কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিজেপির বিজয় মিছিল। বুধবার হাইলাকান্দিতে। ছবি:অমিত দাস।
ধর্মীয় নির্যাতনের জেরে ভারতে আসা শরণার্থীদের স্বার্থরক্ষায় উপযুক্ত পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়েছিল কেন্দ্রের পূর্বতন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার। আজ এমনই দাবি করলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। গত সোমবার এ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে এই মন্তব্য করেন গগৈ।
তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র যদি এই নিয়ে আইন প্রণয়ন করে, সে ক্ষেত্রে রাজ্যে ডি-ভোটার বলে কেউ থাকবেন না। তবে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় আর নাগরিকত্ব বা ভোটাধিকার পাওয়া এক কথা নয়।’’
এ দিকে, অসমে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটের পালে হাওয়া কাড়তে আপাতত কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তি নিয়ে জোরদার প্রচারে নেমেছে বিজেপি। সেই হাওয়া কাড়তেই এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করেন গগৈ। তিনি বলেন, ‘‘প্রাণের তাগিদে বাংলাদেশ থেকে অসমে পালিয়ে আসা সে দেশের সংখ্যালঘু বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে যে আশ্রয় দেওয়া উচিত তা কংগ্রেসই আগে ভেবেছিল।’’ তিনি দাবি করেন, ২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলেই ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে এই বিষয়ে কেন্দ্র অসমের মতামতও জানতে চেয়েছিল। তিনি জানান, নাগরিকত্ব আইন (১৯৫১) ২০০৪ সালে সংশোধিত হয়েছে। তার ভিত্তিতে রাজস্থান ও গুজরাতে পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পেয়েছেন। একই ভাবে অসমে আসা বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে কী করা যায় তা জানতে চেয়েছিল কেন্দ্র। ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই, অসম মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ কেন্দ্রের কাছে পাঠায়।
গগৈ জানান, আইন সংশোধন হলে তবেই ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টানরা অসমে থাকার অধিকার পাবেন। তাঁদের আর গ্রেফতার করা হবে না। ডিটেনশন শিবির থেকেও সকলে মুক্তি পাবেন। রাজ্যে যে দেড় লক্ষ ডি-ভোটার বা সন্দেহজনক ভোটার রয়েছেন, তাঁরা তখন সন্দেহমু্ক্ত ও আশ্রিত হিসেবে রাজ্যে থাকতে পারবেন। কিন্তু, ভোটাধিকার পাবেন না। কারণ, এর সঙ্গে নাগরিকত্বের বিষয়টি গুলিয়ে ফেললে চলবে না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে কেন্দ্র কী পদক্ষেপ করছে তা তাঁরাই বলতে পারে। কারণ, এখন এই ক্ষেত্রে ভিত্তিবর্ষ ১৯৭১ সালে বেঁধে দেওয়া রয়েছে।’’
প্রশ্ন ওঠে, কেন্দ্রের এই বিজ্ঞপ্তি মানলে অসম চুক্তিকে অস্বীকার করা হয়। কারণ সেখানে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে অসমে আসা বাংলাদেশের মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা মানা হয়েছিল। গগৈ বলেন, ‘‘সেখানেও মানবিকতার স্বার্থে ১৯৭১ সালের আগে আসা মানুষদের স্বীকার করা হয়েছিল। তবে এ বার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অসম চুক্তি সংশোধিত হবে কি না তা নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না। তা কেন্দ্রের বিবেচনাধীন।’’
সদ্য রাজ্যে নাগরিক পঞ্জির আবেদনপত্র দাখিলের কাজ শেষ হয়েছে। গগৈ জানান, এনআরসির সঙ্গে আশ্রিতের মর্যাদা পাওয়ার সম্পর্ক নেই। যদি আইন সংশোধন করে তাঁরা নাগরিকত্ব পান, তখনই নাগরিক পঞ্জিতে নাম ঢোকানোর প্রসঙ্গ আসবে।
এ দিকে আসু জানিয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর আসা কোনও বাংলাদেশির বোঝা অসম বইবে না। নির্বাচনের আগে অসমকে বাংলাদেশি মুক্ত করার অঙ্গীকার করা নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এক জন বাংলাদেশিকেও অসম থেকে তাড়াতে পারেননি। উল্টে এখন তিনি কয়েক লক্ষ বাংলাদেশির বোঝা রাজ্যের উপরে চাপাবার চেষ্টা করছেন।
গৌহাটি হাইকোর্ট সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি শুনানিতে জানিয়েছে, রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশিরা জনবিন্যাস পালটে দিচ্ছে। তা আগ্রাসনের চেহারা নিয়েছে। বাংলাদেশিরাই এখন রাজ্যে ‘কিং মেকার’ হয়ে উঠছে। এমনটা চলতে থাকলে এক সময় ভূমিপুত্ররাই সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। সেই রায়কে উল্লেখ করে আসু জানায়— বিজেপি বাংলাদেশিদের রাজ্যের উপরে চাপালে ফের আন্দোলন শুরু হবে।
অসম আন্দোলন থেকে জন্ম হওয়া অসম গণ পরিষদের মতে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অসম ও অসম চুক্তির বিরোধী।
তবে অসমের রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য বলেন, ‘‘স্বদেশ থেকে বিতাড়িত এই মানুষদের ক্ষেত্রে মানবিক মনোভাব নিয়ে কেন্দ্র ঠিকই করেছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা সব অ-মুসলিমকে নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। তবে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটাধিকার দেওয়া যাবে না।’’ অসম চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে তাল রেখে অনেক কিছুর পুনর্মূল্যায়ন করতে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy