বিরোধী দলগুলির বৈঠকে (বাঁ দিক থেকে) মনমোহন সিংহ, রাহুল গাঁধী, সনিয়া গাঁধী, শরদ যাদব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সংসদ ভবনে। ছবি: পিটিআই
জাতীয়তাবাদের দৌড়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবে না। তাই আম জনতার দুর্দশার কথা ফিরিয়ে আনতেই হবে। অথচ এখন উপযুক্ত সময়ও নয়।
অতএব? রাহুল গাঁধী-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা মোদীর অস্ত্রেই মোদীকে ঘায়েলের সাময়িক কৌশল রচনা করলেন। আজ দিল্লির বৈঠক থেকে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করার জন্য দেশের শাসক দলের দিকে আঙুল তুললেন বিরোধীরা।
লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীকে কুপোকাত করতে বিরোধী জোটের অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি কী হবে, তার জন্য আজ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। যোগ দেন ২১টি দলের নেতারা। কিন্তু গতকাল রাতশেষে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলার পরে অন্তত কিছুটা সময়ের জন্য দেশে রাজনৈতিক চর্চার বিষয়টি স্থির করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিরোধীদেরও তাই আলোচনার বিষয় পাল্টে পুলওয়ামা-পরবর্তী গতিবিধি নিয়েই আলোচনা স্থির করতে হয়। আগামিকাল গুজরাতে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও বাতিল করে দেন রাহুল গাঁধী, যেখানে প্রথম বার প্রিয়ঙ্কার যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
আজকের বৈঠকে সনিয়া গাঁধী আলোচনা শুরু করে বলেন, আপাতত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে সরকারকে আক্রমণ করা হোক। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নরেন্দ্র মোদী গোটা বিষয়টি ‘হাইজ্যাক’ করে নিচ্ছেন, দেরি না করে এই মুহূর্ত থেকেই আক্রমণ শুরু হোক। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির মতো নেতারাও বলেন, যখন গোটা বিরোধী দল সরকারকে সমর্থন করছে, তখন বিজেপি সভাপতিই রাজনীতি করা শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সর্বদল বৈঠক ডাকেননি, নিজেও যোগ দেননি। তাতে সায় দেন রাহুল গাঁধীও। তিনিও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তাকে সঙ্কীর্ণ রাজনীতিতে পরিণত করা হয়েছে। সেনাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি করছেন।
আরও পড়ুন: সরকার নয়, অভিযানের খবরে সূত্রই সর্বেসর্বা
ফলে ঠিক হয়, এই কথাগুলিই রাখা হোক ২১টি দলের যৌথ বিবৃতিতে। কিন্তু বাদ সাধেন শরদ পওয়ার। তিনি বলেন, ‘‘দেশের আবেগের কথাটিও মাথায় রাখতে হবে। ‘প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি করছেন’ লিখলে উল্টো ফলও হতে পারে। পাকিস্তান উত্তাপ বাড়ালেও আমাদের করা উচিত নয়।’’
আরও পড়ুন: সুখোই থেকে মিগ, সব বিমান ওড়ানোয় দক্ষ অভিনন্দনের স্ত্রীও বিমানবাহিনীর প্রাক্তন স্কোয়াড্রন লিডার
অবশেষে আলোচনার পরে বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘শাসক দল’ নিরাপত্তা নিয়ে রাজনীতি করছে। আর প্রধানমন্ত্রীর নাম করে সমালোচনা করা হয় সব দলকে সঙ্গে না নেওয়ার কারণে। একই সঙ্গে সেনার বাহাদুরির তারিফ করে আজ ‘নিখোঁজ’ পাইলটের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় পাকিস্তানকেও।
আরও পড়ুন: উপত্যকায় ভেঙে পড়ল বায়ুসেনার কপ্টার, মৃত ৭
রাহুল নিজেই এই বিবৃতি পড়ে শোনান। পরে টুইট করেও বলেন, ‘‘বায়ুসেনার বাহাদুর পাইলট নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনে দুঃখ পেলাম। আশা করি, দ্রুত তিনি অক্ষত ফিরবেন। কঠিন সময়ে আমরা সেনার পাশে।’’
বৈঠকে কংগ্রেসের সনিয়া, রাহুল, মনমোহন সিংহ, মমতা, চন্দ্রবাবু নায়ডু, সতীশ মিশ্ররা উপস্থিত ছিলেন। সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব না থাকলেও পরে পাইলট নিখোঁজের সময় মোদীর অ্যাপ উদ্বোধন নিয়ে কটাক্ষ করেন। বিরোধীদের এই খোঁচায় বিজেপি অবশ্য চুপ থাকেনি। অরুণ জেটলি পাল্টা আক্রমণে বলেছেন, সারা দেশ যখন এক সুরে কথা বলছে, বিরোধীরা তখন রাজনীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন কেন? বিরোধীদের আত্মসমীক্ষণের পরামর্শ দেন তিনি। উত্তরে কংগ্রেসের রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘আত্মসমীক্ষণটা বিজেপিরই দরকার। বিরোধীরা সেনা এবং সরকারের পাশেই আছেন। অমিত শাহ-সহ বিজেপি শিবিরই সেনাদের আত্মবলিদানের কৃতিত্ব নিতে ব্যস্ত রাজনীতি ওঁরাই করছেন!’’
বিরোধীরা অবশ্য এও বুঝছেন, মোদী ভোটের এজেন্ডা কেড়ে নেওয়ায় এখন নতুন কৌশল খুঁজতে হবে। সে কারণে স্থির হয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আবার সবাই মিলে বৈঠকে বসা হবে। এখনকার এই হিড়িক কমলে ঠিক করতে হবে, পুরনো বিষয়গুলি কী করে ফিরিয়ে আনা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy