Advertisement
E-Paper

বিদেশের মাটিতে অভিযানের ভাবনা

খাপলাং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যে ভাবে বিদেশের মাটিতে ঢুকে হামলা চালানো হয়েছিল, ঠিক সে ভাবেই এনডিএফবি সংগ্রামপন্থীদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে তাদের একেবারে ‘নিকেশ’ করে ফেলা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিল কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৭

খাপলাং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যে ভাবে বিদেশের মাটিতে ঢুকে হামলা চালানো হয়েছিল, ঠিক সে ভাবেই এনডিএফবি সংগ্রামপন্থীদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে তাদের একেবারে ‘নিকেশ’ করে ফেলা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিল কেন্দ্র। অসমের কোকরাঝাড়ে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা যদি পড়শি দেশে গিয়ে লুকিয়ে থাকে তা হলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দু’দেশ যৌথ হামলা চালাতে পারে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা শুরু করেছে নয়াদিল্লি। এ দিনই হামলাস্থল ঘুরে দেখে বিস্ফোরকের নমুনা সংগ্রহ করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) চার সদস্যের দল।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ বা ভুটানে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জঙ্গিদের। কিন্তু গুলশন কাণ্ডের পরে বাংলাদেশ সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হওয়ায় জঙ্গিদের পক্ষে সে দেশে লুকিয়ে থাকা সমস্যার। এক স্বরাষ্ট্রকর্তার কথায়, ‘‘আমাদের সন্দেহ জঙ্গিরা ভুটানের দিকে পালিয়েছে।’’ সে ক্ষেত্রে ভুটান সরকারের সহায়তায় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর বিষয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তবে বিষয়টির সঙ্গে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িয়ে থাকায় আটঘাট বেঁধেই নামতে চাইছে কেন্দ্র। তা ছাড়া এখন বর্ষার মরসুম। অসমের একটি বড় অংশ বন্যার কবলে। তাই এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় হামলা চালালে হিতে বিপরীত হওয়ায় সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই জঙ্গিদের পিছু ধাওয়া করেছে সেনা জওয়ানেরা।

সন্দেহের তির তাদের দিকে হলেও হামলার দায় অস্বীকার করেছে এনডিএফবি। কিন্তু নিহত জঙ্গি মনজয় ইসলারি ওরফে মাউদাং এনডিএফবি-র ১৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডার ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বছর দুয়েক চুপ থাকার পরে হঠাৎ এনডিএফবি মাথাচাড়া দিয়ে উঠল কেন? সেই প্রশ্নেরই এখন জবাব খুঁজছেন গোয়েন্দারা। গত দু’বছরে সরাসরি সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৩৫ এনডিএফবি জঙ্গি। গ্রেফতার হয়েছে ৬০। এক সময় সংগঠনের মাথা সংবিজিৎ এখন নিজের দলেই ব্রাত্য। দলের রাশ ধরেছে জি বিদাই। এক স্বরাষ্ট্রকর্তা বলেন, ‘‘বছরের শুরুর দিকে বিদাই আত্মসমর্পণের ইচ্ছা জানিয়ে বার্তা দিয়েছিল। কেন্দ্র সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। তার পর কিছু দিন শীতঘুমে ছিল এই সংগঠন। কিন্তু গত কালের ঘটনা বলছে আবার মাথাচাড়া দিয়েছে বড়ো জঙ্গিরা।’’

কেন? তদন্তে উঠে আসছে একাধিক তথ্য। আইজি (বিটিএডি) এল আর বিষ্ণোইয়ের মতে, এনডিএফবি-র এখন অস্তিত্ব সঙ্কট। লোকবল কমছে। অর্থের অভাব। নেতারা হয় মারা গিয়েছে অথবা ধরা পড়েছে। অর্থের অভাবে নতুন নিয়োগ প্রায় বন্ধ। তাই সংগঠনটি এখন পুরোপুরি খাপলাং বাহিনী ও আলফা স্বাধীনের উপর নির্ভরশীল। তাদের প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে এনডিএফবি।

উঠে আসছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হাত থাকার বিষয়টিও। জম্মু-কাশ্মীরের ধাঁচে উত্তর-পূর্বে অশান্তি ছড়াতে সক্রিয় আইএসআই। অসম ও ত্রিপুরার অবসরপ্রাপ্ত ডিজিপি ঘনশ্যাম মুরারি শ্রীবাস্তবের দাবি, আইএসআইয়ের নির্দেশেই এনডিএফবি এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আইএসআই, এনডিএফবি ও এনএলএফটি-র একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানেই অসমে হামলার নকশা তৈরি হয়। স্বাধীনতা দিবসের আগে ওই হামলা না চালালে বড়ো জঙ্গিদের সাহায্য বন্ধ করার হুমকি দেয় আইএসআই। তার পরেই ওই হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। ফের হামলার আশঙ্কায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে।

প্রশ্ন উঠেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব (উত্তর-পূর্ব) সত্যেন্দ্র গর্গের ভূমিকা নিয়েও। গর্গের গা-ছাড়া মনোভাবের কারণেই এই হামলা হয়েছে বলে মনে করছে সরকারের একাংশ। যদিও এই অভিযোগ প্রকাশ্যে মানতে রাজি নয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য। ওই জঙ্গিরা কোথায় লুকিয়ে রয়েছে তা খুঁজে বার করা এবং তাদের ‘নিকেশ’ করা। প্রয়োজনে সরকার অনুমতি দিলে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়েও হামলা চালাতে প্রস্তুত রয়েছে নিরাপত্তাবহিনী।

India NDFB Attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy