Advertisement
১৯ মে ২০২৪
ICSE Exam Result

আইসিএসই-তে ৯৪.৭% ‘বাবা হারানো’ রোদ্দুরের

১৪ বছর লড়াইয়ের পরে আরণ্যক (রোদ্দুর) বসুর মা, ভূগোলের শিক্ষিকা স্বচ্ছতোয়া ব্রহ্মচারীর গলা এখন আর বুজে আসে না।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ০৮:৪৩
Share: Save:

বাবাকে ‘ঘোড়া’ বানিয়ে, তাঁর পিঠে বসে ছাদময় ঘুরে বেড়াত রোদ্দুর। এক দিন কালো ঘন মেঘ এসে ছেয়ে ফেলে রোদ্দুর ও তার মা স্বচ্ছতোয়ার পৃথিবী। সোমবারের সকালে সেই মেঘ সরে ঝলকে উঠল একচিলতে আলো। আইসিএসই-তে ৯৪.৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছে রোদ্দুর।

গলব্লাডার অপারেশন করিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তার মা। সেখান থেকে ফোনে ভেসে আসে স্বচ্ছতোয়ার ক্ষীণ কণ্ঠ, “বাবার মতোই প্রকৃতিকে ভালোবাসে রোদ্দুর। ওর বাবা পাখি দেখতে ভালোবাসত। রোদ্দুরেরও এই বয়সে পাখি দেখার নেশা হয়েছে। বায়োলজি পড়তে চায়।”

১৪ বছর আগে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে আচমকাই উবে যান ভূগোলের শিক্ষক সেই বাবা, সৌম্যজিৎ বসু। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবরের সেই দিনটা ছিল কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। সৌম্যর সঙ্গী ছিলেন তাঁর বন্ধু, রাজ্য পুলিশের ইনস্পেক্টর পার্থ বিশ্বাস। সেই রাতেই ফোন আসে সৌম্যর বাড়িতে। জানা যায়, মাওবাদীরা তুলে নিয়েছে দুই বন্ধুকে। মাওবাদী নেতাদের দাবি ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তে এসেছিলেন পার্থ, সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে।

সেই রাতের পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। শুরু হয় রাজ্য জুড়ে হইচই। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। কিন্তু আঁতিপাতি করে খুঁজেও পাওয়া যায়নি তাঁদের। প্রায় সাত মাস পরে তার পরের বছর, ৩৪ বছরের বাম শাসন শেষে যে সকালে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার খবর আসে, ঠিক তার আগের রাতে মিলেছিল দুই বন্ধুর পচা-গলা দেহ। মা ও রোদ্দুরের সঙ্গে ডিএনএ মিলে যাওয়ার পরে শেষকৃত্য হয় সৌম্যর। ডুকরে উঠেছিলেন মা সুমিতা বসু, “কী দোষ করেছিল ছেলেটা?”

১৪ বছর লড়াইয়ের পরে আরণ্যক (রোদ্দুর) বসুর মা, ভূগোলের শিক্ষিকা স্বচ্ছতোয়া ব্রহ্মচারীর গলা এখন আর বুজে আসে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ICSE ICSE and ISC Result
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE