E-Paper

ফ্রান্স সফরের আগে কাঁটা সেই মণিপুরই

১১ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মণিপুর নিয়ে আলোচনা বিষয়ক প্রস্তাব আসে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন শিরোনামে এই আলোচনা হবে বলে স্থির হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ০৬:২১
manipur.

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় উঠল মণিপুরের হিংসা পরিস্থিতি। —ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চূড়ান্ত অস্বস্তির মধ্যে ফেলে তাঁর ফ্রান্স সফরের ঠিক আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় উঠল মণিপুরের হিংসা পরিস্থিতি। ভারত চেষ্টা করেও এই আলোচনা থামাতে পারেনি। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের জানানো হয়েছিল বিষয়টি ‘একেবারেই অভ্যন্তরীণ’। আজ এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিদেশসচিব বিনয় কোয়াত্রাও একই কথা বলেছেন। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি বলেই কূটনৈতিক সূত্রের খবর।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকঁর-র আমন্ত্রণে বাস্তিল দিবসে বিশেষ অতিথি হয়ে দু’দিনের সফরে বৃহস্পতিবার প্যারিস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ফেরার সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এক দিনের সফর সারবেন। দু’দেশের রাষ্ট্রনেতার সঙ্গেই মোদীর ‘ব্যক্তিগত রসায়ন’ দেশকে গৌরবান্বিত করেছে বলে আজ সাংবাদিক বৈঠকে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদেশসচিব বিনয় কোয়াত্রা। কিন্তু যে অস্বস্তি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট তৈরি করল, তার কোনও বিস্তারিত ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই।

আজ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিষয়টি তুলে তির ছোড়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দিকে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দাবি, ‘‘ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আজ মণিপুর নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। ভারতীয় বিদেশসচিব ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের বলেছেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কথাটা ঠিকই। কিন্তু এই অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চুপ। ভারতীয় সংসদে এ নিয়ে কোনও আলোচনায় তিনি অংশগ্রহণ করবেন কি না তা বলা কঠিন।’’

১১ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মণিপুর নিয়ে আলোচনা বিষয়ক প্রস্তাব আসে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন শিরোনামে এই আলোচনা হবে বলে স্থির হয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে যে ছ’টি গোষ্ঠী এই বিষয়ে প্রস্তাব এনেছে তারা মণিপুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বিজেপি সরকারকে দায়ী করেছে। বলা হয়েছে শাসক দল বিজেপির জাতীয়তাবাদী হুঙ্কারের ঘোর নিন্দা করা উচিত। কারণ এই বিবৃতিগুলি আরও হিংসার ইন্ধন জোগাচ্ছে।

কোভিড অতিমারির সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা করছেন, তখন তাঁর নাক-মুখ ঢাকা ছিল গলায় ঝোলানো মণিপুরী চাদরে। মণিপুরে হিংসা-সংঘর্ষের পরে কয়েক মাস কেটে গেলেও প্রধানমন্ত্রী মুখ বুজেই আছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর রেডিয়ো-বার্তা ‘মন কি বাত’-এর অনুষ্ঠানে দাবি উঠেছিল, নরেন্দ্র মোদী সেখানে ‘মণিপুর কি বাত’ করুন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে হিংসা ঠেকাতে কেন্দ্র বা রাজ্যের বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দেওয়া দূরে থাক, মণিপুরের মানুষের কাছে শান্তির আহ্বানও জানাননি।

বিজেপি শাসিত মণিপুরে মে মাসের গোড়া থেকে মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত চলছে। সরকারি হিসেবেই একশোর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরছাড়া। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে রাজ্যের মন্ত্রীদের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমাধান সূত্র খুঁজে বার করতে পারেননি। কংগ্রেসের দাবি, অমিত শাহ মণিপুর ঘুরে এসে বিজেপির হয়ে জনসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি মণিপুর সামলানোর দায়িত্ব হিমন্তবিশ্ব শর্মার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী একের পর এক বিদেশ সফর নিয়ে ব্যস্ত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Manipur Violence Manipur European Parliament

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy