতি সপ্তাহে রাজ্যের সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির এক প্রতিনিধি দল ঢাকা যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবে দলটি।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি অবশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেই এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে ইতিমধ্যেই সংস্থাটির এক দল কর্তা ঢাকায় গিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রয়োজনে আরও বেশি বিদ্যুৎ বিক্রিতেও তাঁরা রাজি বলে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছেন।
ডিভিসি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমাদের ১২০০ মেগাওয়াটের মতো উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ রয়েছে। দেশের বাজারে তা কেনার খদ্দের নেই। আর পেলেও তার ভাল দাম মিলবে না। যে কারণে বাংলাদেশকে ওই বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চাইছি।’’ তাঁর দাবি, বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদ্যুৎ গেলে তা সস্তা হবে। আখেরে লাভ হবে বাংলাদেশ সরকারেরই।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বিক্রি নিয়ে জোরদার প্রতিযোগিতা হওয়ার সম্ভাবনা ডিভিসি ও পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের মধ্যে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ যখন বিদ্যুৎ কেনার জন্য ভারতের বাজারে দরপত্র ছেড়েছিল, তখন ডিভিসি তাতে অংশগ্রহণ করেনি। এনটিপিসি এবং রাজ্যের বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম দরপত্র জমা দেয়। এ বার অংশ নিতে চায় ডিভিসি-ও। কারণ, ১২০০ মেগাওয়াট উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের পাশাপাশি এ মাসেই ডিভিসি-র বোকারোতে ৫০০ মেগাওয়াটের আরও একটি ইউনিট চালু হবে। সেই বিদ্যুৎ কেনার খদ্দের সংস্থাটির হাতে নেই। যে কারণে বাংলাদেশের বাজার ধরার প্রতিযোগিতায় তারাও মাটি কামড়ে রয়েছে। যদিও ডিভিসি-র পরিচালন পর্ষদে রাজ্যের প্রতিনিধি আছে। সংস্থার মালিকানার একটি অংশও রয়েছে রাজ্য সরকারের হাতে।
বিদ্যুৎ শিল্প মহলের একাংশের মতে, বাংলাদেশে এখন সার ও ওষুধ শিল্পে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। বিশেষ করে বহু চিনা সংস্থা সে দেশে শিল্প গড়ছে। নতুন শিল্পের চাহিদা মেটাতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন, তা নেই। শিল্প মহলের বক্তব্য, বাংলাদেশে অধিকাংশ ছোট ও মাঝারি কারখানা ডিজেল চালিত বড় জেনারেটর ব্যবহার করে। হাসিনা সরকার দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন চাইছে। ভারতের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ওই কাজে সাহায্য করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডিভিসি-র এক কর্তা জানান, কেন্দ্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের সাবস্টেশন বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা সাবস্টেশন পর্যন্ত যে ট্রান্সমিশন লাইন টানা হয়েছে, সেই তার দিয়ে এখন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যাচ্ছে। ওই লাইন দিয়ে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠানো যাবে। কর্তার দাবি, বাংলাদেশ রাজি হলে, ওই পথেই বিদ্যুৎ রফতানি হবে।