Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ভাটার টান কি পুজোর বিজ্ঞাপনেও

কলকাতার একাধিক বিজ্ঞাপন নির্মাতা জানাচ্ছেন, পুজোর বিজ্ঞাপনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে ফ্যাশন, গয়নাগাটি, ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন। কিন্তু এ বার এই সব ক’টি ক্ষেত্রেই নানা বড় ব্র্যান্ড বাজেট কমাতে চেয়েছে বলে জানাচ্ছেন একাধিক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্তারা।

ভাটার টান বিজ্ঞাপনে। ছবি: শাটারস্টক।

ভাটার টান বিজ্ঞাপনে। ছবি: শাটারস্টক।

সুজিষ্ণু মাহাতো
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

প্রায় দু’দশক পেরোনো ‘‘সপ্তমীতে প্রথম দেখা, অষ্টমীতে হাসি’’-ই হোক বা বছরখানেক আগেক সুজয়দা-পুঁচকির প্রেম— পুজোর স্মৃতি মানেই মনে পড়ে পুজোর বিজ্ঞাপনের কথা। তবে এ বছর সেই পুজোর বিজ্ঞাপনের বাজারেও ভাটার টান দেখা যাচ্ছে জানাচ্ছেন একাধিক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেক ব্র্যান্ডই এ বার পুজোর বিজ্ঞাপনে খরচ কমিয়েছে। দেশজুড়ে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতির অভিযোগ উঠেছে, সেটাই কি এর কারণ, উঠেছে প্রশ্ন।

কলকাতার একাধিক বিজ্ঞাপন নির্মাতা জানাচ্ছেন, পুজোর বিজ্ঞাপনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে ফ্যাশন, গয়নাগাটি, ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন। কিন্তু এ বার এই সব ক’টি ক্ষেত্রেই নানা বড় ব্র্যান্ড বাজেট কমাতে চেয়েছে বলে জানাচ্ছেন একাধিক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্তারা। বিজ্ঞাপনস্রষ্টা শৌভিক মিশ্র বলছেন, ‘‘গত বছর জাতীয় স্তরের একাধিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলার বিভিন্ন তারকাদের নিয়ে বেশ খরচা করে টেলিভিশনের জন্য বিজ্ঞাপন করেছিল। এ বার পুজোর বিজ্ঞাপনের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ কেবল হোর্ডিং দিয়েই প্রচার করেছে।”

একাধিক বিজ্ঞাপন সংস্থা সূত্রে খবর, একটা টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের জন্য মোটামুটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। তবে এই বাজেটের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। কয়েক কোটি টাকা খরচ করেও টেলিভিশন বিজ্ঞাপন তৈরি হয়। বিজ্ঞাপন তৈরি করতে যেমন খরচ হয়, তেমনই সেই বিজ্ঞাপন টেলিভিশনের প্রাইম টাইমে চালাতেও মোটা খরচ রয়েছে। তাই সেই খরচ বাঁচাতে অনেক ব্র্যান্ডই টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন করেনি।তাতে পুরো খরচটাই বেঁচে গিয়েছে। অনেকে সেই বাজেট কমিয়ে ২৫ লক্ষে নামিয়ে এনেছে।

বিজ্ঞাপন নির্মাতা সুপর্ণকান্তি দাস জানাচ্ছেন, টিভি বিজ্ঞাপনের খরচ কমাতে লোকেশনে গিয়ে শুটিং না করে অ্যানিমেশনের ব্যবহার হচ্ছে। টিভির চেয়ে অনেক কম খরচে নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে পৌঁছতে অনেক ব্র্যান্ড আবার ডিজিটালকেই মূল মাধ্যম হিসেবে ধরে সেখানেই বিজ্ঞাপন করছে। তিনি বলেন, “কেবল এ বছর নয়, গত দু-তিন বছর ধরেই এটা দেখা যাচ্ছে।” পুজোর সময়টা বিজ্ঞাপনদাতাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে অনেক ব্র্যান্ড পুজোর সময়ে বিজ্ঞাপনে কার্পণ্য করছে না, কিন্তু তাদের গোটা বছরের বাজেটের বেশিরভাগটাই ব্যয় করছে এই সময়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য। “অনেক ব্র্যান্ডই পুজোকে লক্ষ করে বছরের অন্য সময়ের বিজ্ঞাপনের বাজেট কমিয়ে দিচ্ছে”, বলছেন এক বিজ্ঞাপন নির্মাতা।

ব্যবসায় ভাটা, তবে তা মন্দা কাটাতে আবার প্রচারকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন গাড়ি শিল্পের একাংশ। উৎসবের মরসুমে গাড়ির বিক্রি অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বাড়ে। কিন্তু বছরখানেক ধরেই গাড়ির বিক্রি কমছে। অনেকে গাড়ির খোঁজ নিলেও শেষপর্যন্ত কিনছেন না। সেই ইচ্ছেকে কেনায় বদলে দিতে ধারাবাহিক বিজ্ঞাপনী প্রচার তো চালাচ্ছেই অনেক সংস্থা, সেই সঙ্গে অনেকে প্রচারে বাড়তি জোরও দিচ্ছে।

পুজোর শহরে অবশ্য বিজ্ঞাপনের ‘খামতি’ চোখে পড়ছে শহর ঘুরলেই। যে কলকাতায় বাঁশের কাঠামো ভরে যায় নানা ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে, এ বার সেখানে নানা জায়গাতেই বাঁশের কাঠামো খালি পড়ে রয়েছে। নেই কোনও বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং। এমন ছবি দেখা যাচ্ছে শহরের নানা জায়গাতেই। সুপর্ণকান্তি বলছেন, “যে কোনও মন্দার ক্ষেত্রে সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিজ্ঞাপন শিল্প। কারণ মন্দার সময় সব ব্র্যান্ড প্রথমে বিজ্ঞাপনের খরচটাই কাটছাঁট করে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Advertising Durga Puja Advertising Durga Puja 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE