জগন্মোহন রেড্ডি।
রাভালি জগন, কাভালি জগন...।
তেলুগুতে যার অর্থ, জগনকে চাই, জগন আসবেই।
ভোটের মুখে অন্ধ্রপ্রদেশের অলিতে গলিতে বাজছিল এই গানটা। ভাইরাল হয়েছিল ইউটিউবেও।
আর আজ সকালে ইভিএম খুলতেই দেখা গেল, অন্ধ্রের মানুষের মনের কত গভীরে বসে গিয়েছিল কথাগুলি। দুপুরেই স্পষ্ট, এ বার রাজ্যপাট গুটিয়ে চলে যেতে হচ্ছে চন্দ্রবাবু নায়ডুকে। সময় যত এগিয়েছে, জগন-সুনামিতে ছারখার হয়ে গিয়েছে তেলুগু দেশমের দুর্গ। ১৭৫ আসনের বিধানসভায় জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস ১৫০! রাজ্যের ২৫টি লোকসভা আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে ২২টি। দিল্লিতে বিকল্প সরকার গড়তে গোটা দেশে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন চন্দ্রবাবু। আর দিনের শেষে তাঁরই পায়ের তলার মাটি কেড়ে নিয়েছেন জগন। আজই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন নায়ডু। আগামী ৩০ মে বিজয়ওয়াড়াতে শপথ নিতে চলেছেন জগন, বিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। আর নতুন ইনিংস শুরু করার আগে, বিরাট এই সাফল্যকে ‘মানুষের জয়’ হিসেবেই তুলে ধরেছেন এই নেতা। বলেছেন, ‘‘মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের কথা ভেবেই বেঁচে থাকতে চাই।’’
বাবার নামে দল। ২০০৯ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন অন্ধ্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডি। সেই ঘটনার পরেই মৃত্যু হয়েছিল ১২২ জন ওয়াইএসআর সমর্থকের। এঁদের কারও আকস্মিক অসুস্থতায় মৃত্যু, অনেকে আত্মহত্যাও করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর ছ’মাসের মধ্যেই ওই সব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে পদযাত্রা শুরু করেছিলেন ছেলে। আপত্তি তোলে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। তার পরেই কংগ্রেসের হাত ছেড়ে নতুন দল গড়েন জগন। এ বারের ভোটে তাঁর বাবা, সেই প্রয়াত নেতার ছায়াতেই প্রচার চালিয়েছিলেন জগন্মোহন। রাজ্যে ৩৬৪৮ কিলোমিটার জুড়ে পদযাত্রায় শুনিয়েছিলেন রাজশেখর রেড্ডির সুশাসন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি। ভোটের প্রচার চলাকালীনই মনে হচ্ছিল, মানুষ যেন জগনের মধ্যে তাঁর বাবার ছায়াকেই খুঁজে পেয়েছে। যেখানেই গিয়েছেন, উপচে পড়েছে ভিড়। ‘জয় জগন, জয় জগন’ স্লোগানে কেঁপে গিয়েছে চন্দ্রবাবু সরকারের ভিত। ইভিএমে তারই প্রতিফলন। রাজ্যের সব প্রান্তে উড়ে গিয়েছে বিরোধীরা। তেলুগু দেশম পেয়েছে মাত্র ২৪টি আসন। লোকসভায় ৩ টি আসন পেয়েছে তারা। বিধানসভা ভোটে চন্দ্রবাবু তাঁর পুরনো কুপ্পাম কেন্দ্র থেকে জিতেছেন ঠিকই। তবে হেরে গিয়েছেন তাঁর ছেলে লোকেশ। তেলুগু ছবির সুপারস্টার পবন কল্যাণের দল জনসেনা পেয়েছে মাত্র ১টি আসন।
জিতলে কী করবেন, জাতীয় রাজনীতিতে কোন দিকে যাবেন, এক বারের জন্যও তার ইঙ্গিত দেননি অন্ধ্রের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী জগন। বরং ভাগ হয়ে যাওয়া অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি করে গিয়েছেন। জানিয়েছেন, অন্ধ্রকে নতুন করে গড়ে তোলার প্যাকেজ যে দেবে, তার সঙ্গেই থাকবেন। আর আজ অন্ধ্রপ্রদেশের পট পরিবর্তনের পরেই ‘অসাধারণ সাফল্যের জন্য’ জগনকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ভোট চলাকালীনই বিরোধী জোট গড়ে তোলার কারিগর চন্দ্রবাবু নায়ডুকে কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছেন যিনি, তাঁর সঙ্গে মোদী যে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইবেন, সন্দেহ নেই। দু’জনের মধ্যে নতুন সমীকরণ গড়ে ওঠা তাই হয়তো সময়ের অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy