Advertisement
E-Paper

কঠিন লড়াইয়ে হাগ্রামা, বলছে বড়োভূমি

জঙ্গি নেতা থেকে রাজনৈতিক দলের প্রধান! বহু হত্যাকাণ্ডে নাম জড়ানো খলনায়কই এখন বড়োভূমির হর্তাকর্তা। ‘কিলার’ থেকে ‘কিংমেকার’ হয়ে ওঠা হাগ্রাম মহিলারির এখন দম ফেলার ফুরসত নেই।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৩

জঙ্গি নেতা থেকে রাজনৈতিক দলের প্রধান! বহু হত্যাকাণ্ডে নাম জড়ানো খলনায়কই এখন বড়োভূমির হর্তাকর্তা। ‘কিলার’ থেকে ‘কিংমেকার’ হয়ে ওঠা হাগ্রাম মহিলারির এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। শুধু নিজের প্রার্থীদের হয়েই প্রচার নয়, একই সঙ্গে জোটসঙ্গী বিজেপি ও অগপ প্রার্থীদের হয়েও প্রচার চালাতে হচ্ছে তাঁকে। সময় কাটছে আকাশে-আকাশেই। নিজে বলছেন, “কোনও ব্যাপারই নয়। বিপিএফ যেখানে, সরকার সেখানেই।” কিন্তু দলের সদস্যরা প্রকারান্তরে মেনে নিচ্ছেন, হাগ্রামার রাজনৈতিক জীবনের কঠিনতম লড়াই দেখছে ২০১৬-র বড়োভূমি।

প্রায় ১৫ বছর ধরে হত্যা, বিস্ফোরণ, অপহরণ চালিয়ে যাওয়া হাগ্রামা সশস্ত্র সংগ্রামের রাস্তা ছেড়ে ২০০৩ সালে বড়ো চুক্তির হাত ধরে মূল স্রোতে ফিরে আসেন। তারপর থেকেই তিনি বড়ো স্বশাসিত পরিষদের প্রধান। দু’দফায় ভাঙাগড়া করেও তাঁর দল, বড়োল্যান্ড পিপল্স ফ্রন্ট (বিপিএফ) এখনও বড়োভূমির অবিসংবাদিত শাসকদল। দল গড়ার পর ২০০৬ সালে ১১ জন, ২০১১ সালে ১২ জন বিপিএফ বিধায়ককে নিয়ে কংগ্রেস সরকারে সামিল হন হাগ্রামা। ২০০৮ সালে সেওয়ালি ব্রহ্মর সঙ্গে তাঁর বিয়ের জমক জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও সাড়া ফেলেছিল। ৬০০০ স্বেচ্ছাসেবকের উপরে বিয়ে ও অতিথি আপ্যায়ণের ভার ছিল। গরিব বড়োভূমিতে বড়ো নেতার বিয়েতে খরচ হয়েছিল বহু বহু কোটি টাকা। আমন্ত্রিতের সংখ্যা ছিল পঞ্চাশ হাজার। গর্বিত মহিলারি বলেছিলেন, ‘‘বড়োভূমির মানুষ আমায় অনেক বড় চোখে দেখে। তাই মানুষের
দাবি মেনেই বিয়েটাও বড় করে করতে হল।’’ ওই বিয়ের সমালোচনা
করায় অসমের প্রথম সারির সংবাদপত্রের উপরে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছিলেন হাগ্রামা।

এক সময় মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের ‘নয়নের মণি’ হাগ্রামা ২০১৪ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিন্ন করেন। অভিযোগ করেন, কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি মতো বড়োভূমির উন্নয়ন করছে না। টাকাও দিচ্ছে না। নির্বাচনের আগে হাজার কোটির প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে বিজেপির হাত ধরেন তিনি। তাঁর দাবি মেনে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা রাজ্যের নির্বাচনী প্রচার কোকরাঝাড় থেকে শুরু করেন। জনসভায় হাগ্রামা বারবার মনে করিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও মোদী হাজার কোটির কথা ঘোষণা না করায় ক্ষিপ্ত হাগ্রামা জোট ভাঙার হুমকিও দেন। পরে তাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে ঠাণ্ডা করেন অমিত শাহ। প্রতিশ্রুতি দেন, ভোটে জিতলে হাজার কোটির বেশিই পাবে বড়োভূমি।

জোটের সমঝোতা মেনে হাগ্রামা এবার ১৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা ১৩টি আসনেই জিতব। এখানকার মানুষ জানেন, উন্নয়ন আমরাই করতে পারি।’’ তাঁর কথায়, জনতা বড়োল্যান্ড বললেই বিপিএফ বোঝেন। তাই হারার নাকি প্রশ্নই নেই। তাঁর কথা, ‘‘ইতিহাস বলছে, আমরা যেখানে, ক্ষমতা সেখানে। আমরা যাদের পক্ষে থাকব দিসপুর তাদের দখলেই যাবে।’’

অবশ্য এর উল্টোটাও হাগ্রামা বলে রাখছেন: ‘‘বড়োভূমির উন্নয়নের জন্যে ক্ষমতাশালীর সঙ্গে থাকা জরুরি। দিসপুরে আমাদের থাকতেই হবে।’’ যদি বিজেপি-অগপ জোট হারে? তার কোনও জবাব এখন পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন হাগ্রামা। তাঁর এই নীরবতায় আশাবাদী কংগ্রেস, যদি কংগ্রেস ৫৫টি আসনও পায়, সে ক্ষেত্রে সরকার গড়ার ম্যাজিক সংখ্যাটি পেতে হাগ্রামার সাহায্য তাঁরা পাবেনই।

কোকরাঝাড় কলেজের এক শিক্ষক, কোকরাঝাড়ের এক সমাজসেবী এবং স্থানীয় মহিলা সংগঠনের নেত্রী—তিনজনই অবশ্য একমত, বড়োভূমির মানুষ প্রার্থী দেখে নয়, সোজা কথার মানুষ হাগ্রামাকে দেখেই ভোট দেন। এক সময় বড়োভূমিকে সিঙ্গাপুরের মতো করে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হাগ্রামা। গত ১০ বছরে বড়োভূমি সিঙ্গাপুর না হলেও উন্নয়নের কাজ বিস্তর হয়েছে। অবশ্য পাল্লা দিয়ে হয়েছে দুর্নীতিও। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া।

বিপিএফের একটি গোষ্ঠীর আশঙ্কা, ২০১০ সালে বড়ো স্বশাসিত পরিষদের নির্বাচনে ৪০টির মধ্যে মাত্র ২০টি আসন পেয়েছিল বিপিএফ। ক্ষমতা ধরে রাখলেও একক আধিপত্যে তা ছিল বড় ধাক্কা। গত লোকসভা নির্বাচনে কোকরাঝাড় থেকে প্রথম বার অবড়ো প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন প্রাক্তন আলফা কম্যান্ডার হীরা শরনিয়া।

সেই সঙ্গে কংগ্রেস এ বার বিপিএফের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বড়ো ছাত্র সংগঠন আবসু আর আলোচনাপন্থী এনডিএফবিকে কাজে লাগিয়েছে। দলে টেনেছে অ-বড়ো সংগঠনগুলিকেও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্তর দাবি, ‘‘বড়োভূমিতে হওয়া সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষকে কাজে লাগিয়েছেন বদরুদ্দিন আজমল আর হাগ্রামা। এক জন নিজেকে সংখ্যালঘুদের ত্রাতা বলে ঘোষণা করে সারা ভারত থেকে টাকা সংগ্রহ করেছেন। অন্য জন বড়োদের মুক্তির কথা বলে নিজের ও সঙ্গীদের পকেট ভরিয়েছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেস হাগ্রামাকে ভরসা করে উন্নয়নের টাকা দিয়েছিল। তার সদ্ব্যবহার হয়নি। কংগ্রেস বিপিএফ বিরোধী গোষ্ঠী ইউপিপিকে পূর্ব ও পশ্চিম কোকরাঝাড়, সিদলি ও ছাপাগুড়ি ছেড়ে দিয়েছে। অন্য ন’টি আসনে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই। দত্তর দাবি, ‘‘গত বার ১২টি আসন পাওয়া বিপিএফ এবার তিনটির বেশি আসন পাবে না।’’

কিন্তু কোকরাঝাড়, উদালগুড়ি, বাক্সার জেলার সাধারণ বাসিন্দা, বিশেষ করে অ-বড়ো ও সংখ্যালঘুদের মতে, ভোটে যদি কংগ্রেস জেতে সে ক্ষেত্রে অ-বড়োরা নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসের বলি হতে পারেন। বড়ো বনাম সংখ্যালঘুর সংঘর্ষে বারবার রক্তাক্ত হওয়া গ্রামের মানুষদের বক্তব্য, বড়োদের দু’টি গোষ্ঠীর হাতেই প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। নির্বাচনে কংগ্রেস জিতলে বিপিএফ ধরেই নেবে সংখ্যালঘু ও অ-বড়োরা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে। তাই ফের সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বড়োভূমির অ-বড়ো বাসিন্দারা।

Hagrama Mohilary election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy