এই ড্রোনই কিনবে ভারত।
আমেরিকা সক্রিয় হল একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের ভারতের অন্তর্ভুক্তির জন্য। প্রেসিডেন্ট ওবামার সেই চেষ্টা সফলও হল। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করল ভারতে নাশকতা চালানোর চেষ্টায় থাকা একাধিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।
প্রিডেটর ড্রোন ফারাক গড়ে দিতে চলেছে।
ভারতে নাশকতা চালায় যে সব জঙ্গি সংগঠন, তাদের মধ্যে অনেকগুলিরই গোপন ঘাঁটি রয়েছে ভারতের মাটিতেই। কোনও কোনও জঙ্গি সংগঠন আবার ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশের মাটিতে ঘাঁটি তৈরি করেছে। ভারতে নাশকতা চালিয়ে আবার সেই ঘাঁটিতে ফিরে যায় তারা। এমন এলাকায় এই সব জঙ্গি ঘাঁটি বা জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তোলা হয়, যে সেগুলি সহজে নিরাপত্তা বাহিনী বা প্রশাসনের নজরে আসে না। অনেক সময় জঙ্গিরা এমন দুর্গম এলাকায় ঘাঁটি বানায় যে নিরাপত্তা বাহিনী সে সম্পর্কে খবর পেয়েও সেই এলাকায় পৌঁছতে পারে না।
১৯৯৯ সালে কার্গিলের দুর্গম এলাকার বিরাট অংশ যে গোপনে পাকিস্তানের হাতে চলে গিয়েছিল, সে কথা অনেকেরই মনে আছে। ঠিক মতো নজরদারির অভাবেই জঙ্গিরা ও পাক সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ঢুকে এসেছিল কার্গিলে। এলাকা দুর্গম হওয়ায় ভারতীয় সেনাকে কার্গিল পুনরুদ্ধারে বহু রক্ত ঝরাতে হয়েছিল।
উত্তর-পূর্ব ভারতেও জঙ্গি সংগঠনগুলি এমন বেশ কিছু এলাকায় নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করে রেখেছে, যে সব এলাকায় ঠিক মতো নজরদারি হয় না। খবর পেয়েও দুর্গমতার কারণে সেনা সেখানে পৌঁছতে পারে না। পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারের মধ্যে ঢুকে আরও দুর্গম পাহাড়-জঙ্গল খুঁজে নিয়ে সেই এলাকাতেও জঙ্গিরা আস্তানা বানিয়েছে। ভারত সেই জঙ্গি ঘাঁটিও খুঁজে বার করে আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু যখন তখন প্রয়োজন হলেই এই সব এলাকায় পৌঁছনো যায় না। অনেক পরিকল্পনা, অনেক প্রস্তুতি, অনেক অপেক্ষার পর এই সব এলাকায় অভিযান চালানো যায়।
জঙ্গিরা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আসছে বছরের পর বছর। ভারত মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম-এর (এমটিসিআর) সদস্য হওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে যাওয়ায় জঙ্গিদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হতে চলেছে। এমটিসিআর হল ৩৪টি দেশের একটি সংগঠন, যারা উচ্চমানের ক্ষেপণাস্ত্র, পরমাণু প্রযুক্তি এবং অত্যাধুনিক চালকবিহীন যুদ্ধবিমানের কেনাবেচা এবং হস্তান্তর নিয়ন্ত্রণ করে। পরমাণু শক্তিধর হওয়া সত্ত্বেও তিনটি দেশ এই সংগঠনের বাইরে ছিল এত দিন— ভারত, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়া। আমেরিকা সক্রিয় হয়েছিল ভারতকে ওই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করতে। ভারতের অন্তর্ভুক্তিতে যদি এমটিসিআর-এর কোনও সদস্য দেশের আপত্তি থাকে, তা হলে ৬ জুন, ২০১৬-র মধ্যে সেই আপত্তি জানাতে হবে। ওই তারিখের মধ্যে কোনও দেশই আপত্তি জানায়নি। তাই ভারতের এমটিসিআর-এ ঢোকা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
বেনজির অভিযানে দিল্লি, দঃ চিন সাগরে ঢুকল চার ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ
কিন্তু ভারত এমটিসিআর-এর সদস্য হওয়ায় জঙ্গিদের কী সমস্যা হবে?
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত এত দিন এমটিসিআর-এর সদস্য ছিল না বলে আমেরিকা ভারতকে প্রিডেটর ড্রোন বিক্রি করতে পারত না। এ বার ভারতকে প্রিডেটর বিক্রি করতে আর কোনও বাধা থাকবে না। এই প্রিডেটর ড্রোন হল পাকিস্তানে তালিবান ও আল কায়েদার বিরুদ্ধে আমেরিকার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। চালকবিহীন এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান অপ্রতিরোধ্য ঘাতকের মতো হানা দেয়। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের বিভিন্ন দুর্গম পার্বত্য এলাকায় জঙ্গিরা কোথায় ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে, চালকবিহীন প্রিডেটর নির্ভুলভাবে আকাশ থেকেই তা চিনে নেয়। তার পর মারণ আঘাত হানে ওই সব ঘাঁটিতে। প্রিডেটরের হামলায় তালিবান এবং আল কায়েদার বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। গত মাসেই এই প্রিডেটরের হামলায় আফগান তালিবানদের প্রধান খতম হয়ে গিয়েছেন। ভারত এ বার আমেরিকার কাছ থেকে প্রিডেটর ড্রোন কিনতে চলেছে। জম্মু-কাশ্মীরের দুর্গম এলাকায় নজরদারি, উত্তর-পূর্ব ভারতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান, এমনকী প্রয়োজন হলে প্রতিবেশী দেশের আকাশসীমায় ঢুকে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা— এই সব কিছুই করতে পারবে প্রিডেটর। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যে সব জঙ্গি শিবির রয়েছে, বিপদের আঁচ পেতে শুরু করেছে সেগুলিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy