নিজস্ব সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি, ৫ ফেব্রুয়ারি: মন্ত্রিত্ব চলে গেছে প্রায় দু’বছর আগে! তা সত্ত্বেও মন্ত্রী হিসাবে পাওয়া সরকারি বাসভবন নানা অছিলায় আঁকড়ে থাকায় আজ বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে যা তা ভাবে ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আজ জরুরি ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন অধীরবাবু। কিন্তু মুহূর্তে সেই আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস ঠাকুর। সেই সঙ্গে তীব্র ভর্ৎসনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি একজন সাংসদ! নিজের পদের কিছু তো মর্যাদা রাখুন!’’
আরও পড়ুন- নাছোড় অধীর, থাকতে দিন আর ক’দিন
কোনও সাংসদদের প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের এ হেন পর্যবেক্ষণের নজির হালফিলে নেই। বিরোধীরা পরের কথা, কংগ্রেসের নেতারাই মনে করছেন, অধীরবাবুর বাড়াবাড়ির কারণেই এই অপমানের মুখোমুখি হতে হল তাঁকে। নইলে শুরুতে তাঁর প্রতি রাজনৈতিক শিবিরে সহানুভূতি ছিল। কিন্তু সরকারি বাসভবন ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে বারবার আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এবং সরকারের বিরুদ্ধে হম্বিতম্বি করে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসন্ন। তার আগে আদালতের ভর্ৎসনায় রাজনৈতিক ভাবেও অধীরের মুখ পুড়ল বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চে বিচারপতি এ কে সিক্রি ও আর ভানুমতীও ছিলেন। তবে বহরমপুরের সাংসদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল ঝাঁঝালো। অধীরের উদ্দেশে তিনি বলেন,‘‘আপনি একজন সাংসদ। কিন্তু যে বাসভবনে আপনি এখন রয়েছেন তা আপনার প্রাপ্য নয়। তার পরেও আপনি আবেদন জানাচ্ছেন। কী ধরনের আবেদন এটা। আপনি এক্ষুনি বাড়ি খালি করুন।’’ শুধু তাই নয়, আদালত তাঁকে এও বলে যে, ‘‘আপনি কী বোঝাতে চাইছেন? আপনাকে বাড়ি ছাড়তে বললে তবেই ছাড়বেন? নইলে নয়!’’
যে সরকারি বাসভবন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তার ঠিকানা নয়াদিল্লির ১৪ নম্বর নিউ মোতিবাগ। ইউ পি এ জমানায় রেল প্রতিমন্ত্রী হিসাবে ওই বাড়িটি বরাদ্দ করা হয়েছিল অধীরবাবুকে। কিন্তু মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পর ওই বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল অধীরবাবুর। বাড়িটি বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী রাজ্য বর্ধন রাঠৌরকে বরাদ্দও করেছিল সরকার। কিন্তু অধীরবাবু বাড়িটি না ছাড়ায় রাঠৌরকে অন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। এই অবস্থায় অধীরবাবুকে শেষমেশ ইন্ডিয়া গেটের কাছে হুমায়ুন রোডে একটি বাংলো বরাদ্দ করেছিল সরকার। কিন্তু সেটি বাসযোগ্য অবস্থায় নেই বলে দাবি করে অধীরবাবু ফের নিউ মোতিবাগের বাড়িটি ছাড়তে সময় চেয়েছিলেন। সেজন্য প্রথমে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন। ডিভিশন বেঞ্চও তাঁকে বিনা বাক্যব্যয়ে হুমায়ুন রোডের বাসভবনে উঠে যেতে বলে। কিন্তু তাতেও নাছোড় বহরমপুরের সাংসদ এর পর আজ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন।
সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর আজ অধীরবাবু বলেন, ‘‘সরকার হাইকোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল। সরকারি কৌসুলী আদালতে জানিয়েছিলেন যে হুমায়ুন রোডের বাসভবনটি বাসযোগ্য। কিন্তু গত পরশু সেখানে গিয়ে দেখি জল ও বিদ্যুতের সংযোগ নেই। তাছাড়া পূর্ত বিভাগও লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছে বাড়িটি বাসযোগ্য করে তুলতে তাঁদের সাত দিন সময় লাগবে। তাই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলাম।’’
কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতা বলেন, গোটা বিতর্কের মাঝে এখন এই বিষয়টি প্রায় হারিয়ে গিয়েছে যে লোকসভার চার বারের সাংসদ হিসাবে অধীরবাবুর একটি সরকারি বাংলো প্রাপ্য। নিউ মোতিবাগের বাংলোর তুলনায় তা আড়েবহরে খুব বেশি ছোট হওয়ার কথা নয়। আর সেই কারণেই প্রথম যেদিন নিউ মোতিবাগের বাড়ি থেকে এস্টেট বিভাগ অধীরবাবুর মালপত্র রাস্তায় এনে ফেলেছিল সেদিন তিনি কিছুটা হলেও সহানুভূতি পেয়েছিলেন। অধীরবাবুর সম্ভবত এই ধারনা তৈরি হয়েছিল যে এতে তাঁর মর্যাদা হানি হয়েছে। সেই কারণে বিষয়টিকে তিনি জেদাজেদির স্তরে নিয়ে যান, এমনকি সংসদে সাংসদের স্বাধীকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনার জন্য গতকাল লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনকে চিঠি লিখে অনুমতিও চান। তাঁর এই আচরণ সামগ্রিক ভাবে আদালত ভালোচোখে দেখেনি। বরং এবার অধীরবাবুর ভাবমূর্তিতে যে আঁচ পড়ল তা একপ্রকার অপূরণীয়। অথচ সহিষ্ণুতার সঙ্গে এগোলে এই হেনস্থা ও অস্বস্তিতে তিনি এড়াতে পারতেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy