Advertisement
E-Paper

মৃত ১৪ শ্রমিক, শোকাচ্ছন্ন গ্রাম

দৃশ্যগুলি আপাত স্বাভাবিক। বেশিরভাগ বাড়ির উঠোনে ঘুরছে মুরগি। মাচায় ঝিঙে ফুল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। শুধু ওই বাড়িগুলির বাসিন্দাদের দেখলে বোঝা যায়, কোথায় যেন তাল কেটে গেছে। দুদিন আগেও যে বাড়িতে ছেলে আসবে বলে আনন্দে মশগুল থাকতেন মা বাবা এবং আত্মীয় স্বজনরা, আজ সে বাড়িই ডুবে আছে বিষাদে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩০

দৃশ্যগুলি আপাত স্বাভাবিক। বেশিরভাগ বাড়ির উঠোনে ঘুরছে মুরগি। মাচায় ঝিঙে ফুল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। শুধু ওই বাড়িগুলির বাসিন্দাদের দেখলে বোঝা যায়, কোথায় যেন তাল কেটে গেছে। দুদিন আগেও যে বাড়িতে ছেলে আসবে বলে আনন্দে মশগুল থাকতেন মা বাবা এবং আত্মীয় স্বজনরা, আজ সে বাড়িই ডুবে আছে বিষাদে।

সোমবার মেঘালয়ের পুর্ব জয়ন্তিয়া জেলার সাংফুং থানার লাটুংবাই এলাকার মেরিয়ান গ্রামে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় ধুবুরি জেলার গোলকগঞ্জ থানা এলাকার চাপর-বালাজান, উচিতা, দক্ষিণ রায়পুর, উত্তর রায়পুর, এবং সাঁতসেওরা গ্রামের বাসিন্দা মোট ১৪ জন শ্রমিকের। গ্রামগুলিতে তাই কান্নার রোল। সোমবার রাত থেকে মৃতদের পরিবারের কারও রান্না ঘরে আগুন জ্বলেনি। গোটা গ্রামে শোকের আবহ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন মাস আগে ধুবুরি জেলার গোলকগঞ্জ থানা এলাকার ওই পাঁচটি গ্রামের মোট ২৩ জন শ্রমিক স্থানীয় এক ঠিকাদারের মাধ্যমে মেঘালয়ের লাটুংবাই এলাকার মেরিয়ান গ্রামে সেতু তৈরির কাজ করতে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ওই ১৪ জন শ্রমিক এক জায়গায় একটি ক্যাম্পে থাকতেন। গত রবিবার রাতে ওই শ্রমিকরা রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরেন। সোমবার ওই ক্যাম্পের মধ্যেই উদ্ধার হয় ১৪ জন শ্রমিকের মৃতদেহ। এর পরেই সোমবার সন্ধ্যায় মেঘালয় পুলিশের পক্ষ থেকে ধুবুরি জেলা পুলিশকে জানানো হয় ওই খবর। খবর পেয়েই ধুবুরি জেলা পুলিশ এবং মৃতদের পরিবারের লোকেরা ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

ধুবুরি পুলিশ সুপার মৃদুলানন্দ শর্মা জানান, “প্রাথমিক তদন্তের পর মেঘালয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শ্রমিকরা পাশের জঙ্গল থেকে একটি বিশেষ ধরনের ফল পেরে এনে চাটনি তৈরি করে খান। খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে ওই শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’ পুলিশ সুপার জানান, অসম পুলিশের উপস্থিতিতে মৃতদেহগুলির ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। অসম পুলিশও পৃথক ভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আজ, বুধবার ভোরের মধ্যে মৃতদেহগুলি গোলকগঞ্জে এসে পৌঁছবে।

অসম পুলিশ এবং মেঘালয় পুলিশের এই বক্তব্য অবশ্য মেনে নিতে চাইছেন না মৃতদের পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, মেঘালয়ের দুষ্কৃতীরা তাঁদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। মেঘালয় পুলিশ ঘটনাটি ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। গোলকগঞ্জের বিধায়ক তথা অসম সরকারের সংসদীয় সচিব আবু তাহের ব্যাপারি বলেন, “মেঘালয় পুলিশ ঘটনাটি চাপা দিতে চাইছে। শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। ঘটনার সিবিআই তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছি।”

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম, মহি হুসেইন (৪০), জহুরুল হক (১৮), সহিদুর রহমান(১৯), মজনু শেখ(১৮) সফিকুল হক(১৯, জহিরুল ইসলাম (২০)। এদের ৬জনের বাড়ি ধুবুরি জেলার গোলকগঞ্জ থানা এলাকার চাপর-বালাজান গ্রামে। কারিমুল হক(১৯), মৃনাল আলি(১৭), এনামুল হকের(২৬) বাড়ি ধুবুরি জেলার গোলকগঞ্জ থানা এলাকার উচিতা গ্রামে। মহিবুল হক(১৮), মনসের আলি (৩৬), মহাবুল আলিদের (২৫) বাড়ি ধুবুরি জেলার গোলকগঞ্জ থানা এলাকার দক্ষিণ রায়পুর গ্রামে। অমল মনি দাসের (৩৪) বাড়ি গোলকগঞ্জ থানা এলাকার উত্তর রায়পুর গ্রামে। আর মজিদ আলি’র (১৯) বাড়ি গোলকগঞ্জ থানা এলাকার সাতসেওরা গ্রামে।

Food poisoning meghalaya dhuburi assamese labours 14 dead national news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy