Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

সাইকেল হাতে না পেলে বাইকে চড়বেন অখিলেশ

সাইকেল না-পেলে মোটরসাইকেল। সমাজবাদী পার্টির বদলে ‘অখিল ভারতীয় সমাজবাদী পার্টি’। দল ভাঙলে এই নতুন নাম ও প্রতীক নিয়েই উত্তরপ্রদেশে ভোটে ঝাঁপাতে চাইছেন অখিলেশ-রামগোপাল শিবির।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৭
Share: Save:

সাইকেল না-পেলে মোটরসাইকেল। সমাজবাদী পার্টির বদলে ‘অখিল ভারতীয় সমাজবাদী পার্টি’। দল ভাঙলে এই নতুন নাম ও প্রতীক নিয়েই উত্তরপ্রদেশে ভোটে ঝাঁপাতে চাইছেন অখিলেশ-রামগোপাল শিবির।

বিদ্রোহী নেতা রামগোপাল যাদবের সক্রিয়তার কারণে সমাজবাদী পার্টি ভাঙার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলেই আজ সরব হলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। তাঁর অভিযোগ, রামগোপাল তাঁর পুত্র-পুত্রবধূর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতেই বিজেপির কথায় সপা ভাঙায় সক্রিয় হয়েছেন। শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের সামনে বিবদমান দু’পক্ষের শেষ শুনানি। তাতেই নির্ধারণ হবে দলের প্রতীক ও নামের ভবিষ্যৎ। সে কারণে আজ সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছে যান মুলায়ম ও ভাই শিবপাল। রাতেই দিল্লি উড়ে আসেন অখিলেশ শিবিরের দুই নেতা অভিষেক মিশ্র ও অম্বিকা চৌধুরী। সূত্রের খবর, শুক্রবারের লড়াইয়ের আগে দিল্লি পৌঁছে যাবেন অখিলেশ শিবিরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রামগোপালও। দু’শিবিরেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে।

ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টিতে মাস খানেক ধরে যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছে, তাতে রীতিমতো দ্বিধাবিভক্ত নেতা ও সমর্থকেরা। সপা-র একটি বড় অংশ অখিলেশের পিছনে রয়েছে বুঝতে পেরেই ভাঙন রুখতে একাধিক বার পুত্রের উদ্দেশে বার্তা দেন মুলায়ম। গত কাল লখনউয়ে ছেলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুলায়ম। কিন্তু রফা সূত্র অধরাই থেকে গিয়েছে। আজ পিতা-পুত্রের কোনও বৈঠক না-হলেও, ছেলেকে ফের বার্তা দিতে দলীয় দফতরে উপস্থিত সমর্থকদের সামনে মুখ খোলেন মুলায়ম। বলেন, ‘‘আমি দল ভাঙতে চাই না বলেই অখিলেশকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়েছে।’’ তার পরেই সমর্থকদের উদ্দেশে মুলায়মের প্রশ্ন, ‘‘এর পরেও নতুন দলের কী দরকার অখিলেশের? আমার যা ছিল সবই তো দিয়েছি। আমার কাছে আর কিছু নেই, কেবল কর্মীদের সমর্থন ছাড়া!’’

আজ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মুলায়ম। ১ জানুয়ারির বৈঠকে মুলায়মকে সরিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন অখিলেশ। নিজের হাতে গড়া দলে বড় ছেলের হাতে এই হেনস্থা মেনে নিতে পারেননি মুলায়ম। আজ তাই স্মৃতি রোমন্থন করে মুলায়ম বলেন, ‘‘জরুরি অবস্থার সময়ে আমি সমাজবাদী পার্টি তৈরি করেছিলাম। তখন অখিলেশের বয়স ছিল মাত্র দু’বছর।’’ মুলায়ম শিবিরের বক্তব্য, সেই ছেলেই যে এক দিন দলে বাবাকে কার্যত গুরুত্বহীন করে দেবে, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সাবেক ওই কুস্তিগীর।

মুলায়ম শিবিরের বক্তব্য, ছেলের স্বার্থে জিতলে অখিলেশকে মুখ্যমন্ত্রী করতে আপত্তি নেই পিতার। শুধু মুলায়মের আর্জি, তাঁকে যেন সর্বভারতীয় সভাপতির পদটি ছেড়ে দেন অখিলেশ। অভিযোগ, রামগোপালের পরামর্শে পুত্র অখিলেশ সেই বদন্যতাটুকুও দেখাতে রাজি নন। যার জবাবে আজ ফের অখিলেশ শিবির জানিয়েছে, নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুলায়মের হাতে দলের ক্ষমতা তুলে দিতে আপত্তি রয়েছে অখিলেশের। কারণ চলতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই থেকে তহবিল বণ্টন— পুরোটাই হাতে রাখতে চান অখিলেশ। মুলায়ম ক্ষমতায় এলে ফের দলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে অমর সিংহ-শিবপাল জুটি। তবে ভোটের পরে দলের ফলাফল যাই হোক না কেন, পিতাকে তাঁর হারানো রাজ্যপাট সসম্মানে ফেরত দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুত্র। অখিলেশ শিবিরের অভিযোগ, অমর-শিবপাল ও সৎমা সাধনার উস্কানিতেই মাত্র দু’মাস ওই সামান্য ধৈর্য ধরতে পারছেন না মুলায়ম। ওই ত্রয়ীর ক্ষমতার লোভেই আসলে দূরত্ব বাড়ছে পিতা-পুত্রের।

তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সপা-র ভাঙন রুখতে সচেষ্ট রয়েছে উভয় শিবির। সূত্রের খবর, সমাধানের খোঁজে আগামিকাল ফের একপ্রস্ত আলোচনা হবে পিতা-পুত্রের। অখিলেশ শিবির যখন নতুন প্রতীক ও নাম নিয়ে লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনও মুলায়ম আশাবাদী যে শেষ পর্যন্ত ভাঙন রোখা যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি দলকে বাঁচাতে চাই। দলীয় প্রতীক হাতছাড়া হওয়া আটকাতে চাই। আমি আশাবাদী যে আমরা দলকে বাঁচাতে পারব।’’

সত্যিই কি ভাঙন রোখা সম্ভব হবে সমাজবাদী পার্টিতে? উত্তর জানা যেতে পারে কাল, বৃহস্পতিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akhilesh Yadav Mulayam Singh Yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE