Advertisement
E-Paper

চাকরির পরীক্ষার ফর্মে ঠাঁই তৃতীয় লিঙ্গের

অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে আত্মগোপন করে থাকার পর্বে অর্জুনকে বাধ্য হয়ে বৃহন্নলা সাজতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি জন্মসূত্রে বা নিজের ইচ্ছায় ‘ট্রান্সজেন্ডার’ বা তৃতীয় লিঙ্গ হলে কুরু-পাণ্ডবের অস্ত্র পরীক্ষার মঞ্চে আদৌ প্রবেশাধিকার পেতেন কি?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৯

অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে আত্মগোপন করে থাকার পর্বে অর্জুনকে বাধ্য হয়ে বৃহন্নলা সাজতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি জন্মসূত্রে বা নিজের ইচ্ছায় ‘ট্রান্সজেন্ডার’ বা তৃতীয় লিঙ্গ হলে কুরু-পাণ্ডবের অস্ত্র পরীক্ষার মঞ্চে আদৌ প্রবেশাধিকার পেতেন কি?

মহাভারতকারের জবাব না-মিলুক, একবিংশ শতকের পরীক্ষায় তৃতীয় লিঙ্গকে যে ব্রাত্য করে রাখা যায় না, একটি মামলার রায়ে সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)। পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসি-কে তাদের নির্দেশ, শুধু পুরুষ বা মহিলা নয়। সরকারি চাকরির ফর্মে তৃতীয় লিঙ্গের সংস্থানও রাখতে হবে। স্যাটের চেয়ারম্যান তথা বিচারপতি অমিত তালুকদার এবং সদস্য সমর ঘোষের বেঞ্চ সোমবার এই রায় দিয়েছে।

অত্রি কর নামে এক ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গকে ঠাঁই দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজেকে পুরুষ বা মহিলা হিসেবে চিহ্নিত করতে আপত্তি আছে অত্রির। ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময় তিনি সে-কথা বারবার জানিয়েছিলেন পিএসসি-কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এ বার তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে স্যাটের নির্দেশ, অত্রিকে অবিলম্বে পিএসসি-র ফর্মে তাঁর ইচ্ছেমতো লিঙ্গ উল্লেখ করার সুযোগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের ২০১৪ সালের একটি রায়ের ভিত্তিতে পিএসসি-কে তাদের ফর্মের আদল বদলানোরও নির্দেশ দিয়েছে স্যাট।

অত্রির তরফে মামলাটি লড়তে গিয়ে আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত ও ঐন্দ্রিলা চক্রবর্তী ২০১৪-র এপ্রিলে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া একটি রায়ের কথা তুলে ধরেন। ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি (এনএলএসএ)-র আবেদনের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি এ কে সিকরির ডিভিশন বেঞ্চ তাদের রায়ে এ দেশে সব স্তরেই পুরুষ ও মহিলার সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের অস্তিত্ব স্বীকার করার নির্দেশ দেয়।

পিএসসি-র তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, স্যাটের নির্দেশ খতিয়ে দেখে তারা ব্যবস্থা নেবে। সমাজকল্যাণ সচিব তথা ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডের এগ্‌জিকিউটিভ কমিটির সদস্যা রোশনী সেন বলেন, ‘‘রাজ্যে সরকারি চাকরির নানা স্তরে তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’’ স্যাটের নির্দেশ অনুযায়ী অত্রি লিখিত ভাবে নিজেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ বলে ঘোষণা করে পরীক্ষার ফর্ম পূরণের সুযোগ পাবেন।

গত বছর নভেম্বরে তামিলনাড়ুতে পুলিশের চাকরির আবেদনের ফর্মে তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। দেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার সাব-ইনস্পেক্টর হিসেবে তখনই স্বীকৃতি পান কে প্রীতিকা ইয়াশিনি। পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য কোল পেতে দিয়েছে অনেক আগেই। রূপান্তরকামীদের মধ্য থেকে এ রাজ্যেরই মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় দেশে প্রথম কলেজ-অধ্যক্ষা হয়েছেন। আইনজীবী শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ, স্যাটের এ দিনের রায় আমলার চাকরির ক্ষেত্রেও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য দরজা খুলে দিল।

যাঁর মামলার জেরে এটা সম্ভব হল, সেই অত্রি কর হুগলির একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। ‘‘কাজের ক্ষেত্রে বারবার নানা সমস্যায় পড়েছি। ব্যঙ্গবিদ্রুপের শিকার হয়েছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবর্ণকুমার মণ্ডল না-থাকলে লড়াই চালানোর সাহস পেতাম না,’’ বলেছেন অত্রি।

Job exam Third gender
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy