Advertisement
E-Paper

ট্রেনের ধাক্কা গাড়িতে, ঝাড়খণ্ডে মৃত ১৪

রেল লাইনের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মাংসপিণ্ড। টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ— থেঁতলে যাওয়া মাথা, কাটা হাত, ক্ষতবিক্ষত পা। থকথকে রক্ত চারপাশে। গত রাতে ঝাড়খণ্ডের রামগড়ের প্রত্যন্ত ওই এলাকায় ঘন অন্ধকারে সেগুলি দেখে প্রথমে বোঝা যাচ্ছিল না প্রহরী-বিহীন লেভেল ক্রসিংয়ে দ্রুতগামী ট্রেনের সঙ্গে গাড়ির ধাক্কায় ঠিক কত জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৪০
দুমড়ে যাওয়া গাড়িটি। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

দুমড়ে যাওয়া গাড়িটি। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

রেল লাইনের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মাংসপিণ্ড। টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ— থেঁতলে যাওয়া মাথা, কাটা হাত, ক্ষতবিক্ষত পা। থকথকে রক্ত চারপাশে। গত রাতে ঝাড়খণ্ডের রামগড়ের প্রত্যন্ত ওই এলাকায় ঘন অন্ধকারে সেগুলি দেখে প্রথমে বোঝা যাচ্ছিল না প্রহরী-বিহীন লেভেল ক্রসিংয়ে দ্রুতগামী ট্রেনের সঙ্গে গাড়ির ধাক্কায় ঠিক কত জনের মৃত্যু হয়েছে।

আজ সকালে জেলার পুলিশ সুপার এম তামিলভানান জানান, ভুরকুন্ডার কাছে ওই ক্রসিংয়ে হাওড়া-ভূপাল এক্সপ্রেসের সঙ্গে গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন ১৪ জন। দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে তিন জন পুরুষ, চার জন মহিলা ও সাতটি শিশু রয়েছে। তাদের বয়স ৬ থেকে ১২-র মধ্যে। সকলে একই পরিবারের সদস্য ছিলেন।

গত কাল রাত দশটা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে যাত্রীবোঝাই গাড়িটি প্রায় এক কিলোমিটার দুরত্ব রেল লাইনের উপর দিয়ে ঘষে এগিয়ে গিয়েছিল। উদ্ধারকারী দল গ্যাস-কাটার দিয়ে গাড়িটি রেলের ইঞ্জিন থেকে কেটে বের করে। গাড়িটির পিছন দিকের দরজা গুড়িয়ে গিয়েছিল। পিছনের আসনের বসে থাকা শিশুগুলি রেল লাইনের উপর, পাশে পড়ে যায়। সামনের দিকের আসনে বসে থাকা যাত্রীদের ‘দেহ’ দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়ির ভিতরে আটকেছিল।

দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই দীনেশ খালকোর বাড়ি। তিনি বলেন, ‘‘রাত সাড়ে দশটা নাগাদ রেল লাইনের দিক থেকে আসা প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ভেবেছিলাম কোনও ট্রেন উল্টে গিয়েছে বা দু’টি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। গ্রামের সবাই ছুটে যাই। কী হয়েছে সেটা প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না। রক্তস্রোত দেখে দিশাহারা হয়ে গিয়েছিলাম।’’

খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। সেখানে যান রামগড় জেলা প্রশাসনের কর্তারা। পুলিশ জানায়, মৃতদের এক জনের পকেটে থাকা আধার কার্ড দেখে নাম-ঠিকানা জানা যায়। তাঁর নাম ছিল জীবন ঠাকুর। বাড়ি রামগড়ের ভদানিনগর থানা এলাকার অরমাদাগ গ্রামে। গ্রামটি দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে। খবর যায় সেই গ্রামে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন জীবন ঠাকুরের ভাই অজয়। পরিজনদের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সংঘর্ষের পর। ছবি: চন্দন পাল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জীবন ঠাকুরই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গাড়িটি তার নিজের। আত্মীয়-পরিজন মিলে রাজরাপ্পায় এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। গত কাল বিকেলে অনুষ্ঠান সেরে সকলে গ্রামে ফিরছিলেন।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, রক্ষীবিহীন ওই ক্রসিংয়ে রেল লাইনে কিছুটা বাঁক রয়েছে। গাড়ি যাতায়াতের রাস্তার চারপাশ সেখানে ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা। সেই কারণে রেললাইনের পুরোটা ঠিকমতো দেখা যায় না। বোঝা যায় না ট্রেন আসছে কি না। পুলিশের অনুমান, লাইন পেরনোর সময় আচমকা হুড়মুড়িয়ে দ্রুতগতির ট্রেনটি চলে আসে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই রাস্তাটি আশপাশের গ্রামে যাওয়ার জন্য অনেকে ব্যবহার করেন। আগেও সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেল দফতরকে ওই লেভেল ক্রসিংয়ে রক্ষী মোতায়েন করার কথা বারবার বলা হলেও লাভ হয়নি।

অভিযোগ মানতে চাননি ধানবাদ রেল ডিভিশনের সিনিয়র ডিভিশনাল কর্মাসিয়াল ম্যানেজার আশিস কুমার। তিনি বলেন, ‘‘যে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি গ্রামবাসীরাই তৈরি করেছেন। ওই জায়গা থেকে এক কিলোমিটার দূরে রেলের লেভেল ক্রসিং রয়েছে। সেখানে রক্ষীও রয়েছেন। সেই রাস্তা দিয়ে গাড়িটি গেলে দুর্ঘটনা ঘটত না।’’ দুর্ঘটনার জেরে গত রাতে ওই লাইনে কয়েক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিজনদের ১ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

train-car collission jharkhand death Howrah-Bhopal Express
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy