যুযুধান: আজ ভোট গুজরাতে। তার আগে জোর কদমে প্রচার রাহুল গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদীর। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
পোরবন্দরে ভাটিয়াবাজারের বাড়িটি ১৭৭৭ সালে কিনেছিলেন হরজীবনজি গাঁধী। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর ঠাকুর্দার বাবা। ১৮৬৯-এ এই বাড়িরই দোতলার একটি ঘরে জন্ম হয় মোহনদাসের। হরজীবনজির সেই বাড়ি এখন ‘কীর্তি মন্দির’। জাতির জনকের জন্মস্থান। একতলার সংগ্রহশালায় অনেক কিছুর সঙ্গে সাজানো রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত সেই গোল ফ্রেমের, বাঁকানো ডাঁটির একটি চশমাও। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় যা কিনা তাঁর সাধের ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর লোগো।
ব্যস। ওই পর্যন্তই। পোরবন্দরে এসে স্বচ্ছ ভারতের লোগোর আসল বস্তুটির দেখা মিলবে। কিন্তু ‘স্বচ্ছ ভারত’ নামে দেশে যে কোনও অভিযান চলছে, তা বোঝা দুষ্কর। এ শহরে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের কোনও বিজ্ঞাপনেরও দেখা মেলা ভার।
শহরটা ঘুরে, কথাবার্তা শুনে মনে হল, তবে কি পোরবন্দরের অনেকেই এ বার একটা ‘শিক্ষা’ দিতে চান? কীর্তি মন্দিরের রাস্তায় জিতেনভাই পাঞ্জওয়ানিয়ার শরবতের দোকানের দেওয়ালে গাঁধীজির সাদা-কালো ছবি। জিতেনভাইয়ের ছেলে, বছর বারোর হরদেওয়ের মুখে মোদীর মুখোশ। ভোটের হাওয়া জিজ্ঞাসা করতে দু’জনেরই হাত তুলে জবাব, ‘‘গুজরাতে ভাজপা, পোরবন্দরে পাঞ্জা।’’
২০১৯-এ গাঁধীজির সার্ধশতবর্ষ। মোদী বলেছেন, তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সেরা উপায় হল, ২০১৯-এর মধ্যে পরিচ্ছন্ন, আবর্জনামুক্ত স্বচ্ছ ভারত গড়ে তোলা। পোরবন্দরের মানুষের প্রশ্ন, গাঁধীজির জন্মস্থানটিই কি তার বাইরে থেকে যাবে?
বিজেপি নেতৃত্ব ভাল করেই জানেন, গাঁধী-ভক্ত মোদীর গুজরাতে পোরবন্দর হল মর্যাদার আসন।। বিজেপির বিধায়ক বাবুভাই বোখারিয়ার প্রতিপক্ষ রাজ্য কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা অর্জুন মোডওয়াড়িয়া। এ বার এই আসন ছিনিয়ে নিতে মরিয়া রাহুল গাঁধী নিজে পোরবন্দরে ঢুঁ মেরে গিয়েছেন।
মেহবুব শাহ মসজিদের সামনে দেখা মিলল ভিক্টোরিয়া জুবিলি মাদ্রাসার কর্তা মহম্মদ হানিফের। একটু দূরে স্কুলের সামনে শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে। পড়ে রয়েছে মৃত কুকুরের দেহ। স্বচ্ছ ভারত-এর প্রশ্ন শুনে হানিফ সে দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘‘নিজের চোখেই দেখে নিন।’’ মসজিদের সামনে জটলা থেকে অভিযোগ উঠে এল, পোরবন্দরের মুসলিম মহল্লায় উন্নয়ন পৌঁছয়নি। সমুদ্রের ধারে গাঁধীজির জন্মভিটে গুজরাতের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হতে পারত। সেখানেও ‘কুছদিন তো গুজারিয়ে গুজরাত মে’-র প্রচার একেবারে ব্যর্থ।
কীর্তি মন্দির থেকে বেরিয়েই বিরাট এক গোলচক্কর। মাঝখানে দাঁড়িয়ে গাঁধীর সাদা মূর্তি। সেখানেও ভাঙা রাস্তায় নোংরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। নর্দমার পাঁক উপচে পড়ছে। বিজেপি-র নির্বাচনী অফিসে বসে শহরের যুব মোর্চার সভাপতি সঞ্জয় লোধানি ছেলেপুলেদের মধ্যে মোদীর মুখোশ বিলি করছেন। তাঁর স্ত্রী খেয়াতি পুরসভার কাউন্সিলর। এই পাঁকে পদ্ম ফুটবে? লোধানির সাফাই, ‘‘ভোটের কাজে ও দিকটায় দেখভাল হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
আর কবে হবে! কালই তো ভোট স্বচ্ছ ভারতের দেখা না পাওয়া পোরবন্দরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy