Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তাল ঠুকছেন নিতিনও, মোদীই ভরসা উদ্ধবের

চাপের খেলায় জোট ভেঙেছে, সরকার গড়ার নিশ্চিত সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু এখন ভোটের পরেও সেই চাপের খেলাই চলছে বিজেপি আর শিবসেনার মধ্যে। আবার বিজেপির সমস্যা বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের লড়াইয়ে এ বার হাজির নিতিন গডকড়ীও। আজই মুম্বই এসে মহারাষ্ট্রের নতুন মুখ্যমন্ত্রী স্থির করার কথা ছিল রাজনাথ সিংহের। কিন্তু সেই সফর দীপাবলি পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিজেপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি ছেড়ে শিবসেনা অন্য দফতরে সন্তুষ্ট হলে ভাল, না-হলে তারা একাই সরকার গড়তে এগোবে।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
মুম্বই শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৬
Share: Save:

চাপের খেলায় জোট ভেঙেছে, সরকার গড়ার নিশ্চিত সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু এখন ভোটের পরেও সেই চাপের খেলাই চলছে বিজেপি আর শিবসেনার মধ্যে। আবার বিজেপির সমস্যা বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের লড়াইয়ে এ বার হাজির নিতিন গডকড়ীও।

আজই মুম্বই এসে মহারাষ্ট্রের নতুন মুখ্যমন্ত্রী স্থির করার কথা ছিল রাজনাথ সিংহের। কিন্তু সেই সফর দীপাবলি পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিজেপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি ছেড়ে শিবসেনা অন্য দফতরে সন্তুষ্ট হলে ভাল, না-হলে তারা একাই সরকার গড়তে এগোবে। আর বিজেপি নেতৃত্বের এই চাপের মুখে মোদীর ওপরেই ভরসা করছেন শিবসেনা নেতৃত্ব। দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সরাসরি কথা বললে সমস্যা মিটে যাবে বলে মনে করছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে।

হরিয়ানায় নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হয়ে যখন শপথের দিন স্থির হয়ে গেল, তখন মহারাষ্ট্রে কেন অচলাবস্থা কাটছে না?

বিজেপি সূত্রের মতে, এর কারণ অনেকগুলি। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার বাইরে থেকে সমর্থন দেওয়ায় বিজেপি অনায়াসেই এখন সরকার বানাতে পারে। তার জন্য আর কোনও কিছুর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এনসিপিকে সঙ্গে নিলে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির দায়ও নিতে হবে। তাতে সঙ্ঘের যেমন আপত্তি রয়েছে, সব দিক ভাবতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকেও। এই কারণেই শিবসেনার সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হয়েছে। কিন্তু শিবসেনা চাইছে ১৯৯৫ সালের সমীকরণ মানা হোক। সে বার সরকারে শিবসেনার মনোহর জোশী ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুন্ডে। কিন্তু বিজেপির বক্তব্য, তখন মাত্র দশটি আসনে তারা পিছিয়ে ছিল শিবসেনার থেকে। আর এ বার বিজেপির আসন সংখ্যা শিবসেনার দ্বিগুণ। এই অবস্থায় উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ শিবসেনাকে দেওয়া যাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে থাকা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস আজ বলেন, “বাকি দফতর নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু উপমুখ্যমন্ত্রী পদ শিবসেনাকে দিতে পারব না। শিবসেনার বোঝা উচিত, মহারাষ্ট্রে আমরাই এখন বড় দল।”

নতুন সঙ্কট তৈরি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়েও। ফডণবীসকে মুখ্যমন্ত্রী করার বিষয়টি এক প্রকার পাকাই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন নিতিন গডকড়ীকে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্যও চাপ আসছে। দেবেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী করায় ঘোরতর আপত্তি রয়েছে গডকড়ীর। দুই নেতাই নাগপুরের। দেবেন্দ্র মুখ্যমন্ত্রী হলে নাগপুরে নিজের রাজ্যপাট চুরমার হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা গডকড়ীর। দিল্লি থেকে গডকড়ী আজ সোজা পৌঁছে যান নাগপুরে। সেখানে জনা ৪০ বিধায়ক তাঁর বাড়িতে গিয়ে আনুগত্য দেখানোর পরে গডকড়ী এ বার নিজের শক্তি দেখানোর সুযোগও পেয়ে গেলেন। গডকড়ীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান পওয়ারও। শরদ পওয়ারের সমর্থন আদায়ের নেপথ্যেও রয়েছেন গডকড়ী। এ দিনও অবশ্য গডকড়ী মুখে বলেন, “আমি দিল্লিতেই বেশ আছি, মহারাষ্ট্রে আসার কোনও ইচ্ছে নেই।” কিন্তু গডকড়ীর অনুমোদন ছাড়া এক দল বিধায়ক তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চেয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির অনেকেই এটা মানতে নারাজ। সরকার গড়ার আগে এই বড় সমস্যাটিও সুষ্ঠু ভাবে মেটাতে হবে বিজেপিকে। ধামা চাপা দিলে তার ফল যে সুদূরপ্রসারী হতে পারে, এই আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। বিজেপি সূত্রের কথায়, মূলত দেবেন্দ্রর নামে সম্মতি আদায় করতেই গত কাল সকালে অমিত শাহ গডকড়ীর দিল্লির বাড়িতে চলে যান। কিন্তু তার পরেও এ সব ঘটল।

আবার শিবসেনা শেষ পর্যন্ত বিজেপির শর্ত মানতে রাজি না হলে একার জোরেই সরকার গড়তে হবে বিজেপিকে। ভাবমূর্তির কথা ভেবে যদি পওয়ারের সমর্থন নেওয়া না যায়, তা হলে রাজ ঠাকরের একমাত্র বিধায়ক-সহ যত জন সম্ভব নির্দলের সমর্থন আদায় করতে চাইছে বিজেপি। সেই প্রক্রিয়াতেও সময় লাগছে। মহারাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ওম মাথুর বলেন, “এখনও পর্যন্ত ১৩৮ জন বিধায়কের নিশ্চিত সমর্থন রয়েছে আমাদের সঙ্গে। রাজ্যপাল সব থেকে বড় দল হিসাবে আমাদেরই সরকার গড়তে ডাকবে। তার পর বিধানসভায় আমরা ঠিকই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারব।” দীপাবলির পর আগামী সপ্তাহেই নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার তোড়জোড় করছে বিজেপি।

এ ক্ষেত্রে বিজেপির কৌশল কী?

বিজেপির এক নেতা বলেন, অন্য দলের অনেক বিধায়কই এখন বিজেপিতে আসতে চান। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য এখনও কিছুটা সময় রয়েছে। সেই সময় অনেকে গরহাজির থাকতে পারেন অথবা সরাসরি সঙ্গে আসতে পারেন। অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়ে পরে উপনির্বাচনে তাঁদের ফের জিতিয়ে আনা যেতে পারে।

সে ক্ষেত্রে বিজেপিকে এনসিপির সমর্থন যেমন নিতে হবে না, শিবসেনার বোঝাও বইতে হবে না। আর এই কৌশল সফল না হলে হাতের পাঁচ এনসিপি তো রয়েইছে। গরিষ্ঠতা প্রমাণের দিনও তারা গরহাজির থেকে সাহায্য করতে পারে।

কিন্তু আগামী পাঁচটা বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে চাইছেন না শিবসেনা প্রধান উদ্ধব। সরকারের স্থায়িত্বের কথা ভেবে শিবসেনাকে একেবারে ফেলে দিতে পারছে না বিজেপিও। কিন্তু শিবসেনাকে গুরুত্বহীন করে রাখতে মনপসন্দ দফতরও দিতে রাজি হচ্ছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার বদলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীর ওপরেই ভরসা করতে চাইছেন উদ্ধব। দিল্লি গিয়ে আলোচনায় বসতে চাইছেন তাঁর সঙ্গে। তার আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ‘দীপাবলির শুভেচ্ছা জানাতে’ দলের দুই নেতাকে তিনি দিল্লি পাঠাচ্ছেন। শনিবার মুম্বইয়ে একটি অনুষ্ঠানে আসার কথা প্রধানমন্ত্রীর। মোদীর সেই সফরের দিকেও তাকিয়ে উদ্ধব।

বালাসাহেব ঠাকরে অবশ্য দিল্লি যাওয়া পছন্দ করতেন না। বিজেপি নেতারাই তাঁর বাসভবন ‘মাতোশ্রী’তে এসে দেখা করতেন। কিন্তু উদ্ধব জানেন, বিজেপিতে ঘরানা বদলেছে। ফল প্রকাশের পর উদ্ধবই মোদী ও অমিত শাহকে ফোন করে আলোচনার দরজা খুলেছিলেন। এর পরেও বিজেপির কাছে সেই গুরুত্ব না পাওয়ায় উদ্ধব এখন একটা সম্মানজনক পথের সন্ধান খুঁজছেন। বরাবর ‘একলা চলো’ নীতিতে বিশ্বাসী মোদী তাঁকে কতটা গুরুত্ব দেন, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE