অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত তাঁকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছিল। সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ফের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠাল ভারতেই!
বিএসএফ তাঁকে আটক করে। ঠাঁই হয় শিলচর জেলে। সেখানেই এখন দিনরাত বিড়বিড় করে চলেছেন পাঁচগ্রাম ঠাণ্ডাপুরের প্রাণহরি বৈষ্ণব— ‘‘আমার কি তবে কোনও দেশ নেই।’’ যাকে দেখছেন তাঁকে জিজ্ঞাসা করছেন— ‘‘কোন দেশটা আমার?’’
একই ঘটনা ঘটেছিল উধারবন্দের মানিক দাসের সঙ্গে। কলা বিক্রি করতে উধারবন্দ বাজারে এসেছিলেন। পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তখনই তিনি জানতে পারেন, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাঁকে খুঁজছে। নাগরিকত্বের কাগজপত্র দেখাতে না যাওয়ায় তাঁকে বিচারক বিদেশি বলে রায় দিয়েছেন। গ্রেফতারের পর দু’দফা ‘পুশব্যাক’। পরে আদালত সমস্ত কাগজপত্র দেখে ভারতীয় বলে রায় দেয়। আত্মগোপন-পর্ব শেষে প্রকাশ্যে আসেন মানিকবাবু। প্রাণহরি বৈষ্ণব অবশ্য আত্মগোপনের সুযোগ পাননি। হাইলাকান্দি পুলিশ তাঁর ফিরে আসার খবর পেয়ে যায়। রবিবার ফের গ্রেফতার করে তাঁকে।
তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্তরোর্ধ্ব প্রাণহরি বৈষ্ণবের মা-বাবা তাঁকে নিয়ে ১৯৬৪ সালে এ দেশে আসেন। ভারত সরকার প্রথমে তাঁদের উদ্বাস্তু হিসেবে গ্রহণ করে। পরে কাছাড় জেলার কাটিগড়াসার্কলের মহাদেবপুরে জমি দেওয়া হয়। উদ্বাস্তু কার্ড এবং ভূমি বন্দোবস্তের কাগজপত্রও রয়েছে তাঁদের কাছে। ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর বাবা ঈশ্বর বৈষ্ণবের নাম রয়েছে। ১৯৭৯ থেকে রয়েছে তাঁর নামও।
কিন্তু সে সব আদালতে দেখানোর সুযোগ মেলেনি। প্রাণহরিবাবুর খুড়তুতো ভাই জয়হরিবাবু জানান, ২০০৮ সালে ট্রাইব্যুনাল নোটিস পাঠিয়েছিল। তিন বার তিনি সেখানে হাজিরা দেন। কিন্তু কাগজ দেখানোর সুযোগ মেলেনি। শুধু উপস্থিতির তারিখ। উকিল-মুহুরির খরচ, গাড়িভাড়া মেটানোর টাকা জোগাড় করতে পারছিলেন না। ঠেলাগাড়ি চালাতেন প্রাণহরিবাবু। অনেক দিন সেই কাজ ছেড়ে দেন। তিন ছেলেও ছোটখাট কাজ করেন। তাই পরে ওই মামলার খোঁজখবর করেননি কেউ। আচমকা ২০১১ সালে পুলিশ গিয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। থানা থেকে সোজা জেলে। তাঁরা পরে খোঁজ করে জানতে পারেন, তাঁকে বিদেশি সন্দেহ করে ট্রাইব্যুনালে মামলা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট তারিখে তিনি উপস্থিত না হওয়ায় বিচারক একতরফা রায়ে তাঁকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেন। এর পরই পুলিশ তাঁকে ধরে আনে। এক মাস জেলে রাখার পর এক দিন রাতের অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হয় করিমগঞ্জ জেলার মহীশাসন আন্তর্জাতিক সীমান্তে। ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। কোথায় যাবেন, কী করবেন! অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে হাঁটতে থাকেন। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা তাঁকে পেয়ে যায়। সব কথা জেনে আরেক পথে তাঁকে আবার ভারতে পাঠিয়ে দেয়। খাবার নেই, টাকাপয়সা নেই— সেই অবস্থায় মানুষকে রাস্তার খোঁজ জিজ্ঞাসা করে করে প্রাণহরিবাবু বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু সে খবর গোপন থাকেনি পুলিশের কাছে।
‘আমরা বাঙালি’র রাজ্য সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধের সঙ্গে বারবার অন্যায় করা হচ্ছে।’’ তিনি এর প্রতিবাদ করেন। বৃদ্ধের মুক্তি দাবি করে তাঁরা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে দরবার করছেন। ওই সংগঠনের বক্তব্য— তাঁকে প্রথমত কাগজপত্র দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রের এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির পর পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে না। প্রয়োজনে ‘আমরা বাঙালি’ এই বিষয়ে গৌহাটি হাইকোর্টে রিট পিটিশন করবে বলেও সাধনবাবু জানিয়ে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy