Advertisement
E-Paper

বাণিজ্যে বসতে ইরান, আশায় দুলছে ভারত

বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তিকে প্রাথমিক ভাবে নয়াদিল্লির জন্য সুখবর বলেই মনে করছে কেন্দ্র। বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ লাভ পেতে চলেছে ভারত। এর ফলে এক দিকে ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করা এবং তার দাম মেটানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩২

বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তিকে প্রাথমিক ভাবে নয়াদিল্লির জন্য সুখবর বলেই মনে করছে কেন্দ্র।

বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ লাভ পেতে চলেছে ভারত। এর ফলে এক দিকে ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করা এবং তার দাম মেটানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। তেমনই কিছু নির্দিষ্ট পণ্য (যেগুলি চড়া দামে ভারত থেকে আমদানি করত নিষেধাজ্ঞা-পূর্ববর্তী ইরান) তেহরানে রফতানির দরজাটাও খুলে যাবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ার সময় তার সুবিধা পাবে ভারতও। ফলে ভারতের বাণিজ্যলক্ষ্মী অনেকটাই সুপ্রসন্ন হবেন বলে দাবি সরকারি কর্তাদের।

সরকারি সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই তেহরানের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবে নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা ওএনজিসি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি গ্যাসের সম্ভার (ফারজাদ-বি গ্যাস ফিল্ড) আবিষ্কার করলেও এত দিন তার সুফল নিতে পারেনি। এ বার সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য যাতে ওএনজিসিকে অধিকার দেওয়া হয়, তার জন্য তেহরানকে অনুরোধ করবে নয়াদিল্লি। এত দিন নিষোধাজ্ঞা থাকায় ইউরোপীয় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে গ্যাসের দাম মেটাতে পারছিল না নয়াদিল্লি। এ বার সেই সমস্যা আর থাকছে না। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, তেলের দাম বাবদ যে অর্থ বকেয়া রয়েছে (সাড়ে ছ’শো কোটি ডলার), এ বার তা সহজেই মিটিয়ে দিতে পারবে ভারত।

ইউরোপ এবং আমেরিকার রক্তচক্ষুর ফলে এত দিন পর্যন্ত ভারতীয় তেল সংস্থাগুলি ইরানে বিনিয়োগের ব্যাপারে যথেষ্ট দ্বিধান্বিত ছিল। সেই কারণেই বিদেশের মাটিতে সর্ববৃহৎ গ্যাস ব্লক (ফারজাদ) আবিষ্কার করা সত্ত্বেও নিজেদের দাবি জানাতে পারেনি নয়াদিল্লি। নয়াদিল্লির আশা, এ বার আশা ইরান ‘দুঃসময়ের বন্ধুর’ দাবিতে সাড়া দেবে। এ বার ইরান থেকে সহজে তেল কিনতে পারবে ভারত। নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারত গত কয়েক বছরে ইরান থেকে তেল আমদানি কমিয়ে মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা-সহ নানা দেশ থেকে আমদানি বাড়ানোয় জোর দিয়েছিল। ইরান থেকে আমদানি নেমে এসেছিল মোট আমদানির মাত্র ১২ শতাংশে!

এই চুক্তির ফলে ভারতের বাজারে ঠিক কী ঘটতে চলেছে? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারত তার প্রয়োজনীয় জ্বালানির ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করে। ফলে তেলের দাম কমে যাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থাগুলির (ইন্ডিয়ান অয়েল, এইচপিসিএল, বিপিসিএল) সুবিধা হবে। নিষেধাজ্ঞা ওঠায় ভারতের ওষুধ শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি এবং অন্যান্য কিছু পণ্য সংস্থা লাভবান হবে। তারা ইরান থেকে বরাত পাওয়ার দৌড়ে নামতে পারবে। বাসমতী চাল, সয়াবিন, চিনি, বার্লি এবং মাংস ভারত থেকে ব্যাপক হারে রফতানি হতো ইরানে। বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হচ্ছে, ভারত থেকে এই পণ্যগুলি আন্তর্জাতিক দামের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি দিয়ে ইরান কিনত। সেই বাজার আবার ফিরে পাওয়া যাবে।

গত এক দশক ধরে আমেরিকা তথা পশ্চিমি বিশ্বের ঝড়ঝঞ্ঝার সামনে যখনই পড়েছে ইরান, ভারত যত দূর সম্ভব কূটনৈতিক ভাবে তেহরানের পাশে দাঁড়িয়েছে। গত দশ বছরে মনমোহন-সরকারের বিদেশনীতির অনেকটাই ব্যয় হয়েছে ইরান এবং পশ্চিমি বিশ্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে। একাধিক বার তেহরান সফর করে পশ্চিমি দেশগুলিকে বার্তা দিয়েছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। ইরানে গিয়েছেন অন্যান্য বিদেশমন্ত্রী এবং সরকারি কর্তারাও। প্রাক্তন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন নয়াদিল্লি এসে ইরানকে ব্রাত্য করার অনুরোধ জানালেও পুরোপুরি সেই অনুরোধ মানেনি ভারত। বরং ভারত-ইরান যৌথ কমিশনে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খোলাখুলি বিরোধিতা করে সাউথ ব্লকের তরফে বারবার বলা হয়েছে, ‘কোনও দেশের উপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে সে দেশের নিরাপরাধ সাধারণ মানুষকে প্রবল সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। আমরা কখনওই তা সমর্থন করি না।’’

কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে ইরানের পরমাণু অস্ত্র প্রকল্প নিয়ে ভারত তার আপত্তির কথাও কিন্তু একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছে। এমনকী আইএইএ-তে ভোটাভুটির সময় ইরানের বিরুদ্ধে ভোটও দিয়েছে। তবে নয়াদিল্লির কাছে শুধু তেল নয়, ভূকৌশলগত কারণেও তেহরান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশিয়া তথা আফগানিস্তানে পা রাখার জন্য ইরানের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইরান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য ছাবাহার বন্দর উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ। এ বার সেই বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি সহজ হল বলে মনে করছে দিল্লি।

agni roy india profit india iran iran nuclear deal historical nuclear deal india iran oil india iran oil import
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy