খেলায় মেতে। হাইলাকান্দির ইন্ডোর স্টেডিয়ামে গৌতম রায়। — নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিন আগেও তিনি ছিলেন রাজ্যের ব্যস্ত মন্ত্রী। নাম উল্লেখ করার আগে লেখা হতো ‘দাপুটে নেতা’। এখন আর গৌতম রায় মন্ত্রী নন, নন বিধায়কও। এমনকী অসম ক্রিকেট সংস্থার সভাপতির পদও খোয়াতে হয় দিন-কয়েক আগে।
তাই তাঁর হাতে এখন অফুরন্ত সময়। নিজের খেয়ালখুশিমতো ঘুরে বেড়ান। কখনও কলকাতা, কখনও শিলচর। আর নিজের শহর হাইলাকান্দিতে থাকলে পরিচিত মহলে ক্যারামও খেলেন।
তিন দশক দাপিয়ে বেড়ানোর পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী ভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে? গৌতম রায়ের জবাব, ‘‘দিব্যি আছি। প্রতি দিন ভোরে প্রাতঃভ্রমণ করছি, স্নান করে ঠাকুরের পুজো দিচ্ছি।’’ ফের বলেন, ‘‘কলকাতায় থাকলে স্বামী-স্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাই। মাঝেমধ্যে দু’জন সিনেমাও দেখি। হিন্দি অ্যাকশন সিনেমা। এতেই সময় কেটে যাচ্ছে।’’
ভোটে যে হারতে চলেছেন, সে কথা কি এমন পোড়খাওয়া রাজনেতা টের পাননি? রাখঢাক না করেই গৌতমবাবু জানান, তিনি একেবারেই তা বুঝতে পারিনি। তবে কংগ্রেস যে ক্ষমতায় ফিরছে না, সেটা অনুমান করতে পেরেছিলেন। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘যখন কংগ্রেসে কোন্দল চরমে, এক দিন আমি তরুণ গগৈকে বলি, হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করে দিন। যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেদিন গগৈয়ের যে জেদ দেখেছিলাম, পরে আর তা নিয়ে এগোনোর সাহস পাইনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি সে দিনই নিশ্চিত হয়ে যাই, এ বার আর ক্ষমতায় আসছে না কংগ্রেস।’’
গৌতমবাবু জানান, হিমন্ত যে দল ছাড়তে চলেছেন, তা তিনি প্রতি মুহূর্তে টের পেতেন। এ-ও বুঝতেন. হিমন্তবাবু দল ছাড়লে কংগ্রেসের প্রচুর ক্ষতি হবে। গৌতমবাবু স্বীকার করেন, হিমন্ত বিশ্ব শর্মার দলত্যাগে কংগ্রেসের ক্ষতি হয়েছে।
হিমন্তের সঙ্গ ত্যাগ করা কি তার রাজনৈতিক ভুল ছিল? গৌতমবাবুর জবাব, ‘‘ঠিক-ভুল বলা কঠিন, তখন পরিস্থিতিটাই অন্য রকম ছিল।’’
জল্পনা ছড়িয়েছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে শিলচর আসনে বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন গৌতম রায়। কথাটা শুনেই হালকা চালে বলতে থাকেন, ‘‘আমিও শুনেছি কিছু লোক আমাকে চাইছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, শিলচরের বিজেপি নেতারা অনেক বড় মাপের। তাঁদের বাদ দিয়ে কি আমাকে তাঁরা টিকিট দেবেন।’’
কিন্তু টিকিটের শর্তে প্রস্তাব এলে কি কংগ্রেস ছাড়বেন? এ বার আরও রহস্যঘেরা উত্তর দেন গৌতমবাবু, ‘‘আসলে জানেন, প্রস্তাব ওঁরা দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যাইনি।’’ বাবা সন্তোষকুমার রায় অনেক দিন জেলা কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন, তিনিও কংগ্রেস টিকিটেই বিধায়ক ছিলেন— সে কথাও জানিয়ে দেন গৌতমবাবু।
মন্ত্রী হিসেবে নিজেকে কতটা সফল বলে মনে করেন, সেই প্রশ্নে অবশ্য স্পষ্ট জবাব মিলল না গৌতমবাবুর কাছে। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষই বলবেন, আমি কী করতে পেরেছি, আর কী করতে পারিনি।’’ তবে হাইলাকান্দি জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন বলে দাবি করেন।
দাবি জানান, হাইলাকান্দি জেলায় বহু সেতু নির্মাণ করে জেলার যোগাযোগ ব্যাবস্থায় রীতিমতো বিপ্লব এনেছেন।
অসমে কংগ্রেসের হারের মূল কারণ জানতে চাইলে গৌতমবাবু অনেকটা তেড়েফুঁড়েই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘‘তরুণ গগৈয়ের একনায়কতন্ত্রের জন্যই কংগ্রসের এই হাল হয়েছে।’’
গৌতমবাবু বিজেপিতে যেতে চাইলে তাঁকে কে আটকাবে— গগৈয়ের ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলতেই গৌতমবাবুর বক্তব্যে ফিরল পুরনো ঝাঁঝ। বললেন, ‘‘কংগ্রেস তরুণ গগৈর নিজস্ব সম্পত্তি নাকি যে, তিনি যাঁকে চাইবেন রাখবেন, আর যাঁকে চাইবেন তাড়াবেন। কংগ্রেস আমাদের, আমরা আমাদের ইচ্ছামতো কংগ্রেসে আছি, কংগ্রেসে থাকব।’’ দীর্ঘ সময়ের আলোচনায় অরাজনৈতিক নানা প্রসঙ্গও আসে। যদি রাজনীতিতে না আসতেন।... প্রশ্ন শেষ করার আগেই উত্তর দেন প্রাক্তন মন্ত্রী, ‘‘আমার পছন্দ ছিল পুলিশের চাকরি। এক বার আমি পুলিশের এসআই-র চাকরি পেয়েও ছিলাম। বাড়ির লোকের আপত্তিতে চাকরিতে যাওয়া হয়নি।’’
তবে সে-দিন না যাওয়ায়ই যে ভাল হয়েছে, আজ ভোটে হারার পরও উপলব্ধি করেন তিনি। খোলামেলা বললেন, ‘‘যদি সে দিন পুলিশের চাকরিতে যোগ দিতাম তা হলে আজ আমার পরিচয় হতো, শুধু একজন পেনসনভোগী চাকরিজীবী। সেদিন পুলিশে যাইনি বলেই চার বার মন্ত্রী হই। ছয়বার বিধায়ক। এখন না হয় না মন্ত্রী, না বিধায়ক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy