Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

এগিয়ে কার গ্রাম, পরীক্ষায় মোদী-সনিয়া

নরেন্দ্র মোদীকে টেক্কা দিয়ে কি ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারবেন সনিয়া গাঁধী? কিংবা সদ্য ছুটি কাটিয়ে ফেরা রাহুল গাঁধী? চক-ডাস্টার-ব্ল্যাকবোর্ডের জমানা কবে পেরিয়ে গিয়েছে! এ বার নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে বুড়ো বয়সে।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীকে টেক্কা দিয়ে কি ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারবেন সনিয়া গাঁধী? কিংবা সদ্য ছুটি কাটিয়ে ফেরা রাহুল গাঁধী?

চক-ডাস্টার-ব্ল্যাকবোর্ডের জমানা কবে পেরিয়ে গিয়েছে! এ বার নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে বুড়ো বয়সে। যেখানে শিক্ষকও নরেন্দ্র মোদী, আবার ছাত্রও তিনি। তাঁর ক্লাসরুমেই এ বার নম্বর পড়তে চলেছে সকলের মার্কশিটে।

সরকারে আসার পরেই প্রধানমন্ত্রী সব সাংসদকে অনুরোধ করেছিলেন নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রে একটি করে গ্রাম দত্তক নিতে। সেটিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে আদর্শ গ্রাম বানিয়ে তুলতে হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রত্যেক সাংসদ এমন তিনটি গ্রামকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুললে ধাপে ধাপে দেশের অনেক গ্রামই সেজে উঠবে নব কলেবরে। সরকারের দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এ বারে দ্বিতীয় গ্রামটি হাতে নেওয়ার পালা। মোদী সরকার স্থির করেছে, সাংসদরা প্রথম যে গ্রামটি দত্তক নিয়েছিলেন, সেগুলিতে কতদূর কাজ এগিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। বিচার করার কাজটি দত্তক নেওয়া প্রতিটি গ্রামের ক্ষেত্রেই করা হবে। দেওয়া হবে নম্বর। যে সাংসদ দত্তক নেওয়া গ্রামে যত ভাল কাজ করেছেন, তালিকায় তাঁর নাম থাকবে তত শীর্ষে।

‘সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’-র ঘোষণার পরে প্রধানমন্ত্রী নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে জোয়াপুর গ্রামটি দত্তক নিয়েছিলেন। সেই কাজ সম্পূর্ণ করে বারাণসীতেই আর একটি পিছিয়ে পড়া গ্রাম নাগেপুরকে তিনি দত্তক নিয়ে ফেলেছেন। প্রথম ঘোষণার পরে সনিয়া গাঁধী তাঁর রায়বরেলী কেন্দ্রের উড়য়া গ্রাম আর রাহুল গাঁধী জগদীশপুর গ্রাম দত্তক নেন। দু’বছর পর মোদী সরকারের রেজাল্টে এ বার ধরা পড়বে, কে কতটা এগিয়ে। তৃণমূলের অবশ্য এই তালিকা নিয়ে কোনও টেনশন নেই। কারণ, গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গই এক মাত্র রাজ্য যেখানে তৃণমূলের সাংসদরা কোনও গ্রাম দত্তক নেননি। গোড়ায় ‘ভুল’ করে দলের সাংসদ সুলতান আহমেদ একটি গ্রাম দত্তক নিয়ে ফেলেছিলেন বটে। কিন্তু বাকিরা সে পথে হাঁটেননি। এমনকী পশ্চিমবঙ্গের বাম সাংসদরাও সাড়া দেননি মোদীর ডাকে।

যার ফলে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, গোটা দেশে লোকসভার মোট ৫৪৩ জন সাংসদের মধ্যে ৪৯৯ জনই কোনও না কোনও গ্রাম দত্তক নিয়েছেন। নেননি শুধু ৪৪ জন। আর তার মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গেরই ৩৮ জন সাংসদ। এই নিয়ম অবশ্য শুধু লোকসভা সাংসদদের ক্ষেত্রেই নয়। রাজ্যসভার সাংসদদেরও বলা হয়েছিল এক একটি গ্রাম দত্তক নিতে। ২৫২ জন সাংসদের মধ্যে দত্তক না নেওয়ার তালিকায় শীর্ষে এখানেও পশ্চিমবঙ্গ। যাঁরা দত্তক নেননি, আর যাঁরা নিয়েছেন— তাঁদের অধিকাংশেরই ক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রী সব সাংসদকে এক একটি গ্রাম দত্তক নিতে বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন। এ জন্য পৃথক কোনও অর্থ বরাদ্দ করেননি। ফলে সাংসদ তহবিল থেকেই কোনও ক্রমে এদিক-ওদিক করে সামাল দিতে হচ্ছে। তার উপর এক গ্রামের উন্নতি হলে আশপাশের গ্রামগুলির মানুষ অবহেলার অভিযোগ তুলছেন। পরের বার নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে সাংসদদের। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, বারবার বলেও কোনও লাভ হয়নি কেন্দ্রকে।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদী এখন মূল্যায়নের একটি তালিকা পেশ করে দেখাতে চান, সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান কাঠামোতেই একটি গ্রামকে আদর্শ করে তোলা যায়। জনগণের অংশীদারিও দরকার সেখানে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দত্তক নেওয়া গ্রাম জোয়াপুরে এখন প্রকাশ্যে শৌচ করলে ৫০০ টাকা জরিমানার ফরমান জারি করেছেন সেখানকার গ্রাম-প্রধান। সব বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের পর এ ধরনের কোনও ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি।

এই তালিকা প্রকাশ করে মোদী সরকার যে সনিয়া-রাহুল গাঁধীকে অপদস্থ করতে পারে, সে আশঙ্কা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে কংগ্রেস শিবিরে। সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল প্রধানমন্ত্রীকে তাই চিঠি লিখে আগেভাগে গান গেয়ে রেখেছেন। গুজরাতের দুমখাল গ্রামটি তিনি দত্তক নিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনি অভিযোগ করেন, ভাল কাজ করতে চাইলেও গুজরাত সরকার তাঁকে সাহায্য করছে না। বিজেপির এক নেতা অবশ্য বলেন, ‘‘এ সব অজুহাত। তালিকা প্রকাশ পেলে দেখা যাবে, বিজেপির অনেক সাংসদও ভাল কাজ করেননি। সেটিই তো সুস্থ প্রতিযোগিতা। এটাই তো চান প্রধানমন্ত্রী।’’ তাঁর মতে, রাজ্যগুলির মধ্যেও উন্নয়নে লড়াই বাধিয়ে দিয়ে মোদী বারবার প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা বলেছেন। এর মধ্যে রাজনীতি খুঁজে লাভ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

adopted village Modi Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE