ছেলে ডাক্তার। বিদেশে থাকে। মাছ খেতে বড্ড ভালবাসে। কলকাতা থেকে যখনই ছেলের কাছে যান, মা শ্যামলী দত্তরায় পরিপাটি করে রেঁধে নিয়ে যান তোপসে, কই, মৌরলা।
শ্যামলীদেবীর কথায়, ‘‘আসলে ও দেশে মাছ তো সে ভাবে পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও এ রকম তরিবৎ করে রেঁধে খাবেই বা কী করে?’’
শুধু কি আর মাছ? বিদেশের মাটিতে বসে বাঙালি ছেলেমেয়েরা মায়ের হাতে তৈরি আলুপোস্ত, শুক্তো, ডাঁটা চচ্চড়ির জন্যও হা-হুতাশ করেন। কিন্তু সাধ থাকলেও উপায় থাকে না। তাই কলকাতা থেকে চেনা-জানা কেউ সে দেশে গেলেই বাবা-মা ডেকে বলেন, ‘‘যদি অসুবিধা না হয়, আমার মেয়েটার জন্য একটা প্যাকেট দেব, নিয়ে যাবে? ও-ই গিয়ে তোমার কাছ থেকে নিয়ে নেবে।’’
কী আছে প্যাকেটে, তা কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে ফেলেন? সলজ্জ উত্তর, ‘‘সে রকম কিছু না! আসলে মেয়ে তো খুব তেল-কই খেতে ভালোবাসে। তাই একটু রান্না করে...’’
সল্টলেকের অনুরাধা সেনগুপ্তর ছেলে ভিন্দেশে পিএইচডি-র ফাঁকে নিজেই টুকটাক রাঁধে। প্রত্যেক ছুটি থেকে ফেরার সময়ে তাই ব্যাগ বোঝাই হয় ঘি, আমসত্ত্ব, মায়ের তৈরি বড়ি, ভাজা মশলার কৌটোয়। ‘‘ও দেশের দোকানে কেনা বড়ি, মশলাপাতি ছেলের মুখে রোচেই না! বলে, সেই স্বাদ কই, সেই গন্ধই বা কোথায়?’’ সগর্বে বলেন মা।
বিদেশে পড়তে যাওয়ার সময়ে শুধু বাঙালি নয়, ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের বেশির ভাগেরই প্রবণতা থাকে বাড়িতে তৈরি খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার। কখনও মোতিচুর লাড্ডু তো কখনও ঝাল আচার! দেশি ঘি বা আমও আছে পছন্দের লিস্টে।
সেই তালিকায় দেশজ মশলাপাতি আর ইন্সট্যান্ট নুডল্সের প্যাকেটও জুড়ে দিয়েছে বিদেশি এক বিমানসংস্থা। আন্দাজে নয়, রীতিমতো সমীক্ষা করে। সংস্থা জানাচ্ছে ভারতের ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশ কিছু দিনের জন্য বিদেশে যান, তখন বাড়িতে তৈরি খাবার বগলদাবা করে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছটফট করেন। তবে প্রথম পছন্দ খাবার হলেও দ্বিতীয় পছন্দের অবশ্যই জুতো। শুধু ছাত্রীরা নন, অনেক ছাত্রের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, ‘নেব না, নেব না’ করেও চার জোড়া জুতো ভরে ফেলেছেন ব্যাগে। ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা তুলনামূলক ভাবে বেশি। ওই বিমানসংস্থা, রিচার্ড ব্র্যানসনের ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারলাইন্স জানাচ্ছে, অতিরিক্ত ওজনের মালপত্র নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলে আরও একটা জিনিসও সঙ্গে নিতে চান বহু ছাত্রছাত্রী। সেটা গিটার। কারও ক্ষেত্রে খেলার সরঞ্জামও।
ভিন্ দেশে পড়তে যাওয়া এই সব ছাত্রছাত্রীর আরও একটি প্রবণতার কথাও উল্লেখ করেছে ভার্জিন। তারা বলছে, এই ধরনের যাত্রীরা অনেক দিন আগেই বিমানের টিকিট কেটে রেখে দেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে, ৪০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীই শেষের দিকে যাত্রার দিন বদল করতে চান। তার জন্য বাড়তি গাঁটের কড়ি গুনতেও আপত্তি থাকে না।
দিল্লি থেকে লন্ডনে সরাসরি উড়ান চালায় ভার্জিন। ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের এই সব প্রবণতার কথা মাথায় রেখেই তাঁদের জন্য বিশেষ অফারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে সংস্থার তরফে। বলা হয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা এ বার সঙ্গে করে ৩টি ব্যাগ নিয়ে যেতে পারবেন। এক-একটির ওজন ২৩ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। যার অর্থ, মোট ৬৯ কিলোগ্রাম ওজনের মালপত্র সঙ্গে নেওয়া যাবে। সঙ্গে থাকছে ১০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি হাতব্যাগ এবং খেলার সামগ্রীর একটি ব্যাগও। পাশাপাশি কেউ যদি যাত্রার দিন পাল্টাতে চান, তা হলে এক বার সেই সুযোগও দেওয়া হবে নিখরচায়। সংস্থার ভারতীয় শাখার প্রধান নিক পার্কার জানান, দিল্লি থেকে শুধু ইউরোপ নয়, আমেরিকায় যেতেও এই সুবিধা পাবেন ছাত্রছাত্রীরা।
চাইছেন, আরও ক’টা দিন থেকে যাক ছেলে? সঙ্গে যাক আচার, লাড্ডু, ইলিশ পাতুরি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy