রাজ্য পারেনি। রেল পারছে।
রাজ্য তার সংক্ষিপ্ত বৃত্তে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে এখনও কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থা চালু করে উঠতে পারেনি। রেল অনেক বৃহৎ অর্থাৎ সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তাদের পুরো নিয়োগ পরীক্ষাই কেন্দ্রীয় অনলাইনে নেওয়ার বন্দোবস্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অনলাইনে পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরেই শুরু হবে বলে জানাচ্ছে রেল মহল।
অনলাইনে নিয়োগ পরীক্ষা কেন?
রেল সূত্রের খবর, অনেক চেষ্টাতেও ভুয়ো নিয়োগ সংস্থার বাড়বাড়ন্ত বন্ধ করতে না-পেরে এ বার চাকরির পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে: কলেজে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও তো টাকার লেনদেন-সহ হরেক দুর্নীতি চলছে। ভর্তিতে কেন্দ্রীয় অনলাইন চালু করলেই সব সমস্যার সুরাহা হতে পারে জেনেও তার ব্যবস্থা করতে রাজ্য সরকারের অনীহা কেন?
রাজ্য প্রশাসনের কাছে আপাতত এর কোনও সদুত্তর মিলছে না। তবে নিয়োগ পরীক্ষায় কেন অনলাইন, তা জানাতে দ্বিধা করছে না রেল মহল। আসলে দেশ জুড়ে ভুয়ো নিয়োগ সংস্থার দৌরাত্ম্যে উদ্বিগ্ন রেল। জাল প্যাড, জাল রবার স্ট্যাম্প তৈরি করে এখানে-সেখানে রীতিমতো অফিস খুলে বসেছে বেশ কিছু মানুষ। তাদের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অঢেল টাকা ঢেলে নিয়োগপত্রও পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। পরে দেখা যাচ্ছে, সেই সব নিয়োগপত্র জাল। শুক্রবারেই বাগুইআটি থেকে টাকার টোপে রেলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার একটি আন্তঃরাজ্য প্রতারণা চক্রের হদিস পেয়ে কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর পুলিশ।
আরও পড়ুন:
চিনকে আরও কড়া বার্তা, ডোকলামে তাঁবু ফেলতে শুরু করল ভারতীয় সেনা
শুধু জাল নিয়োগ সংস্থার প্রতারণা চক্র নয়। রেলের নিয়োগ পরীক্ষায় জাল পরীক্ষার্থী নিয়ে প্রতি বারেই অজস্র অভিযোগ ওঠে। কখনও-সখনও ধরাও পড়ে যায় অভিযুক্তেরা। অনেক ক্ষেত্রে আবার উত্তরপত্র বাইরে এনে পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষার ফল নিয়েও উঠছিল নানা ধরনের অভিযোগ। এই ধরনের যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে কেন্দ্রীয় অনলাইন পরীক্ষা কার্যকর হবে বলে মনে করছেন রেলকর্তারা।
রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড (আরআরবি) যে-সব নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা করবে, সেখানেও চালু হচ্ছে অনলাইন ব্যবস্থা। তবে প্রশ্ন উঠছে, অনলাইন ব্যবস্থা তো এখনও দেশের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছয়নি। সে-ক্ষেত্রে রেল কি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা রাখবে? এক রেলকর্তার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্প ইতিমধ্যেই দেশের সর্বত্র কার্যকর হয়ে গিয়েছে। তাই রেলের অনলাইন পরীক্ষায় সমস্যা হবে না।
রেলে চতুর্থ শ্রেণির পদের নিয়োগ পরীক্ষাকে আপাতত অনলাইন পদ্ধতির বাইরে রাখা হচ্ছে। তবে স্বচ্ছতা আনতে গ্রুপ সি থেকে শুরু করে উপরের দিকে বাকি সব পরীক্ষাই দিতে হবে অনলাইনে।
শুধু পরীক্ষা পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনা বা দুর্নীতি রোধ করাই নয়। খরচ কমানো এবং পরিবেশ বাঁচানোর উদ্দেশ্যেও অনলাইনে নিয়োগ পরীক্ষা নিচ্ছে রেল। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান, পুরো প্রক্রিয়া অনলাইন হলে সাশ্রয় হবে ৩১৯ কোটি উত্তরপত্রের অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ কাগজের আর কোনও দরকারই হবে না। বাঁচবে চার লক্ষ গাছ। বাঁচবে পরিবেশ।
এ বছর রেলের নিয়োগ পরীক্ষায় (গ্রুপ সি থেকে উপরের দিকে বিভিন্ন শ্রেণির) ১৪ হাজার শূন্য পদের জন্য ৯২ লক্ষ প্রার্থী প্রারম্ভিক পরীক্ষায় বসেছিলেন। পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল ৩৫১টি কেন্দ্রে। তাঁদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন দু’লক্ষ ৭৩ হাজার জন। রেলকর্তারা জানান, উত্তীর্ণদের বাকি তিন দফা পরীক্ষা আর কাগজে লিখে দিতে হবে না। তা হবে অনলাইনে।
অনলাইন ব্যবস্থায় প্রশ্ন তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে রেলের রিসার্চ ডিজাইনিং অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন (আরডিএসও)। এর জন্য তৈরি হয়েছে একটি বিশেষ সার্ভার। রেলকর্তারা জানান, ১৪ হাজার পরীক্ষার্থী নির্বাচিত হওয়ার পরে আগামী সেপ্টেম্বরেই তাঁদের নিয়োগ শুরু হয়ে যাবে। কারণ, এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে ফল ঘোষণাতেও সময় লাগবে খুব কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy