Advertisement
১৯ মে ২০২৪

গন্ধমাদন চাপেই জীবন থেকে ছুটি বহু পড়ুয়ার

সেতার বাজাতে ভালবাসত সল্টলেকের সপ্তর্ষি সেন। কিন্তু মাধ্যমিকের পরে বাবা জানালেন, জয়েন্ট এন্ট্রান্সে এমন ফল করতে হবে, যাতে দেশের সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সুযোগ মেলে। প্রত্যাশার চাপে ভয় চেপে ধরে সপ্তর্ষিকে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০৩:৪৬
Share: Save:

সেতার বাজাতে ভালবাসত সল্টলেকের সপ্তর্ষি সেন। কিন্তু মাধ্যমিকের পরে বাবা জানালেন, জয়েন্ট এন্ট্রান্সে এমন ফল করতে হবে, যাতে দেশের সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সুযোগ মেলে। প্রত্যাশার চাপে ভয় চেপে ধরে সপ্তর্ষিকে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন যত এগিয়ে এল, তালগোল পাকিয়ে গেল সব। অঙ্ক পরীক্ষার পরের দিন শোয়ার ঘরে পাওয়া গেল সপ্তর্ষির ঝুলন্ত দেহ।

জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল বেরোনোর পরে একই ভাবে মেলে কসবার রূপসা ঘোষের দেহ। তার মা চেয়েছিলেন, মেয়ে ডাক্তার হোক। কিন্তু জয়েন্ট উতরোতে পারেনি রূপসা।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-র পরিসংখ্যান, পড়ার চাপে আত্মহত্যার প্রবণতায় দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এখন তৃতীয়। মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর পরেই। গত বছর মহারাষ্ট্রে ১২৩০, তামিলনাড়ুতে ৯৫৫, বাংলায় ৬৭৬ জন পড়ার চাপে আত্মহত্যা করেছে। এই প্রবণতা বেশি একাদশ-দ্বাদশের পড়ুয়াদের মধ্যেই।

মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, উচ্চ মাধ্যমিক তো বটেই, ভাল ফল করতে হবে জয়েন্টেও— অভিভাবকদের এই প্রত্যাশা মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয় ছাত্রছাত্রীদের। অভিভাবক ভাবেন, লেখাপড়ার শেষে লক্ষাধিক টাকা বেতনের চাকরি পেলে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে। তাই ভর্তি হতে হবে সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিক্যাল কলেজে। এত প্রত্যাশা যে পড়ুয়াদের মনের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর, অভিভাবক তা ভুলে যাচ্ছেন। চাপ সামলাতে না-পেরে আত্মহত্যার পথ নিচ্ছে পড়ুয়ারা। এনসিআরবি-র রিপোর্টের আঙুল সে-দিকেই।

‘‘জয়েন্ট এন্ট্রান্স বা বোর্ড পরীক্ষার ফল জীবনে সুখ বা দুঃখের চাবিকাঠি নয়। এটা পড়ুয়াদের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে হবে অভিভাবকদেরও,’’ বলছেন মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায়।

শিক্ষাবিদ ও সমাজতত্ত্ববিদেরা জানাচ্ছেন, অভিভাবকদের একাংশের ধারণা, ছেলেমেয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ছে, তার সঙ্গে তাঁদের সামাজিক অবস্থান জড়িত। কিন্তু পাহাড়প্রমাণ চাপে ছেলেমেয়ের মনে তৈরি হচ্ছে পরীক্ষা-ভীতি। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘বিজ্ঞান ছাড়াও অনেক বিকল্প তৈরি হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ অভিভাবক সেটা জানেন না। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বড় কোম্পানির ম্যানেজার না-হয়ে মানুষ হওয়া বেশি জরুরি। এটা ভুলে যাই।’’ একই সুরে সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায়ের বক্তব্য, ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দ্রুত সম্মান ও অর্থ মেলে। কিন্তু অন্য বিষয়েও যে সুযোগ আছে, সেই ধারণা নেই অনেকের। ‘‘বাঁধাধরা চিন্তার বাইরে না-বেরোলে পরিস্থিতি বদলাবে না,’’ বলছেন প্রশান্তবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suicide High Pressure of Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE